Thank you for trying Sticky AMP!!

আবারও অধিনায়ক বাবর

নাটকপ্রিয় পাকিস্তান ক্রিকেটে ‘নায়ক’ চরিত্রে আবার বাবর

নতুন যুগ আসলে কত দিনে? না, এমনিতে যুগের সংজ্ঞায় কোনো পরিবর্তন হয়নি। ১২ বছরেই এক যুগ। তবে পাকিস্তান ক্রিকেটে এলে নতুন যুগের সংজ্ঞা বোধ হয় বদলে যায়। কারও হাতে কোনো দায়িত্ব দিয়ে নতুন যুগের সূচনা করতে চাইলে তাকে যে ঠিক ১২ বছরই দায়িত্বে রাখতে হবে, এমন তো নয়। তবে তাকে অন্তত কয়েক বছর সুযোগ তো দিতে হবে।

পাকিস্তান সেই সুযোগ দেওয়ার পক্ষে নয়। তাদের কাছে নতুন যুগ বলতে পরবর্তী পিসিবি সভাপতি আসার আগপর্যন্তের সময়টাই। সে কারণেই তো নতুন পিসিবিপ্রধান আসার পর মাত্র এক সিরিজ দায়িত্ব পালনের পরই শাহিন শাহ আফ্রিদিকে সরিয়ে দেওয়া হলো। দায়িত্বে ফেরানো হলো সেই বাবর আজমকে। যাঁকে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর আগের পিসিবিপ্রধান পারলে দল থেকেই বাদ দিয়ে দিতেন!

বাবরকে এবার অবশ্য টেস্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। বিশ্বকাপের পর তিন সংস্করণের দায়িত্ব ছাড়া বাবরকে ফেরানো হয়েছে শুধু ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে। বাস্তবিক অর্থে আপাতত টি-টোয়েন্টিতে। কারণ, নভেম্বরের আগে পাকিস্তানের কোনো ওয়ানডে নেই। সে কারণে বাবর দায়িত্ব ছাড়ার পর কোনো ওয়ানডে অধিনায়কও ঘোষণা করা হয়নি।

আফ্রিদির অধীন পাকিস্তান যে একটি মাত্র সিরিজ খেলেছে, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই সিরিজে হেরেছে ৪-১ ব্যবধানে। এরপর পাকিস্তান সুপার লিগে ভালো করতে পারেনি আফ্রিদির দল লাহোর কালান্দার্স। ৮ ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জিতে টুর্নামেন্ট শেষ করেছে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে।

তবে এই বিবেচনাতে যদি আফ্রিদিকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে একই বিবেচনায় পাকিস্তানের অধিনায়ক হতে পারতেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। কারণ, চলতি মৌসুমসহ টানা চার আসরে রিজওয়ানের মুলতান সুলতান খেলেছে ফাইনাল। ভালো অধিনায়ক হিসেবে পাকিস্তান ক্রিকেটে তাঁর একটা সুনামও আছে। তবে এরপরও অধিনায়ক হিসেবে বাবরের নামটাই বেছে নেওয়া হয়েছে। যার দল কোয়ালিফায়ার থেকেই বাদ পড়েছে। অর্থাৎ নতুন পিসিবি সভাপতি পিসিবিপ্রধান মহসিন নাকভি বাবরের আগের আমলে বিশেষ কিছু দেখেছেন।

Also Read: বাবর আজমই আবার পাকিস্তানের অধিনায়ক

বাবর সাদা বলের নেতৃত্ব পেয়েছিলেন ২০১৯ সালে। পরিসংখ্যান বিবেচনায় বাবরের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ খুব একটা নেই। যে ৭১টি টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তার ৪২টিতে জিতেছে পাকিস্তান। ওয়ানডেতে ৪৩ ম্যাচের ২৬টিতে। তবে সংখ্যাই তো সব নয়। চার বছর ধরে অধিনায়কত্ব করলেও তাঁর নেতৃত্বে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে সাবেক ক্রিকেটারদের। তাঁদের অভিযোগ, ধরাবাঁধা নিয়মেই বাবর অধিনায়কত্ব করেন। যাতে উদ্ভাবনী ক্ষমতার কোনো প্রকাশ নেই।

