জাহাঙ্গীর আলম–নবীদের পথ ধরে তাঁদের ছেলেরাও যখন ক্রিকেটের সরণিতে

দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে দলের সঙ্গে জিশান আলম (সবার সামনে)ফেসবুক

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ–গল্পে জাহাঙ্গীর আলম নামটা আক্ষেপের, দুর্ভাগ্যের। ১৯৯৭ সালে জাতীয় দলে অভিষিক্ত এই উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান জায়গা পেয়েছিলেন ১৯৯৯ বিশ্বকাপের দলে। কিন্তু দলের সঙ্গে ইংল্যান্ডে গেলেও বিশ্বকাপে খেলা হয়নি তাঁর। প্রথমে ঘোষিত দলে ডাক না পাওয়া মিনহাজুল আবেদীন নান্নুকে জায়গা করে দিতে গিয়ে বাদ পড়ে যান জাহাঙ্গীর।

৩ ওয়ানডেতে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়া সেই জাহাঙ্গীরের ছেলে খেলছেন বিশ্বকাপে। বড়দের নয়, অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপে। নাম তাঁর জিশান আলম। শুধু জাহাঙ্গীরের ছেলে জিসানই নন, দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপে ক্রিকেটার বাবার এমন ছেলে আছেন আরও পাঁচজন, যাঁদের বাবা জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছেন বা খেলছেন।

জাহাঙ্গীরের ছেলে জিশানের ২০২২ অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপেই খেলার সম্ভাবনা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে মূল স্কোয়াড থেকে বাদ পড়ে যান এই ডানহাতি ওপেনার। এবারের আসরে বাংলাদেশের প্রথম দুটি ম্যাচের একটিতে ছিলেন জিশান। ভারতের বিপক্ষে ২৫২ রান তাড়ার ইনিংসে ১৪ রানে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আর সুযোগ পাননি।

৩৯ বছর বয়সী অলরাউন্ডার মেহাম্মদ নবী ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশে রংপুর রাইডার্সের হয়ে বিপিএলে খেলছেন। একই সময়ে আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব–১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপে খেলছেন তাঁর ছেলে হাসান ইশাখিল।

আজ গ্রুপপর্বে বাংলাদেশের তৃতীয় ম্যাচ যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ব্লুমফন্টেইনের এই ম্যাচে যদি বাংলাদেশের হয়ে জিশান এবং যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে আরিন সুশীল নাদকারনি খেলতে নামেন, তাহলে অন্যরকম এক লড়াইই দেখা যাবে মাঠে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে শুরুতে বল হাতে নেওয়া পেসার আরিনও এক সাবেক ক্রিকেটারের ছেলে। টেক্সাসে জন্ম নেওয়া আরিনের বাবা ভারতের মহারাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা সুশীলকুমার সুহাস নাদকারনি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে ১০টি টি–টোয়েন্টি খেলেছিলেন।

মোহাম্মদ নবীর সঙ্গে তাঁর ছেলে হাসান ইশাখিল
ইনস্টাগ্রাম

আইসিসির সহযোগী সদস্যদেশ বলে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে খেলা সুশীলকুমারকে অনেকেরই না চেনার কথা। তবে মোহাম্মদ নবীর বেলায় তা নয়। সাবেক আফগানিস্তান অধিনায়ক এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চালিয়ে যাচ্ছেন। ৩৯ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশে রংপুর রাইডার্সের হয়ে বিপিএলে খেলছেন। একই সময়ে আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব–১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপে খেলছেন তাঁর ছেলে হাসান ইশাখিল। ২০০৬ সালে জন্ম নেওয়া ইসাখিল ওপেনিংয়ে ব্যাট করেন। যুব বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত দুই ম্যাচ খেলে অবশ্য বড় রান পাননি (১৯ ও ৪)।

এই শতাব্দীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা দুই ইংলিশ ক্রিকেটারের ছেলেও আছেন অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপে। একজন হেডন মাস্টার্ড, যাঁর বাবা ফিল মাস্টার্ড ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ১০টি ওয়ানডে ও ২টি টি–টোয়েন্টি। উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান ফিল মাস্টার্ড সব ম্যাচই খেলেছিলেন ২০০৭–০৮ মৌসুমে। ফিলের ছেলে হেডন ব্যাটিং–বোলিং দুইই করেন, মানে অলরাউন্ডার।

রুডি ফন ফুরেনের ছেলে জাসিও ফন ফুরেন
আইসিসি

ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব–১৯ দলে থাকা আরেক অলরাউন্ডার লুক বেঙ্কেনস্টেইনের বাবাও একসময় জাতীয় দলে খেলেছেন। লুকের বাবা ডেল বেঙ্কেনস্টেইন ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে সফল ব্যাটসম্যানদের একজন। আড়াই শর বেশি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ১৫ হাজারের বেশি রান করেও যিনি কখনো টেস্ট খেলতে পারেননি। তবে ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে ২৩টি ওয়ানডে খেলেছিলেন ডেল বেঙ্কেনস্টেইন।

ছেলেদের বাবার পদাঙ্ক অনুসরণের ধারায় জাসিও ফন ফুরেনের গল্পটা কিছুটা হলেও বিশেষ। গত ২২ জুন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নামিবিয়ার হয়ে অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপে অভিষেক হয়েছে ১৮ বছর বয়সী ফুরেনের। ম্যাচটা হয়েছে কিম্বার্লির ডায়মন্ড ওভালে, ঠিক ২১ বছর আগে ২০০৩ বিশ্বকাপে যে মাঠে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল তার বাবা রুডি ফন ফুরেনের। বিশ্বকাপে নামিবিয়ার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে পাঁচ উইকেট নেওয়া রুডি তাঁর দেশের হয়ে রাগবি বিশ্বকাপেও খেলেছেন। ছেলে হিসেবে জাসিওর সুযোগ ছিল রাগবি, ক্রিকেট দুই দিকেই যাওয়ার। শেষ পর্যন্ত বেছে নিয়েছেন ক্রিকেটকে।

বাবার অভিষেক–স্মৃতির মাঠে জাসিও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যাট হাতে করেছেন ২৯ রান, একই মাঠে পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বল হাতে নিয়েছেন ২৩ রানে ৪ উইকেট। ব্যাটে–বলে নিজেকে চিনিয়ে ক্রিকেটের আঙিনায় বাঁচিয়ে রাখছেন বাবাকে। যেমনটা জিশান, ইশাখিল, হেডন, লুক আর আরিনরাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।