Thank you for trying Sticky AMP!!

ফেডারেশন কাপ জয়ের অনেকটা কৃতিত্বই কোচ আলফাজের

আলফাজ যেখানে আলাদা

অনেক দিন পর যে মোহামেডানে আনন্দের ফোয়ারা ছুটেছে, এর অনেকটা কৃতিত্বই আলফাজের।

অনেকেই বলেন, দেশি কোচরা পারেন না। আসলেই কি তাই? সর্বশেষ ২০১৭ সালে আরামবাগকে স্বাধীনতা কাপ জিতিয়েছেন মারুফুল হক। এবার সাফল্য–বুভুক্ষু মোহামেডানের ঘরে অবশেষে ট্রফির আলো জ্বলেছে দেশি কোচ আলফাজ আহমেদের হাত ধরেই। এরপরও কি বলবেন, দেশি কোচরা পারেন না!

১৪ বছরের অপেক্ষা শেষে ফেডারেশন কাপ জিতেছে মোহামেডান। পরশু কুমিল্লায় পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোসের আবাহনীর বিপক্ষে তীব্র উত্তেজনার ফাইনাল শেষে টাইব্রেকারে শেষ হাসি হেসেছে আলফাজ আহমেদের দলই। অনেক দিন পর যে সাদা–কালো শিবিরে আনন্দের ফোয়ারা ছুটেছে, এর অনেকটা কৃতিত্বই দলটার সাবেক খেলোয়াড় ও বর্তমানে কোচ আলফাজের।

সাদামাটা তারুণ্যনির্ভর দলকে শিরোপার স্বাদ দিয়েছেন তিনিই। বসুন্ধরা কিংস ও আবাহনীর মতো দুই সেরা দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দেশি কোচদের জন্য কঠিনই। আলফাজ সম্ভব করলেন সেটাই।

খেলোয়াড়ি জীবনে আলফাজ ছিলেন আক্রমণভাগের খেলোয়াড়

বাংলাদেশের ফুটবলে একসময়ের বড় তারকা আলফাজের জীবনযাপন বেশ সাদামাটাই। হয়তো এ কারণেই সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা ফুটবলারদের সঙ্গে সহজে মানিয়ে নিতে পেরেছেন। কোচ হিসেবে তাঁর সবচেয়ে ভালো দিক, কখন কাকে কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, সেটা জানেন। উজ্জীবিত করতে পারেন দলকে। যার প্রমাণ কুমিল্লার ফাইনালে ২ গোলে পিছিয়ে থেকেও মোহামেডানের দারুণভাবে ফিরে আসা। একবারও মনে হয়নি মোহামেডান ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছে।

আমি খেলোয়াড়দের বোঝার চেষ্টা করি, তাদের সামর্থ্য নিয়ে ভাবি
আলফাজ আহমেদ, কোচ, মোহামেডান

খেলোয়াড়ি জীবনে আলফাজ ছিলেন আক্রমণভাগের খেলোয়াড়, তাঁর কোচিং–দর্শনও আক্রমণাত্মক। দীর্ঘদিন মাঠে থাকায়, বড় বড় কোচের অধীন খেলায় ম্যাচ পরিস্থিতি বুঝতে পারার ক্ষমতাও অসাধারণ।

কোচ হিসেবে আলফাজ কেমন, সেই প্রশ্নে আবাহনীর কোচ মারিও লেমোস ফাইনালের আগের দিন বলেছিলেন, ‘তিনি এ দেশের নামী ফুটবলার ছিলেন, যেটা অনেক বড় ব্যাপার। প্রধান কোচের দায়িত্ব পেয়ে দলটাকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন। আলফাজের অধীন লিগের দ্বিতীয় পর্বে মোহামেডান বেশ ভালো খেলেছে।’

