Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশ দলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কায় আছেন নির্বাচক আবদুর রাজ্জাক

‘না বুঝে সমালোচনা’র সমালোচনা করলেন রাজ্জাক

প্রেমাদাসার উইকেটও অতটা ঝামেলার নয়, প্রতিপক্ষের বোলাররাও অতটা সর্পিল নয়, কলম্বোর আবহাওয়াও অতটা প্রতিকূল নয়; যতটা ঝামেলা তৈরি করে সমালোচকদের সমালোচনা, যতটা সর্পিল দলের খারাপ পারফরম্যান্স নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাটাছেঁড়া, ক্রিকেটারদের জন্য যতটা প্রতিকূল দলের ভেতর থাকা ‘কমফোর্ট জোনে’র বাইরের আবহটা।

আজ ছিল বাংলাদেশের অনুশীলন বিরতির দ্বিতীয় দিন। মাঠে যেহেতু দলের কিছু নেই, দেশ থেকে এশিয়া কাপ কাভার করতে আসা সাংবাদিকেরা ভিড় করেছিলেন কলম্বোয় বাংলাদেশ দলের ঠিকানা গ্র্যান্ড সিনামন হোটেলে। নির্বাচক কমিটির সদস্য আবদুর রাজ্জাক সেখানেই বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স এবং খেলোয়াড়দের কারও কারও ধারাবাহিক ব্যর্থতা নিয়ে করা প্রশ্নগুলোতে পাল্টা আক্রমণে গেলেন, যার সারমর্ম বলতে পারেন ওপরের অনুচ্ছেদটিকে।

এশিয়া কাপের দল, যেটাকে রাজ্জাক বলেছেন ‘বেস্ট কম্বিনেশন’, নির্বাচক কমিটি নিশ্চয়ই একটা পরিকল্পনার কথা ভেবেই সেই দলটা করেছিলেন। রাজ্জাকও মেনে নিচ্ছেন, দল তাঁদের আশা মেটাতে পারেনি। তবে এটাকে আবার তিনি খুব নেতিবাচকভাবেও দেখতে নারাজ, ‘আমি আসলে এটাকে খুব নেতিবাচকভাবে নিতে চাই না। খেলার মধ্যে কিছু ভুল থাকবেই। অবশ্যই যারা খেলে ওরাও চেষ্টা করে যতটা কম ভুল করা যায়।’

যেকোনো টুর্নামেন্টে যেকোনো দলেরই ভালো কিছুর আশা থাকে। সুযোগ থাকলে সবাই চায় চ্যাম্পিয়ন হতে। কিন্তু হয়তো শেষ পর্যন্ত একটা দলই! জাতীয় দলের সাবেক এই বাঁহাতি স্পিনার সেটাই মনে করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘যখন কোনো একটা টুর্নামেন্টে আসে কোনো একটা দল, আশা থাকতেই পারে। সব দলেরই আশা থাকে, কিন্তু সবাই কি চ্যাম্পিয়ন হয়? তবে এটা বলতে পারি আমরা আরেকটু ভালো খেললে ভালো হতো।’

রাজ্জাকের মতে, এশিয়া কাপের জন্য সেরা কম্বিনেশন বেছে নিয়েছে নির্বাচক কমিটি

সমালোচনা নিয়ে রাজ্জাকের দৃষ্টিভঙ্গি, ক্রিকেটাররা খারাপ খেললে সেটা নিয়ে বাংলাদেশে একটু বেশিই নেতিবাচক আলোচনা হয়। তবে দল–সংশ্লিষ্ট হিসেবে তাঁদের চিন্তাভাবনা নাকি সে রকম নয়, ‘এক ম্যাচে খারাপ হলেই যেন বাংলাদেশ দল কোনো দিন কিছু করেনি! এ রকম কেন হয় জানি না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও রকম নয়। খারাপ হয়েছে ঠিক আছে, উন্নতি করার জন্য যে যে কাজগুলো করা দরকার, সেগুলো করার চেষ্টা করতে হবে।’

রাজ্জাকের কথা শুনে মনে হতে পারে, একমাত্র সমালোচনাই বাংলাদেশের ক্রিকেটের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা। দর্শক–সমর্থক–সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা জগদ্দল পাথর হয়ে বসে যাচ্ছে খেলোয়াড়দের ওপর। এরপর তাঁরা তাতে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে আর খেলতেই পারেন না।

‘এ রকম একটা টুর্নামেন্ট হচ্ছে। অথচ আমরা যে খেলার আগে কত খেলা খেলে আসলাম বাংলাদেশ থেকে! এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। ওরাও তো মানুষ, ওরা খেলতে নামছে। ওদের চাপ থাকতে পারে, ভয় লাগতে পারে’—বলেছেন রাজ্জাক।

এসব দেখে তাঁর মনে হচ্ছে, খেলোয়াড়দের দিকটা কেউই ভাবে না, ‘আমরা এগুলো কখনো দেখি না। এ কেন নেই, ও কেন আছে...খালি এসব আলোচনা। যে দলে আছে তাকে উৎসাহ না দিয়ে বিভিন্নভাবে তার ওপর চাপ তৈরি করা হচ্ছে। আসলে আমরা সবাই কতটুকু ভালো চাচ্ছি বাংলাদেশের, সেটাও দেখার বিষয়।’

এশিয়া কাপের সুপার ফোরে টানা দুই হারে ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা একরকম শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশের

