Thank you for trying Sticky AMP!!

গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুম থেকে পুনের গ্যালারিতে

মাঠে যাওয়া-আসার ভোগান্তিই বড় হয়ে ওঠায় পুনে নিয়ে ভালো কিছু লেখাই হয়নি। তা ভোগান্তিটা আসলেই বেশি। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে আসতে কী করতে হলো, সেটাই শুধু শুনুন। ম্যাচ শুরু বেলা দুইটায় (স্থানীয় সময়)। সে জন্য হোটেল থেকে কখন বেরোতে হয়েছে, অনুমান করতে পারবেন?

অনুমানটা মিলবে না ধরে নিয়ে সঠিক উত্তরটা জানিয়ে দিই। সকাল নয়টা! এত আগে কেন? কারণ, মিডিয়া বাস ধরতে হবে। ট্যাক্সিতে এলে স্টেডিয়াম থেকে কত দূরে নামতে হবে, তার কোনো ঠিক নেই। মিডিয়া বাসে এলে যেখানে সরাসরি প্রেসবক্সে ঢোকার গেটে। কিন্তু সেই মিডিয়া বাস ছাড়বে ম্যাচ শুরুর চার ঘণ্টা আগে সকাল ১০টায়। যেখান থেকে ছাড়বে, সেখানে যেতে আমার হোটেল থেকে ট্রাফিকের অবস্থাভেদে ৩০–৪০ মিনিট। নয়টায় রওনা হওয়ার কারণটা নিশ্চয়ই এখন পরিষ্কার।

পুনে নিয়ে ভালো কিছু লিখতে হলে তেমন কোনো অভিজ্ঞতা তো হতে হবে। হোটেল-মাঠ করতে করতেই সময় শেষ, তা হবে কোত্থেকে! অগত্যা গুগলই ভরসা। ‘পুনে কেন বিখ্যাত’ লিখে সার্চ দিলাম। অনেক কিছুই এল। পুনে মহারাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক রাজধানী। বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণে আরেক নাম ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেও না একসময় এমন বলা হতো), পুনের খাবার খুব ভালো ইত্যাদি ইত্যাদি। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং লাগল অন্য আরেকটা তথ্য জেনে। ব্যাডমিন্টন খেলাটার উৎপত্তি নাকি এখানেই। অবশ্যই তা করেছে ব্রিটিশরা। ১৮৭৩ সালে পুনের খাড়কি সেনানিবাসে ব্রিটিশ সৈন্যরা খেলাটির নিয়মকানুন চূড়ান্ত করে সেটিকে দেশে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পরই ব্যাডমিন্টন নামে এর আকিকা হয়, এর আগে বলা হতো ‘পুনা গেম’।

Also Read: সেই বিশ্বকাপ, সেই ভারত, অন্য তামিম

পড়ে জানা এসব ভালো দিকের বাইরে নিজের অভিজ্ঞতায় কি পুনের কিছু ভালো লাগেনি? যে মাঠে আসতে-যেতে ভোগান্তি নিয়ে শুরু থেকেই অভিযোগ করে যাচ্ছি, ভালো লাগাটা সেই মাঠ নিয়েই। যাতে প্রথম দিন ঢুকেই একটু চমকে গেছি। নেট প্র্যাকটিস হচ্ছে মাঠের মাঝখানে! দেখে পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল। এখন বিশ্বের প্রায় সব ক্রিকেট স্টেডিয়ামেই নেট প্র্যাকটিসের জন্য পাশে আলাদা ব্যবস্থা। একসময় তা কল্পনাও করা যেত না। মাঠের দুই পাশে দুটি, কখনোবা দুই-দুই চারটি উইকেট থাকত। সেখানেই নেট। দুই দল মাঠের দুই পাশে একই সময়ে অনুশীলন করত। নেট বোলাররা এক দলের নেট থেকে অন্য নেটে যেতেন। দুই দলের ক্রিকেটারদেরও দেখাসাক্ষাৎ হতো। কখনো একটু-আধটু আড্ডাও। আলোকচিত্রীর পরের দিনের পত্রিকার জন্য ভালো কিছু ছবিও পেয়ে যেতেন। আমি যে সময়ের কথা বলছি, সংবাদমাধ্যম বলতে তখন তো শুধু পত্রিকাই ছিল।

