বিশ্বকাপের হাত ছোঁয়া দূরত্ব দিয়ে ধীরে ধীরে মাঠ ছাড়ছেন জিদান-ফুটবলের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্যগুলোর একটি।
বিশ্বকাপে লোকগাঁথার অংশ সে ঘটনা। ওই মুহূর্তের আগপর্যন্ত যা রূপকথা মনে হচ্ছিল। জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছিলেন জিনেদিন জিদান, কিন্তু দল বিশ্বকাপে যেতে পারছে না দেখে আবার ফিরে এসেছেন। দলকে ২০০৬ বিশ্বকাপে নিয়েছেন। বিশ্বকাপ খেলে পেশাদার ফুটবল থেকেও অবসরের চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন। এরপর প্রায় একাই দলকে ফাইনালে নিয়েছেন। ফাইনালে পেনেনকা গোলে দলকে এগিয়েও দিয়েছেন।
হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাত। ইতালির মার্কো মাতেরাজ্জিকে ঢুস মারলেন, দেখলেন লাল কার্ড। ফ্রান্সও পারেনি সে ধাক্কা সামলাতে। কাতার বিশ্বকাপ উপলক্ষে সেই ঢুস ফিরিয়ে আনছেন আয়োজকেরা।
২০০৬ বিশ্বকাপের সে ঘটনা চাইলেও কেউ ভুলতে পারবেন না। ২০১৩ সালে সে ঘটনাকে চিরস্থায়ী করে তুলেছিল এক ভাস্কর্য। আলজেরিয়ায় জন্ম নেওয়া ফ্রেঞ্চ শিল্পী আদেল আবদেস সামাদ ব্রোঞ্জের এই ভাস্কর্যটি বানিয়েছিলেন। ১৫ ফুটেরও বেশি উচ্চতার সে ভাস্কর্য কিনে নিয়েছিল কাতার জাদুঘর। দোহায় সমুদ্রের পাশে এক পদচারী–সড়কে ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর সেটি বসানো হয়েছিল। কিন্তু জনগণের ক্ষোভের মুখে দ্রুতই সেটা সরিয়ে নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। মাত্র তিন সপ্তাহ পর অর্থাৎ ২৮ অক্টোবর সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়।
Also Read: ফুটবল উৎসবে যোগ দিতে আবার মাঠে জিদান
কাতারের অধিকাংশ মানুষের কাছে এই ভাস্কর্য মূর্তি বলেই মনে হয়েছে এবং এভাবে জিদান ও মাতেরাজ্জির সেই মুহূর্তকে ধরে রাখার চেষ্টাকে মূর্তিপূজার শামিল মনে করা হচ্ছিল। সে সঙ্গে আগ্রাসী আচরণকে উৎসাহিত করা হচ্ছে—এ ধারণায় তখন সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
৯ বছর পর নিজেদের সিদ্ধান্ত বদলেছে কাতার। জিদান ও মাতেরাজ্জির সেই ঢুস আবার ফিরিয়ে আনছে তারা। এ ব্যাপারে কাতার জাদুঘরের চেয়ারপারসন আল-মায়াসা আল থানি বলেন, ‘সমাজ বিবর্তিত হয়। এটা হতে সময় লাগে। মানুষ হয়তো প্রথমে কোনো কিছুর সমালোচনা করে, কিন্তু এক সময় সেটা বুঝতে পারে এবং সেটা মেনে নেয়। জিদান কাতারের খুব ভালো বন্ধু এবং আরব বিশ্বের জন্য দারুণ এক আদর্শ। শিল্প—আর সবকিছুর মতোই রুচির ব্যাপার। আমাদের লক্ষ্য মানুষের ক্ষমতায়।’
ঢুস ফিরিয়ে আনা হলেও কাতারের মানুষের পরিবর্তন যে এখনো অতটা হয়নি, সেটাও স্বীকার করে নিয়েছেন আল-থানি। জনসাধারণের জন্য একদম উন্মুক্ত কোনো স্থানে না রেখে দোহার নতুন ক্রীড়া জাদুঘরে রাখা হবে সেটা।
Also Read: পিএসজিতে মেসি-নেইমারদের কোচ হবেন মরিনিও?