বাবর আজম ফিরছেন নতুন উদ্যমে

বাবরের অধীনে ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টি মিলিয়ে পাকিস্তান বিশ্বকাপ খেলেছে তিনটি। সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচের ৫টিতে হেরে লিগ পর্ব থেকেই পাকিস্তান বিদায় নেয়। তাঁর অধীনে পাকিস্তান সেরা ক্রিকেট খেলে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।

প্রথম ম্যাচেই ভারতকে ১০ উইকেটে হারানোর পর দাপুটে পারফরম্যান্সে উঠে গিয়েছিল সেমিফাইনালে। সেই ম্যাচও জিততে জিততে শেষ দিকে ম্যাথু ওয়েডের অবিশ্বাস্য এক ইনিংসে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় তারা। ২০২২ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অবশ্য সেমিফাইনালের বাধা টপকে যায় বাবরের পাকিস্তান। যদিও তা আগের বারের মতো দাপটে নয়। নানা সমীকরণ, নানা যদি–কিন্তু পেরিয়ে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে হেরে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও দলকে ফাইনালে তোলার কিছু কৃতিত্ব তো অধিনায়ক বাবর পেতেই পারেন।

Also Read: বিসিবি কি তবে এবার ব্যবসা করতে নামছে

বাবরের কপাল পোড়ে ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ব্যর্থতায়। এর সঙ্গে যোগ হয় বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপেও ফাইনালে উঠতে ব্যর্থতা। ব্যাট হাতে বাবর ২০২৩ সালে নিজের বেঁধে দেওয়া উচ্চমান অনুযায়ী পারফর্মও করতে পারেননি। ওয়ানডেতে গত বছর ২৪ ইনিংসে ব্যাট করেছেন ৪৬.৩০ গড়ে ও ৮৪.৬৫ স্ট্রাইকরেটে, যা ২০১৯ সালের পর গড় ও স্ট্রাইকরেটে সর্বনিম্ন।

২০২০, ২০২১ ও ২০২২—এ তিন বছরের কোনোটিতেই বাবর ওয়ানডেতে ১০ ইনিংসের বেশি খেলেননি। সে ক্ষেত্রে ২০১৯ সালকে চলতি বছরের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। সে বছর বাবর ওয়ানডেতে ২০ ইনিংসে ৬০.৬৬ গড় এবং ৯২.৩০ স্ট্রাইকরেটে করেছিলেন ১০৯২ রান। ভারত বিশ্বকাপে ব্যাটিংয়ে নিষ্প্রভ হয়ে থাকাটাও বাবরের অধিনায়কত্ব হারানোর বড় কারণ ছিল। গৌতম গম্ভীরের মতো অনেকে যেখানে বিশ্বকাপের আগে বলছিলেন, বিশ্বকাপটা হবে বাবর আজমের, সেখানে বাবর ৯ ইনিংসে ৪০ গড়ে করতে পারেন মাত্র ৩২০ রান।

অধিনায়ক হিসেবে নতুন অধ্যায়ে কেমন করবেন বাবর

পাকিস্তান ক্রিকেটে বিশ্বকাপের মতো আসরে ব্যর্থ হলেই দলের খোলনলচে বদলে দেওয়ার একটা দাবি ওঠে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও জনতার মন রাখতে বেশির ভাগ সময়ই জনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেয়। বাবরের অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত তাই পাকিস্তানে সমর্থনই পেয়েছিল, বিশেষ করে পাকিস্তানের সাবেকদের। তবে একসময় ‘মেন্টর’ হিসেবে পাকিস্তান দলের সঙ্গে থাকা ম্যাথু হেইডেনসহ অনেকে এমন সিদ্ধান্তে বিস্ময়ও প্রকাশ করেছিলেন। এক সিরিজ পরই আফ্রিদিকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তেও হয়তো কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করবেন, কেউ সন্তুষ্টি প্রকাশ করবেন। সামনে হয়তো বিষ্ময়ের মাত্রাও কমে যাবে! কারণ, বিস্ময়েরও তো একটা সীমা আছে। পাকিস্তান ক্রিকেট যা কদাচিৎ নয়, নিয়মিতই উপহার দিয়ে যায়।

Also Read: পান্ডিয়া–রোহিতের এমন ঘটনা শুধু সিনেমায়ই ঘটে