Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রথমবার বিপিএল জিতে ট্রফি নিয়ে বরিশালের উদ্‌যাপন

কুমিল্লাকে বিষাদে ডুবিয়ে বরিশালের প্রথম

আঁধারে আলোক শিখা ছড়িয়ে দিয়ে আকাশে উঠে দুম করে ফুটছে আতশবাজি। আলোর বিন্দু ঝরনাধারা হয়ে পড়ছে নিচে। সে আলোর ঝলকানির মধ্যেই দৃশ্যমান হচ্ছিল বিজয়ের আনন্দ। ড্রেসিংরুম থেকে ছুটে আসা সতীর্থদের বাহুডোরে মিশে যাচ্ছিলেন দুই ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ ও ডেভিড মিলার।

আলোর রোশনাই, আতশবাজির বিজয়ধ্বনি—সবই যেন উৎসর্গকৃত ফরচুন বরিশালের বিজয় উদ্‌যাপনে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আঁধার নামিয়ে লাল–নীল–হলুদ আলোর কৃত্রিম নাচন যেন বরণ করে নিচ্ছিল বিপিএলের নতুন চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালকে।

Also Read: মুশফিক–মাহমুদউল্লাহকে শিরোপা উৎসর্গ করে তামিম বললেন, ‘এটা মুশির ট্রফি’

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের পাঁচে পাঁচ হয়নি। বিপিএলের প্রথম শিরোপা ধরা দিয়েছে তামিম ইকবালের ফরচুন বরিশালের হাতে। দশম বিপিএলের ফাইনালে কাল হ্যাটট্রিক শিরোপার আশায় থাকা কুমিল্লাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বরিশাল। এর আগে চারবার ফাইনালে উঠে চারবারই শিরোপার স্বাদ পাওয়া কুমিল্লা ফাইনালে এবারই প্রথম হারল।

২০২২ সালের ফাইনালে এই কুমিল্লার কাছে হেরেই রানার্সআপ হওয়া ফরচুন বরিশালের এটি ছিল দ্বিতীয় ফাইনাল। অবশ্য ‘ফরচুন বরিশাল’ নামে না হলেও বিপিএলে বরিশালের দল ফাইনাল খেলেছে আরও দুবার। ২০১২ সালের প্রথম বিপিএলে বরিশাল বার্নার্স নামে তারা হেরেছিল চ্যাম্পিয়ন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের কাছে। বরিশাল ফাইনাল খেলেছে ২০১৫ বিপিএলেও, সেবার নাম ছিল ‘বরিশাল বুলস’।

জয়ের পর সিজদা দিচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ–মুশফিকরা

চ্যাম্পিয়ন যারাই হোক, তাদের বরণ করে নিতে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি প্রস্তুতই ছিল। কুমিল্লা, বরিশাল দুই দলের জার্সির রংই লাল বলে গ্যালারি যেন রূপ নিল লাল সমুদ্রে। তার মধ্যেও ম্যাচ শেষে বরিশালের ‘লাল’কে সহজেই আলাদা করা যাচ্ছিল। কুমিল্লার লাল রং ম্লান করে দিয়ে বরিশালের লালেই যে লাগে উৎসবের ঢেউ!

Also Read: বরিশালকে জিতিয়ে এবার বিপিএল-সেরাও তামিম

২০২২ বিপিএলের ফাইনালে মিরপুরের উইকেটেই ১৫১ রান করে জিতেছিল কুমিল্লা। কিন্তু পরের বছর সিলেট স্ট্রাইকার্স কুমিল্লাকে হারাতে পারেনি ১৭৫ রান করেও। মিরপুরের উইকেট যে আর আগের মতো নেই, সেটা দেখা গেছে এবারের বিপিএলেও। অভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইনআপের বরিশাল অযথা কোনো বিপর্যয়ে না পড়লে কুমিল্লার ৬ উইকেটে করা ১৫৪ রান কঠিন লক্ষ্য হওয়ার কথা ছিল না তাদের জন্য।

Also Read: আহসান মঞ্জিলে না যাওয়া নিয়ে যা বললেন তামিম ও সালাউদ্দিন

অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও মেহেদী হাসান মিরাজের ৮ ওভারে ৭৬ রানের উদ্বোধনী জুটির পর সেটি তো আরও সহজ হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিকে আগেই বিদায় বললেও এবারের বিপিএলে তামিম তাঁর দারুণ ফর্মটা ধরে রাখলেন ফাইনাল পর্যন্ত।

