Thank you for trying Sticky AMP!!

এবারের আইপিএলে খেলছেন না সাকিব

তবে কি সাকিবের আইপিএল ক্যারিয়ার শেষ

এবারের আইপিএলে খেলছেন না সাকিব আল হাসান, খবরটা পুরোনো। পুরোনো এই খবরের সঙ্গে উঠছে নতুন একটা প্রশ্ন। সাকিবকে কি আর কখনো আইপিএলে দেখা যাবে? সাকিবের বয়স, আইপিএলের আগে ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে অনাপত্তিপত্র নিয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি আর আইপিএলে সাকিবের পারফরম্যান্স—সবকিছু মিলিয়েই প্রশ্নটা উঠে এসেছে।

সাকিব প্রথমবার আইপিএলে সুযোগ পান ২০১১ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) হয়ে। এরপর আরও ৮ মৌসুম আইপিএল খেলা সাকিব যে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পাননি, এমনটা নয়। বরং নিজেকে অলরাউন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েও পুরোপুরি সফল হয়েছেন বলা যাবে না। সঙ্গে কয়েকটি আসরে পুরো মৌসুমের জন্য অনাপত্তিপত্র না পাওয়া, ২০২০ সালে নিষিদ্ধ থাকা সাকিবকে আইপিএলে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে।

Also Read: এবারের আইপিএলেই খেলবেন না সাকিব

আইপিএল ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সীমিত সুযোগ পেয়ে ভালোই খেলেছিলেন সাকিব। ২৪ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ২০১১ মৌসুমে খেলার সুযোগ পান মাত্র ৭ ম্যাচে। সেই মৌসুমে জ্যাক ক্যালিস, গৌতম গম্ভীর, মনোজ তিওয়ারিদের ভিড়ে সাকিব ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগই পাননি।

৭ ম্যাচে ব্যাটিং করেছিলেন মাত্র ৩ ইনিংসে, সব মিলিয়ে করেছিলেন ২৯ রান। তবে বল হাতে দলের প্রত্যাশা ঠিকই মিটিয়েছিলেন। ৬.৮৬ ইকোনমিতে নিয়েছিলেন ১১ উইকেট।

কলকাতার হয়ে দুবার আইপিএল জিতেছেন সাকিব

২০১২ সাল সাকিবের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা বছর। জাতীয় দলের হয়ে ঘরের মাঠে প্রথমবার এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠার পথে ৪ ম্যাচে ২৩৭ রান করার পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট, হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটার। এশিয়া কাপে এমন পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা সাকিব ধরে রেখেছিলেন আইপিএলেও। তবে এই মৌসুমেও সব ম্যাচ খেলতে পারেননি।

৮ ম্যাচ খেলে উইকেট নিয়েছিলেন ১২টি, ইকোনমি ছিল মাত্র ৬.৫০। ৭ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে তুলেছিলেন ৯১ রান। সংখ্যাটা ছোট হলেও ফাইনালে শেষ দিকে সাকিবের ৭ বলে অপরাজিত ১১ রানের ইনিংসেই প্রথম শিরোপা জেতে কলকাতা। ২০১৩ সালে সাকিব চোটের কারণে খেলতে পারেননি একটি ম্যাচও।

Also Read: সাকিব সর্বশেষ টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন কবে, মনে আছে?

আইপিএলে সাকিবের সেরা মৌসুমে কোনটি? এমন প্রশ্নের উত্তরটা খুব সহজ। ২০১৪ মৌসুমে আইপিএলেরই অন্যতম সেরা ক্রিকেটার ছিলেন সাকিব। ১৩ ম্যাচে ১১ ইনিংসে ব্যাট করে ৩২.৪৩ গড়ে তুলেছিলেন ২২৭ রান। সঙ্গে নিয়েছিলেন ১১ উইকেট। কলকাতার আরেক স্পিনার সুনীল নারাইনের সঙ্গে এই মৌসুমে জুটিটাও জমে উঠেছিল বেশি। সেই মৌসুমেও শিরোপা জিতেছিল কলকাতা, যা এখন পর্যন্ত সর্বশেষ।

আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদে দুই মৌসুম খেলেছেন সাকিব

২০১২ ও ২০১৪ নিজের খেলা টানা দুই মৌসুমে কলকাতাকে চ্যাম্পিয়ন করা সাকিব ঘরের মাঠে পাকিস্তান সিরিজের কারণে পরের মৌসুমে খেলতে পেরেছিলেন মাত্র ৪ ম্যাচ। আগের মৌসুমে ৩২ গড়ে রান করা সাকিবের এই মৌসুমে ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরার সুযোগ ছিল। তবে মাত্র ৪ ম্যাচের বেশি খেলতে না পারায় সাকিবকে দুর্ভাগা বলতেই হয়!

