Thank you for trying Sticky AMP!!

ম্যারাডোনার বিদায় স্তব্ধ করে দিয়েছে সবাইকে।

‘সেরা’র দিনেই যেতে হবে তাঁকে!

ডিয়েগো ম্যারাডোনার মতো কেউ কখনো আসেননি। কখনো আসবেন, সে আশা করাটাও ভুল। আধুনিক ফুটবল সে সুযোগ আর রাখেনি। কিন্তু যখন ফুটবলটা এভাবে পেশাদারি মানসিকতায় ডুব দেয়নি, যখন ফুটবলটা মানুষ শুধু ভালোবাসা থেকেই খেলতেন, তখন তো আর খেয়ালি ফুটবলারের অভাব ছিল না। যুগে যুগেই অসংখ্য ফুটবলার এসেছেন যাঁদের প্রতিভার ঝলকে চোখ ঝলসে উঠেছে। আবার প্রতিভার অপচয় আফসোস জাগিয়েছে।

ডিয়েগো ম্যারাডোনা এ কারণেই অনন্য। প্রকৃতি তাঁকে দেওয়ার সময় অকৃপণ হাতেই দিয়েছে। এতটাই যে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনও তাঁর সাফল্যের পথে বাধা হতে পারেনি। যে জীবনযাপন অন্য যেকোনো ফুটবলারের ক্যারিয়ার কুঁড়িতেই শেষ করে দিতে পারত, সে জীবনকেই দুহাতে আলিঙ্গন করেছেন। তবু ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতম ফুটবলারদের একজন হতে কোনো কষ্ট হয়নি তাঁর। ম্যারাডোনার মতো কেউ হয়তো তেমনটা পারেননি। তবে তাঁর মতো কারও যে আবির্ভাব হলেও হতে পারে, সেটা অন্তত একজন টের পাইয়েছিলেন। যাঁর প্রতিভা চমকে দিত, যাঁর খেয়ালিপনা হাহাকার জাগাত।

Also Read: লিভারপুলকে হারিয়েই ম্যারাডোনাকে শ্রদ্ধা জানালেন এই আর্জেন্টাইন

এমন একজন, যদি ম্যারাডোনার সঙ্গে তুলনা করতেই হয়, তাঁকেই শুধু টেনে আনা যায়। প্রতিভা, অনিয়ন্ত্রিত জীবন, দম্ভ আর প্রভাব বিস্তার—সবকিছুতেই ম্যারাডোনার পূর্বসূরি একজনই, জর্জ বেস্ট।

ফুটবলের প্রথম বড় তারকা ছিলেন জর্জ বেস্ট

দুজনের খেলা একসঙ্গে দেখার সুযোগ হয়নি। দুজন ছিলেন দুই যুগের। বয়সের ব্যবধান ১৪-এর একটু বেশি। একজন নাপোলির মতো প্রায় অপরিচিত এক ক্লাবের নাম সবার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, প্রায় একাই দেশকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছেন। অন্যজন খেলেছেন পরাশক্তি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। দেশের হয়ে সাকল্যে খেলেছেন ৩৭ ম্যাচ। বিশ্বকাপ বা ইউরো খেলার সৌভাগ্যই হয়নি। শুধু পরিসংখ্যান ম্যারাডোনার পাশে জর্জ বেস্টকে অনেক ম্লান দেখাতে বাধ্য করে।

Also Read: ‘আমরা একদিন স্বর্গে ফুটবল খেলব’

ভাগ্যিস, ফুটবল শুধু গোল আর গোলের সহায়তায় মোড়ানো নয়। ম্যারাডোনার আবির্ভাবের আগেই তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ। তারও অনেক আগেই শেষ তাঁর ইউনাইটেড ক্যারিয়ার। এক দশকেরও কম সময় বেস্টের ‘বেস্ট’ পেয়েছে ফুটবল। তাতেই উত্তর আয়ারল্যান্ডে জন্ম নেওয়া এক ফুটবলারের জন্য বিশ্বকাপ না খেলা সেরা ফুটবলার—এ তকমা সৃষ্টি করতে হয়েছে। খেলার ধরনে তিনি কেমন ছিলেন সেটার বর্ণনা ম্যারাডোনাই ভালো দিয়েছেন, ‘যখন ছোট ছিলাম, তখন জর্জ থেকে অনুপ্রেরণা নিতাম। তিনি ছিলেন চোখধাঁধানো, উত্তেজনাকর এবং সতীর্থদের অনুপ্রাণিত করতে পারতেন। আমার তো ধারণা আমরা দুজন একই ধরনের খেলোয়াড়, ড্রিবলার, যারা জাদুকরি মুহূর্ত সৃষ্টি করতে জানে।’

Also Read: ম্যারাডোনার মতো করে বাঁচার কেউ আছেন!

