Thank you for trying Sticky AMP!!

পাকিস্তান ক্রিকেটের তিন ভাই—উবায়েদ শাহ, নাসিম শাহ ও হুনাইন শাহ

পাকিস্তান ক্রিকেটের শাহ ভাইদের গল্প

পাকিস্তানের ম্যাচ চলছে। প্রথম ওভারে বল হাতে নিলেন নাসিম শাহ, পরের ওভারে এলেন উবায়েদ শাহ। কিছুক্ষণ পর এক প্রান্তে বদল আনার পর বল হাতে নিলেন হুনাইন শাহ।

ঠিক এমন দৃশ্যই এখন চোখে ভাসছে নাঈম শাহর। ২১ বছর বয়সী নাসিম শাহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পরিচিত মুখ। প্রায় পাঁচ বছর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা এই পেসার এরই মধ্যে পাকিস্তানের হয়ে তিন সংস্করণে ৫০টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। উবায়েদ শাহও এখন অনেকের কাছে পরিচিত। বিশেষ করে বাংলাদেশ আর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দর্শকেরা তাঁকে চিনে ফেলেছেন বেশ ভালোভাবেই। দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পথচলা যে কোয়ার্টার ফাইনালেই থেমে গেছে, তাতে ৪৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ‘হন্তারকে’র ভূমিকায় ছিলেন ম্যাচসেরা উবায়েদই। বয়সে উবায়েদ ও নাসিমের মাঝামাঝি হুনাইন শাহ, যিনি এ মুহূর্তে বাংলাদেশে বিপিএল খেলছেন।

একই সময়ে ক্রিকেট-আকাশে হাজির হওয়া তিন ‘শাহ’ সম্পর্কে আপন ভাই। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের লোয়ার দির জেলার জানদল মায়ারের শাহ পরিবারে জন্ম তাঁদের। ছয় ভাইয়ের মধ্যে নাসিম চতুর্থ, হুনাইন পঞ্চম আর উবায়েদ ষষ্ঠ। ক্রিকেটে একই পরিবারের একাধিক সদস্যের উপস্থিতি নতুন কিছু না হলেও শাহ ভাইদের বিশেষত্ব—তিনজনই ডানহাতি পেসার। বল করেন জোরের ওপর।

কীভাবে এমনটা হয়ে উঠল—সেটাই শোনাচ্ছিলেন ভাইদের মধ্যে তৃতীয় নাঈম, ‘আমরা পাঠান। আমরা বড়ই হই কাউকে ভয় না পেয়ে। জোরে বল করার এটাই একমাত্র কারণ। ব্যাটসম্যানের চোখে ভয় দেখতে আমাদের ভালো লাগে। ফাস্ট বোলিং করাটা সহজও। একটা বল হলেই চলে, দরকার শুধু নিজের সর্বশক্তি দিয়ে সেটা ছুড়ে মারা।’

Also Read: জাহাঙ্গীর আলম–নবীদের পথ ধরে তাঁদের ছেলেরাও যখন ক্রিকেটের সরণিতে

নাঈম নিজেও একসময় ক্রিকেট খেলতেন। তবে টেপ টেনিসের বেশি এগোতে পারেননি। মায়ের চাওয়া পূরণে হয়ে গেছেন চিকিৎসক। ক্রিকেট খেলতেন নাঈমদের বড় ভাই সালিম শাহও। কিন্তু নাসিমের আগে তাঁদের কেউ ক্রিকেটে থিতু হতে পারেননি বাবা মুজাফফর শাহর কড়াকড়ির কারণে। লাহোর থেকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শাহ পরিবারের এই গল্পই শুনিয়েছেন নাঈম, ‘আমাদের আব্বা ক্রিকেট পছন্দ করেন না। এ ব্যাপারে তাঁর কঠোর মানা। সালিম ভাই খুব ভালো উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ছিলেন। কিন্তু স্কুল শেষ করার পর আর খেলতে পারেননি। দ্বিতীয় ভাই জহির শাহ ক্রিকেট নিয়ে খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু বাকি সবাই ক্রিকেটের পাগল।’

এক ফ্রেমে শাহ পরিবারের ছয় ছেলে

ক্রিকেট-পাগল ভাইদের মধ্যে প্রথম ‘শিকল’ ভাঙেন নাসিম। আর সেটায় বড় অবদান বড় ভাই সালিম শাহেরই, ‘আমাদের ঢাল ছিলেন বড় ভাই। উনি আমাদের আগলে রাখতেন। আমার বাবা তো এখন অনেক সাক্ষাৎকারেই বলেন, নাসিমের ক্রিকেটার হওয়ার পেছনে তিনি এক পয়সাও খরচ করেননি। তাঁর চোখে ক্রিকেট হচ্ছে ইংরেজদের খেলা।’