২০১৬ সালে ১০ ম্যাচ খেললেও পারফরম্যান্স ছিল নিম্নমুখী। ১০ ম্যাচে নিয়েছিলেন মাত্র ৫ উইকেট, করেছিলেন ১১৪ রান। ২০১৭ সালেও আয়ারল্যান্ড সফরের কারণে সাকিব খেলতে পেরেছিলেন মাত্র ১ ম্যাচ। পরপর তিন মৌসুমে দলের প্রত্যাশা না মেটাতে পারায় কলকাতা সাকিবকে ছেড়ে দেয়।

Also Read: কলকাতায় অলরাউন্ডার সাকিবের বদলি ব্যাটসম্যান রয়

২০১৮ ও ২০১৯ সালে সাকিবের ঠিকানা ছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। সেখানেই মূলত অলরাউন্ডার সাকিবকে তুলে ধরার সবচেয়ে বড় সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। সানরাইজার্সের হয়ে প্রথম মৌসুমে সাকিব নিয়মিত মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পান। ওই মৌসুমে খেলা ১৪ ম্যাচের মধ্যে ৯ ম্যাচেই ব্যাট করেন ৫ নম্বরে। তবে এই পজিশনে সাকিবের ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ১৭.২২, স্ট্রাইক রেটও ১১০-এর কম। সব মিলিয়ে ২১ গড়ে ২৩৯ রান—সানরাইজার্সের প্রত্যাশা খুব একটা পূরণ করতে পারেনি। যদিও বল হাতে নিয়েছিলেন ১৪ উইকেট।

এর পরের মৌসুমে একাদশে আর তেমন একটা সুযোগ পাননি সাকিব। খেলেছিলেন মাত্র ৩ ম্যাচ। তবে পুরো মৌসুমের বেশির ভাগ সময়ই বেঞ্চে কাটানো সাকিব বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে ৮ ম্যাচে করেন ৬০৬ রান। এরপর সাকিবকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয় আবারও। বিশ্বকাপে তাঁর এমন পারফরম্যান্স আইপিএল ক্যারিয়ারেও ‘লাইফলাইন’ হতে পারত। তবে জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করে নিষিদ্ধ থাকায় ২০২০ আইপিএলেই ছিলেন না বাংলাদেশের অলরাউন্ডার।

২০২১ সালে কলকাতায় আবারও ফেরেন তিনি। তবে প্রত্যাশামতো পারফরম্যান্স করতে পারেননি। আইপিএলে সব মিলিয়ে সাকিব ম্যাচ খেলেছেন ৭১টি। ৭১ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ১৯.৮৩ গড়ে ৭৯৩ রান করার পাশাপাশি ৬৩ উইকেট নিয়েছেন, সাকিব নামটার সঙ্গে যা বেমানানই বলতে হবে।

এবারের আইপিএলেও না খেলার অর্থ সাকিব টানা দুই মৌসুমেই আইপিএলে থাকছেন না। আইপিএলে সর্বশেষ এক মৌসুমে ১০ ম্যাচের বেশি খেলেছেন তা–ও ৫ বছর আগে। ৩৬ বছর বয়সী সাকিবের ক্যারিয়ারের এই সময়ে এসে আবারও নিজেকে প্রমাণ করে আইপিএলে ফেরা, সেখানে পারফর্ম করা কঠিনই বলতে হবে। আর প্রতি মৌসুমের আগে পুরো মৌসুমের জন্য অনাপত্তিপত্র নিয়ে জটিলতা তো আছেই।

আবার এবারের আইপিএলে যোগ হয়েছে ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটারের নিয়ম। এই নিয়মে বদলি হিসেবে নেমে ব্যাটিং-বোলিং দুটিই করতে পারবেন ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার। এটি মূলত ভারতীয়দের মধ্যে থেকে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিদেশি খেলোয়াড় নামানো যাবে, যদি শুরুর একাদশে চার বিদেশির জায়গায় তিনজনকে রাখা হয়ে থাকে। বেশির ভাগ দলই এই ঝুঁকিটা নেয় না। সেই ঝুঁকিটা নিলেও এই জায়গায় দ্রুতগতির কোনো পেসার, রহস্য স্পিনারের কদরটাই বেশি।

আর সাকিব যে স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করে থাকেন, সেই একই স্ট্রাইক রেটে ভারতীয় কোনো ব্যাটসম্যানও ব্যাটিং করতে পারেন। বাঁহাতি স্পিনেও যে খুব ভয়ংকর, তা–ও নয়। সে ক্ষেত্রে সামনের মৌসুমে ৩৭ বছর বয়সী সাকিবকে ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার হিসেবেও বিবেচনা করার সম্ভাবনা কমই বলা চলে। তাই জোরেশোরে যে প্রশ্নটা উঠছে, তার উত্তর নেতিবাচক হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

Also Read: যে প্রসঙ্গে অস্ট্রেলিয়া–ইংল্যান্ডের উদাহরণ দিলেন সাকিব