সাংবাদিকদের জন্যও কী দারুণ দিনই না ছিল তখন! এখন তো কোথাও মাঠে ঢোকার উপায়ই নেই। আর তখন সাংবাদিকেরা নেটের পাশে বা পেছনে দল বেঁধে দাঁড়িয়ে প্র্যাকটিস দেখতেন। লেখার প্রয়োজনে ক্রিকেটারদের সঙ্গে টুকটাক কথাও সেরে নিতেন সেখানেই। শুধু টুকটাক কথাই বলছি কেন, প্র্যাকটিসের ফাঁকে বা প্র্যাকটিস শেষে মাঠে দাঁড়িয়েই তো কত ক্রিকেটারের ইন্টারভিউ করেছি।

সাংবাদিকদের এখন দলগুলোর অনুশীলন দেখতে হয় দূর থেকে

বিশ্বকাপ কড়চায় বিশ্বকাপের স্মৃতি বলাই ভালো। তা যদি বলি, সাংবাদিকতায় তরুণ প্রজন্মের কাছে অনেক কিছুই অবিশ্বাস্য মনে হবে। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে লাহোরে জাভেদ মিয়াঁদাদ ইন্টারভিউ দিতে আমাকে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমে নিয়ে গেছেন।

এখন যেটা বলব, তা আমার নিজের কাছেই এখন অনেকটা অবিশ্বাস্য লাগে। এটাও ১৯৯৬ বিশ্বকাপের ঘটনা। লাহোর বা করাচির কোথাও হবে। পাকিস্তানের নেটে যাবেন বলে ড্রেসিংরুম থেকে প্যাড-ট্যাড পরে নেমেছেন আমির সোহেল। নেটের দিকে হেঁটে যেতে যেতে আমাকে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন।

Also Read: লিসা স্টালেকার ও এক প্রথম বিমানযাত্রীর গল্প

এটা যেমন এখন কল্পনাও করা যায় না, তেমনি কল্পনাতীত সেই বিশ্বকাপ ফাইনালের আগের দিন লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়াম। এক পাশে অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিং করছে, অন্য পাশে শ্রীলঙ্কা। পালাক্রমে দুই দলের নেটের কাছে গিয়ে দাঁড়াচ্ছি। অরবিন্দ ডি সিলভা নেটের পাশে হাতলওয়ালা একটা বেঞ্চে বসে আছেন। ফাইনাল নিয়ে এটা-ওটা জিজ্ঞেস করছি, অরবিন্দ ডি সিলভা ইশারায় পাশে বসতে বললেন। আমার লেখা ষোল তারকার মুখোমুখি বইয়ে স্থান পাওয়ার জন্য কপট অভিনন্দন জানিয়ে শেন ওয়ার্ন-মার্ক ওয়াহকে বইটা উপহারও দিয়েছিলাম সেদিনই। এসব কি এখন বিশ্বাস করবে কেউ!

সেদিনই দুপুরে অর্জুনা রানাতুঙ্গার হোটেল রুমে অনেকক্ষণ সময় কাটানোও যেমন নিজেরই বিশ্বাস হতে চায় না। বিশ্বকাপ ফাইনালের আগের দিন ফাইনালিস্ট এক দলের অধিনায়কের রুমের ত্রিসীমানাতেই তো যাওয়া যাবে না এখন।

পুনেতে মাঠে নেট প্র্যাকটিস দেখে এমন স্মৃতিকাতর। অথচ তা কোথায় দাঁড়িয়ে দেখলাম, জানেন? গ্যালারিতে তো অবশ্যই। সেটিরও নিচের তিন সিঁড়িতে পা পড়লেই হা-রে-রে-রে করে দৌড়ে আসছেন আইসিসির লোকজন।

সেই সময় আর এই সময়!

Also Read: লিটনের কাণ্ড শুনে একটু ভয়েই আছি