Also Read: ‘প্রভাব খাটিয়ে’ দুই ভাইকে দলে নেওয়া প্রসঙ্গে যা বললেন নাসিম শাহ

নাঈম পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়ায় ক্লাব পর্যায়ের পর আর খেলেননি। তবে নাসিমের পাগলামি তাঁর নিজেকে তো এগিয়ে দিয়েছেই, পথ করে দিয়েছে পরের দুজনের জন্যও। নাসিমের জন্ম ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে জন্ম হুনাইনের। আর উবায়েদের জন্ম ২০০৬ সালে।

কাছাকাছি বয়সের হওয়ায় একে অপরকে অনুসরণ করে ওপরে উঠে আসাটা সহজ হয়েছে বলে মনে করেন নাঈম, ‘ওরা প্রায় একই বয়সের। বাবা প্রায়ই নাসিমকে মারধর করতেন হুনাইন আর উবায়েদকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ওরা বলত, ভাইয়া, আমি পাকিস্তানের হয়ে খেলব। নাসিম যখন পাকিস্তান দলে ডাক পেল, বাকি দুজনের পথও সহজ হয়ে গেল। নাসিমের পরিশ্রম আর কষ্ট তো ওদের নিজের চোখেই দেখা।’

বাবা মুজাফফর শাহর সঙ্গে নাসিম শাহ

২০১৮ সালে সালিম শাহ ব্যবসার উদ্দেশে লাহোরে স্থানান্তরিত হলে ভাগ্য বদলে যায় নাসিমদের। বড় ভাইয়ের সঙ্গে বাকিরাও থিতু হন লাহোরে। নাসিমকে প্রথমে ভর্তি করানো হয় লাহোরের পাক লায়ন্স ক্রিকেট একাডেমিতে, পরে আবদুল কাদির একাডেমিতে। যে পথ ধরে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ২০১৯ সালের নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় তাঁর।

Also Read: ‘নাসিম আমার কাঁধ নিয়ে নে’

পরে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতেও পা রাখা নাসিম গত সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপে চোট পাওয়ার পর থেকে মাঠের বাইরে আছেন। তবে চোটের সময়টা কাজে লাগিয়েছেন ছোট ভাই উবায়েদকে নিয়ে কাজ করে, ‘উবায়েদকে নিয়ে টানা কাজ করেছে নাসিম। ওর চোটটা উবায়েদের জন্য উপকারই হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার আগে ভাইকে একটা কথাই বলেছে, কোচরা যা বলে, সেটা করবি। দক্ষিণ আফ্রিকায় লাইন ঠিক রেখে বল করলে উইকেট থেকে সহায়তা পাওয়া যায়।’

ভাই নাঈম শাহর বিয়ে অনুষ্ঠানে হুনাইন শাহ

নাসিমের পরামর্শ আর কাজ করা যে উবায়েদের ভীষণ কাজে লেগেছে, সেটা যুব বিশ্বকাপের প্রথম পাঁচ ম্যাচে ১৭ উইকেট শিকারই বলে দিচ্ছে (টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ)। নাঈম অবশ্য হুনাইনকে নিয়েও ভীষণ আশাবাদী। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে বিপিএল খেলতে আসা এই পেসার তিন ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে পরিশ্রমী বলে জানালেন নাঈম, ‘নাসিম আর উবায়েদ সহজাত খেলোয়াড়। কিন্তু হুনাইন ওর বোলিং নিয়ে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করেছে। সে কখনোই প্রতিভাবান ছিল না, কিন্তু অন্যদের চেয়ে বেশি পরিশ্রমী। ও নিজের পেস নিয়ে কাজ করেছে, যা কাজেও লেগেছে।’

তিন ভাইকে এখন একসঙ্গে পাকিস্তানের জার্সিতে খেলার স্বপ্ন নাঈমের, ‘সামনেই পিএসএলে ওরা ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের হয়ে খেলবে। ইনশা আল্লাহ, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে একসঙ্গে পাকিস্তানের হয়েও খেলবে। বোলিং শুরু করবে নাসিম আর উবায়েদ, প্রথম বদলিতে আসবে হুনাইন।’

Also Read: ‘ইমরান বা ওয়াসিম না, আমি নাসিম হতে চাই’