জাদু? হ্যাঁ, ফুটবল পায়ে দুজনই জাদুর জন্ম দিতেন। ম্যারাডোনা মানেই তো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সে দৌড়। মাঝমাঠ থেকে দৌড়টা শুরু করেছিলেন, থেমেছিলেন বিশ্বের সব ফুটবল অনুরাগীর হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়ার পরই। বেস্টের বর্ণনাতেও শব্দ সংকটে ভুগতেন সবাই। কারও চোখে তিনি সর্বকালের সেরা ড্রিবলার। কারও কাছে তিনি ফুটবলের সেরা অলরাউন্ডার। প্রতিটি কাজে ছিলেন দক্ষ। কারও কাছে তিনি সেরা প্লেমেকার। দলের খেলা সৃষ্টিতে ছিলেন অনন্য। কারও চোখে বেস্টের মতো পাস দেওয়ার দক্ষতা আর কেউ দেখাতে পারবেন না। তাঁর বিপক্ষে খেলতে নামা মানেই ডিফেন্ডারদের নাচের তালিম নেওয়া।

মৃত্যুতেও তাঁরা সঙ্গী।

তুলনাটা এখানেই শেষ হয় না। মাঠের ঝলকে হয়তো আরও অনেকেই আছেন। কিন্তু মাঠের বাইরের জীবনটাই এ দুজনকে আরও কাছাকাছি এনেছে। খেলা ছাড়ার পর সব কিংবদন্তিই আড়ালে চলে যান। কিন্তু বেস্ট কিংবা ম্যারাডোনাকে ভোলার সাধ্য ছিল না কারও। যে খামখেয়ালি জীবনযাপন তাঁদের প্রতিভার পুরোটা দেখতে দেয়নি, সেই খেয়ালিপনাই তাদের সবার ভালোবাসার পাত্র জানিয়েছে। শুধু ফুটবল ছাপিয়ে সর্বজনীন হয়ে ওঠাও তো সে সুবাদে।

Also Read: বাংলাদেশের মানুষকে ফুটবলপ্রেম শিখিয়েছেন ম্যারাডোনাই

দুজনই নিজেকে সেরা ভাবতেন। ফিফা আয়োজিত সর্বকালের সেরার ট্রফিটা পেলের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। কারণ, তাঁর চোখে সেরা তিনিই। পেলের সঙ্গে একই যুগে খেলা বেস্টও সেটাই ভাবতেন। তিন বিশ্বকাপজয়ী পেলেকে নিয়ে মাতামাতির সময়টায় তো ঘোষণাই দিয়েছিলেন, ‘আমি যদি কুৎসিত হতাম, তোমরা পেলের নামও শুনতে না কখনো।’ নিজেকে নিয়ে এভাবে দম্ভ করায় আর একজনই তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারতেন।

Also Read: ম্যারাডোনাকে হারিয়ে কাঁদছেন মাশরাফি-সাকিবরাও

মদ ও মাদককে ফুটবলের একটা বড় অংশ বানিয়ে দিয়েছেন দুজন। একজন মদের নেশায় নিজের ক্যারিয়ার শেষ করেছেন, আরেকজন মাদকের টানে। নারীর টানও দুজনের কম ছিল না। বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরেও শোধরাননি বেস্ট। আবারও মেতেছেন পানপাত্রে। নিজের ধ্বংস নিজেই টেনে এনেছেন। মৃত্যুর আগে ভুল বুঝতে পেরে সবার কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, ‘আমার মতো মরো না।’

Also Read: কাঁদছে নাপোলি, রক্ত ঝরছে আর্জেন্টাইনদের বুকে

কিন্তু হায়, তাঁর ‘আত্মার ভাই’ যে সে পথে বহু আগেই পা দিয়ে রেখেছিলেন। বেস্টের দেখা পেতে উদ্‌গ্রীব হয়েই যেন এত দ্রুত বিদায় নিলেন ম্যারাডোনা। বিদায়বেলায়ও বেস্টের দিনটাই পছন্দ হলো তাঁর। ১৫ বছর আগে ২৫ নভেম্বরেই পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছিলেন বেস্ট। খেলা আর জীবনে যাঁদের এত মিলিয়ে দিয়েছিল, তাঁদের বিদায়েও হয়তো পার্থক্য রাখতে চাইল না প্রকৃতি।

Also Read: মেসির কাছে ‘চিরন্তন’, রোনালদোর চোখে ‘অপূরণীয় শূন্যতা’

Also Read: চলে গেলেন ফুটবল জাদুকর