এমনিতে স্থানীয় কোচদের ওপর ক্লাবগুলোর আস্থা কম। সামর্থ্য থাকলে ক্লাব বিদেশি কোচের পেছনেই দৌড়ায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ ছয়টি দলে ছিলেন বিদেশি কোচ, এবার অবশ্য চারজন। দেশি কোচদের ঘাটতি কোথায়, তা নিয়ে মোহামেডানের ম্যানেজার ও আলফাজের সাবেক সতীর্থ ইমতিয়াজ আহমেদ নকিবের পর্যবেক্ষণ, ‘বাংলাদেশের প্রায় ৮০ ভাগ কোচই তেমন কঠোর নয়। চার–পাঁচজন আছে কোচিং নিয়ে পড়াশোনা করে। বাকিদের সামর্থ্যও অনেক কম, পড়াশোনাও করে না।’ তাঁদের মধ্যে আলফাজকে একটু আলাদাই মনে হয় তাঁর, ‘আলফাজ তৃণমূলের খেলোয়াড়দের খুব ভালো চেনে। ফলে ওর জন্য খেলোয়াড়দের সেরাটা বের করে আনা সহজ।’

Also Read: অবিশ্বাস্য ফাইনাল, দিয়াবাতের ৪ গোল, টাইব্রেকারে শেষ হাসি মোহামেডানের

বিদেশি কোচদের দাপটের মধ্যেই গত ১৪-১৫ বছরে ভালো একটা অবস্থান তৈরি করেছেন মারুফুল হক। দেশের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত এই কোচ আলফাজের সাফল্যকে দেখছেন নানান দৃষ্টিকোণ থেকে, ‘তিনি নিজে বড় খেলোয়াড় ছিলেন। মোহামেডানের বর্তমান দলটির দর্শন, খেলোয়াড়দের চাওয়া—সবকিছুই তাঁর জানা। ক্লাব থেকে সমর্থনও পেয়েছেন। তাঁর সাফল্যের এটাও একটা বড় কারণ।’

১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ জয়ের উদ্‌যাপন

বিদেশি খেলোয়াড়দের প্রতি বাংলাদেশের ফুটবল ক্লাবগুলোর বরাবরই বাড়তি টান। কিন্তু যে মানের বিদেশি কোচ তারা আনছে, তা থেকে দেশের ফুটবল কিছু পাচ্ছে না বলেই মনে করেন মারুফুল। তাই দেশি কোচদের পৃষ্ঠপোষকতা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি, কোচদের জন্য চান স্বাধীনতা।

মোহামেডানে আলফাজ সে স্বাধীনতা পাচ্ছেন। কোচ হিসেবে স্বাধীনতা দিচ্ছেন খেলোয়াড়দেরও। সাদা–কালো দলের অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার আলমগীর কবিরের কথা, ‘খেলোয়াড়দের তিনি স্বাধীনতা দেন। বলেন, চাপ নিবা না।

Also Read: আলফাজ কীভাবে বদলে দিলেন মোহামেডানকে

ম্যাচের আগে প্রতিটা গ্রুপকে (রক্ষণ, মাঝমাঠ, আক্রমণভাগ) ডেকে বলে দেন কার কী দায়িত্ব। কথা কম বলে কাজ করেন বেশি। অনেক বছর ফুটবল খেলার কারণে তিনি জানেন, বাংলাদেশের কন্ডিশনে কীভাবে ভালো করা যায়।’

খেলোয়াড়দের সামর্থ্য বোঝাটাও তাই সহজ আলফাজের জন্য। কোচ হিসেবে নিজেকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি নিজেও বলেছেন, ‘আমি একজন খেলোয়াড়কে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি, কোথায় কাকে কখন খেলাব, অনেক ভেবে সেসব সিদ্ধান্ত নিই। খেলোয়াড়দের বোঝার চেষ্টা করি, তাদের সামর্থ্য নিয়ে ভাবি।’

আর এখানেই হয়তো আলাদা কোচ আলফাজ আহমেদ।

Also Read: কথা রেখে মোহামেডানকে তিনে এনেছেন আলফাজ