Thank you for trying Sticky AMP!!

বায়ার লেভারকুসেন কোচ জাবি আলোনসো

‘ফার্গি টাইম’ এখন ‘আলোনসো টাইম’

ম্যাচের শেষ কর্নার। শেষ হলেই সমাপ্তির বাঁশি বাজবে। ১ গোলে পিছিয়ে থাকা বায়ার লেভারকুসেন মৌসুমে প্রথমবারের মতো হার নিয়ে মাঠ ছাড়বে। কিন্তু না, লেভারকুসেন তো অপরাজেয়! শেষ কর্নারের আক্রমণ থেকেই ইয়োসিপ স্তানিসিচ হেড নিলেন, বল গেল জালে, ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজল ১-১ সমতায়।

ঠিক এভাবেই কাল রাতে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের মাঠে বুন্দেসলিগায় ড্র করেছে লেভারকুসেন। শুধু ডর্টমুন্ডের বিপক্ষেই নয়, গোটা মৌসুমেই লেভারকুসেন একের পর এক ম্যাচে শেষ মুহূর্তে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়েছে। কখনো পিছিয়ে থাকা ম্যাচে সমতা এনেছে, কখনো সমতায় থাকা ম্যাচে জয় তুলেছে। শুধু বুন্দেসলিগাতেই নয়, জার্মান কাপ আর ইউরোপা লিগেও এমন দৃশ্যের মঞ্চায়ন হয়েছে বারবার।

এরই মধ্যে বুন্দেসলিগা জিতে নেওয়া লেভারকুসেনের শেষ দিকের এই মোড় ঘুরিয়ে দেওয়াকে তুলনা করা যায় ‘ফার্গি টাইম’–এর সঙ্গে। নাম দেওয়া যায় ‘আলোনসো টাইম’।

ফুটবলে ‘ফার্গি টাইম’–এর উদ্ভব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনকে কেন্দ্র করে। ফার্গুসন কোচ থাকার সময় প্রায়ই শেষ মুহূর্তে গোল করে ম্যাচ নিজেদের অনুকূলে নিয়ে নিত ইউনাইটেড। যা একপর্যায়ে সমর্থকদের মধ্যে ফার্গি টাইম নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ডাগআউটে দাঁড়ানো ফার্গুসনের হাতঘড়িতে তাকানোর ছবিও।

২০১৩ সাল পর্যন্ত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডাগআউটে ছিলেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ১৯৯২-৯৩ থেকে ২০১২-১৩ মৌসুম পর্যন্ত ম্যাচের ৯০ মিনিটের পর সবচেয়ে বেশি জয়সূচক গোল করেছিল লিভারপুল—২৪টি। একই সময়ে আর্সেনালের এ ধরনের গোল ছিল ১৯টি, চেলসির ১৮। তুলনায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ছিল কম—১৬। তবে অন্য ক্লাবগুলোতে লম্বা এ সময়ে অনেক কোচই কাজ করে গেছেন কিন্তু ইউনাইটেডে ছিলেন শুধুই ফার্গুসন। যে কারণে দল বা খেলোয়াড় ছাপিয়ে কোচ কেন্দ্র করেই পরিচিত হয়ে ওঠে যোগ করা সময়ের জয়সূচক গোল। দিন শেষে খেলাটা ডাগআউট থেকে কোচই চালান বলে কৃতিত্বটাও তাঁর নামেই।