তিন ছক্কা আর তিন চারে করা ২৬ বলে ৩৯ রানের ইনিংসে কাল শুধু দলকেই ভালো শুরু এনে দেননি তিনি, টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ (৪৯২) স্কোরার হিসেবে নিজেকে নিয়ে গেছেন আরও ওপরে। মেহেদী হাসান মিরাজের ২৬ বলে ২৯ আর কাইল মায়ার্সের ৩০ বলে ৪৬ রান মিলে ১ ওভার বাকি থাকতেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বরিশাল। জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় ১৯তম ওভারের শেষ বলে মাথার চোট কাটিয়ে ফেরা মোস্তাফিজুর রহমানকে কাভার দিয়ে মারা ডেভিড মিলারের বাউন্ডারিতে।

সিরিজ সেরা হয়েছেন তামিম

বরিশালের লক্ষ্যটা যে আরও বেশি হয়নি, তার কৃতিত্ব তাদের পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের। কুমিল্লার ইনিংসের শেষ ওভারে উইকেটে ছিলেন জাকের আলী ও আন্দ্রে রাসেল। দুজনের হাতেই মার আছে। জেমস ফুলারের করা ১৯তম ওভারে ২১ রান আসার পর মনে হচ্ছিল, শেষ ওভারেও দেখা যাবে ও রকম একটা ঝড়। অথচ শেষ ওভারে তাদের স্কোরবোর্ডে জমা পড়ল মাত্র ৭ রান!

কৃতিত্বটা দিতে হবে বোলার সাইফউদ্দিনকেই। ৩টি ওয়াইড ও ১টি নো বল করে তিনি ওভারটা যদিও টেনেছেন ১০ বল পর্যন্ত, কিন্তু ওই ১০ বলের ওভারেও দেননি একটিও চার বা ছক্কা। ওয়াইড, নো–গুলোও হয়েছে আসলে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে একেকটা বল একেক রকম করতে গিয়ে। কখনো ব্লক হোল, কখনো ইয়র্কারের চেষ্টা, কখনো স্লো ফুল টস, কখনোবা ওয়াইড ইয়র্কার।

Also Read: কোটি টাকার হৃদয়ের কোটি টাকার ব্যাটিং

ওভারের শুরুতে রাসেলই স্ট্রাইকে ছিলেন। সাইফউদ্দিনের কাছে বারবারই হারছিলেন তিনি। তবু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস থেকেই কিনা ভাবলেন, নিজেই বড় শট খেলে রানটা বাড়িয়ে নেবেন। সিঙ্গেল নেওয়ার সুযোগ পেয়েও তাই জাকেরকে প্রান্ত দিচ্ছিলেন না ক্যারিবীয় টি–টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট। সেই বড় শট আর খেলা হয়নি রাসেলের। পুরো ওভারে জাকের খেলতে পেরেছেন মাত্র ১টি বলই।

কুমিল্লার ১৫৪ রানে অবশ্য রাসেলের অবদানই বেশি। মাহিদুল ইসলামের আউটের পর যখন তিনি উইকেটে এলেন, ইনিংসের মাত্র ৩.২ ওভারই বাকি তখন; স্কোরবোর্ডে রান ৬ উইকেটে ১১৫। সেখান থেকে স্কোরটা ১৫৪–তে গেছে মূলত চার বাউন্ডারিতে রাসেলের ১৪ বলে অপরাজিত ২৭ রানের সৌজন্যে। সপ্তম উইকেটে জাকেরকে (২৩ বলে ২০*) নিয়ে ৩.২ ওভারেই ৩৯ রানের জুটি গড়েন রাসেল।

আলোয় আলোয় জয়ের উৎসব

অধিনায়ক লিটন দাস ও তাওহিদ হৃদয় দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে ফাইনালে এসেছেন। বিদেশি ক্রিকেটারদের নামেও বরিশালের চেয়ে কম ভারী ছিল না কুমিল্লা। বিশেষ করে সুনীল নারাইন, মঈন আলী, আন্দ্রে রাসেলের কাছে তো এ সংস্করণে একটা প্রত্যাশা থাকেই। কিন্তু ফাইনালে এসে রাসেল ছাড়া চারবারের চ্যাম্পিয়নদের অন্য সব বড় নামই কেমন চুপসে গেল! শিরোপা–উৎসব করল অভিজ্ঞতায় ঠাসা ফরচুন বরিশাল।

মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সাইফউদ্দিনদের সঙ্গে নিয়ে বরিশালের মতো অধিনায়ক তামিমেরও বিপিএলে এটাই প্রথম শিরোপা। তবে খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ২০১৮ সালেও। সেটা অবশ্য কাল যাদের হারিয়েছেন, সেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়েই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস: ২০ ওভারে ১৫৪/৬ (মাহিদুল ৩৮, রাসেল ২৭*, জাকের ২০*, ফুলার ২/৪৩)

ফরচুন বরিশাল: ১৯ ওভারে ১৫৭/৪ (মায়ার্স ৪৬, তামিম ৩৯, মিরাজ ২৯; মঈন ২/২৮, মোস্তাফিজ ২/৩১

ফল: ফরচুন বরিশাল ৬ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কাইল মায়ার্স

ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট: তামিম ইকবাল