খারাপ খেললে সমালোচনা হবে, এটি মানতে নাকি আপত্তি নেই রাজ্জাকের। তবে সেই সমালোচনা চান গঠনমূলক। তাঁর মনে হচ্ছে, অনেকে না বুঝেই ক্রিকেটারদের সমালোচনা করেন, ‘সমালোচনা থাকবেই। আপনারা (সংবাদমাধ্যম) তো সমালোচনার জন্যই আছেন। সমালোচনা তো করবেনই। তবে বুঝলে সমালোচনা করার কথা নয়। না বুঝে করলে খুব একটা কিছু বলার নেই।’

দলের ব্যাটিং নিয়ে কিছু প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে রাজ্জাক বলেছেন, টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলার কেউ নন। এটা বলবেন কোচ, ব্যাটিং কোচরা। ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে করা এক প্রশ্নেও বিরক্তই মনে হয়েছে তাঁকে, ‘একমাত্র আমাদের দেশেই ওপেনিংয়ে কে খেলবে, সাতে কে খেলবে, আটে কে খেলবে, দশে কে খেলবে—সবার সে চিন্তা। পৃথিবীর কোথাও আমি এটা দেখিনি। দলের যখন যেখানে যাকে দরকার হবে, তখন সে সেখানে খেলবে। এখানে বাইরে থেকে বলার কিছু নেই। এটার কারণেও খেলোয়াড়েরা চাপে থাকে।’

Also Read: ‘পর্যটক’ বাংলাদেশের চোখ ভারতে 

রাজ্জাকের সঙ্গে কথোপকথনে ওপেনার মোহাম্মদ নাঈমের প্রসঙ্গও এসেছে। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দাসুন শানাকার বলে তিনি যেভাবে আউট হলেন, সেটা তো এই পর্যায়ের ক্রিকেটে সবার কাছেই দৃষ্টিকটু লেগেছে।

তবে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের পর রাজ্জাকও ঢাল হয়েছেন বাঁহাতি এই ওপেনারের, ‘একটা ছেলে এখানে ভালোই খেলছে, ওর আগের ইতিহাসও যে খুব একটা খারাপ, তা নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ও যখন আসে খুব একটা খারাপ ছিল না। প্রিমিয়ার লিগেও ভালো সময় কাটিয়েছে। হয়তো এই মুহূর্তে আমরা যে রকম আশা করছি বা ও যে রকম আশা করছে, সে রকম হচ্ছে না। তার মানে এই নয় যে ওকে ছুড়ে ফেলা হবে, ওর ওপর চাপ তৈরি করা হবে।’

এশিয়া কাপ খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ দলের সঙ্গেই আছেন রাজ্জাক (মাঝে)

একজন সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে রাজ্জাকের উপলব্ধি, কেউ খারাপ খেলতে থাকলে ওই ক্রিকেটারই সেটা সবচেয়ে ভালো বোঝেন। তাঁকে সেটা বুঝিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ‘জাতীয় দলে খেললে চাপ নিতেই হবে। সবাই সবার কথা বলবে, সমালোচনা করবে। তবে আমার মনে হয় কখনো কখনো একটু বেশি বলা হয়। সমালোচনা যখন করা হয়, ভালো খেললেও ঠিক একইভাবে প্রশংসা করা উচিত’—বলেছেন রাজ্জাক।

Also Read: এয়ারপোর্টেও যখন কাটানো যায় ‘ছুটি’

সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমনি এমনি একটা ম্যাচ খেলতে গেলেও চাপ থাকে। আমি বলছি বাড়তি যে চাপটা আমরা তাদের দিচ্ছি, সেটা না দিলে সবার জন্য ভালো।’ আর সমালোচনা করলেও সেটারও একটা সীমা থাকা উচিত, ‘জাতীয় দলে আমি যখন ভালো খেলব না, স্বাভাবিকভাবেই আমার চেয়ে বেশি চাপে আর কেউ থাকবে না। খারাপ খেললে তো একটা চাপ থাকেই। মিডিয়ার চাপ থাকবেই। আমি বলছি না মিডিয়া কিছু বলবে না। অবশ্যই বলবে। তবে সেটা একটা সীমারেখার মধ্যে থাকলে বাংলাদেশের জন্য ভালো, খেলার জন্য ভালো।’

রাজ্জাকের চোখে আসলে সমালোচনার ধরনটাই ভুল বাংলাদেশে। কেউ একজন খারাপ খেললে তার দায় যাচ্ছে সবার ওপর, ‘যাঁরা এসব সমালোচনা করছেন তাঁরা কিন্তু বাংলাদেশের বাইরের কেউ নন। সবাই বাংলাদেশের ভালোই চান কোনো না কোনো দিক থেকে। তবে আমার মনে হয় ধরনটা একটু ভুল হচ্ছে।’

ব্যর্থ নাঈমের জন্যও ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন নির্বাচক রাজ্জাক

উদাহরণ দিতে গিয়ে নাঈমের প্রসঙ্গই টেনেছেন নির্বাচক, ‘একটা ছেলেকে শুধু শুধু এ রকম করা...খারাপ খেলা মানে তো এটা নয়! শুনেছি ওকে নিয়ে যা–তা বলা হচ্ছে। কিন্তু ও তো তাকে জাতীয় দলে না নেওয়ার মতো কিছু করেনি। জাতীয় দলে আসার মতো কাজই করেছে, যে কারণে ওকে দলে নেওয়া হয়েছে। হয়তো ক্লিক করতে পারেনি। এখন ক্লিক না করলে হয় ওর দোষ, নয়তো কোচের দোষ, নয়তো বোর্ড সভাপতির দোষ, নয়তো অধিনায়কের দোষ—এটা ঠিক নয়।’