Also Read: আলোনসো ও লেভারকুসেন ‘অমরত্ব’কে যেভাবে আলিঙ্গন করল

ইউনাইটেডের ফার্গি টাইমের আদলে লেভারকুসেনে চলছে আলোনসো টাইম। রোববার রাতের ডর্টমুন্ড ম্যাচসহ মৌসুমে ছয়টি ম্যাচে যোগ করা সময়ের গোলে পয়েন্ট পেয়েছে লেভারকুসেন। ইউরোপা লিগে সংখ্যাটা ৩, জার্মান কাপে ১। এর মধ্যে আছে লিগে ৩০ মার্চ হফেনহাইমের কাছে ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা থেকে ৮৮ ও ৯১ মিনিটের গোলে ২-১, ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইডেনহামের সঙ্গে ১-১ সমতা থেকে ৯২ মিনিটের গোলে ২-১, ২০ জানুয়ারি লাইপজিগের সঙ্গে ২-২ সমতা থেকে ৯১ মিনিটের গোলে ৩-২, ১৩ জানুয়ারি অগসবুর্গের সঙ্গে ০-০ থেকে ৯৪ মিনিটের গোলে ১-০ এবং ১৫ সেপ্টেম্বর বায়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে ২-১ পিছিয়ে থাকা থেকে ৯৪ মিনিটের গোলে ২-২। সঙ্গে যোগ করে নেওয়া যেতে পারে ২১ অক্টোবর ভলফসবুর্গের সঙ্গে ১-১ সমতা থেকে ৮৬ মিনিটে ২-১ গোলের জয়টিও।

লেভারকুসেন সমর্থকদের কাছে জাবি আলোনসোর মর্যাদা ‘কিং’য়ের

শুধু বুন্দেসলিগাই নয়, জার্মান কাপ আর ইউরোপা লিগেও আছে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ৬ ফেব্রুয়ারি জার্মান কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে স্টুটগার্টের বিপক্ষে ৮৯ মিনিট পর্যন্ত ২-২ সমতায় ছিল লেভারকুসেন। জোনাথন টাহ ৯০তম মিনিটে গোল করে ৩-২ ব্যবধানে দলকে নিয়ে যান সেমিফাইনালে।

Also Read: লেভারকুসেন: ফুটবল মাঠে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে যারা

ইউরোপা লিগে ‘আলোনসো টাইম’ দেখা গেছে চারবার। গ্রুপ পর্বে কারাবাগের মাঠে ১-০ ব্যবধানের গোলটি এসেছে ৯৪তম মিনিটে। একই দলের বিপক্ষে শেষ ষোলোর প্রথম লেগে লেভারকুসেন ৯১ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে ছিল ২-১ ব্যবধানে। ৯২তম মিনিটে গোল করে হার এড়ায় আলানসোর দল। পরের লেগেও প্রায় একই ঘটনা। এবার ৯৭তম মিনিটে ম্যাচ ছিল ২-২ সমতায়। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৪ সমতা থাকায় ম্যাচ গড়াচ্ছিল অতিরিক্ত সময়ের দিকে। কিন্তু ৯৮ মিনিটে প্যাট্রিক শিকের গোলে জয় নিশ্চিত করে ফেলে লেভারকুসেন।

লেভারকুসেনের বে অ্যারেনায় বুন্দেসলিগা জয়ের উৎসব

একই টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগ ছিল ১৮ এপ্রিল। ওয়েস্ট হামের বিপক্ষে এই ম্যাচে ৮৮ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে পিছিয়ে ছিল আলোনসোর দল। আগের লেগ ২-০ গোলে জেতায় এই লেগে ১ গোল ব্যবধানে হারলেও সেমিফাইনালে ওঠা আটকাত না লেভারকুসেনের। কিন্তু মৌসুমজুড়ে অপরাজিত থাকার রেকর্ডে ঠিকই ছেদ পড়ত। কিন্তু জেরেমি ফ্রিমপং ৮৯তম মিনিটে গোল করে ম্যাচ ১-১ করে ফেলেন।

পুরো মৌসুমে এভাবে একের পর এক ম্যাচে লেভারকুসেনের শেষ মুহূর্তের গোলে উদ্ধার হয়ে যাওয়াটা অনেকের কাছে কাকতালীয় মনে হতে পারে। তবে কোচ আলোনসোর মতে এটি সামর্থ্যের প্রকাশ, ‘ব্যাপারটা এতবার ঘটেছে যে সব সময় ভাগ্য সহায়তা করেছে বলা যায় না। সম্ভবত এটা আমাদের প্রাপ্যই ছিল। আমাদের পরিষ্কার পরিকল্পনা ছিল, কোথায় কখন কী করতে হবে।’

Also Read: জাবিবল—ফুটবলের কৌশলে জাবি আলোনসোর নতুন রোমাঞ্চ