Thank you for trying Sticky AMP!!

একাডেমি কাপ অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড় ছিল মহিম

একাডেমি কাপের বড় ‘উপহার’ মহিম

মা রোজিনা বেগম একেবারেই পছন্দ করেন না ছেলে ফুটবল খেলুক। কিন্তু ছেলে স্কুলের সময়টুকু ছাড়া বাকিটা সময় বল নিয়েই পড়ে থাকে। খেলাটা যে তার খুব প্রিয়। টেলিভিশনের পর্দায় দুনিয়ার বড় বড় তারকাকে দেখে তারও ইচ্ছা হয় বড় স্টেডিয়ামে, অনেক দর্শকের সামনে সে খেলবে। সবাই তার খেলা দেখে তাকে খুব ভালোবাসবে। কিন্তু ফুটবল খেলার জন্য তাকে প্রায়ই খেতে হয় মায়ের বকুনি!

একটা ভরসার জায়গা অবশ্য তার আছে। বাবা সাব মিয়া। তিনি অবশ্য এখানে থাকেন না। কাতারে থাকেন। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠান। সেই টাকা আর কিছু ধানের জমিকে সম্বল করে চলে রোজিনা বেগমের সংসার। বাবা চান ছেলে ফুটবল খেলুক, অনেক বড় খেলোয়াড় হোক। খেলুক বাংলাদেশের জার্সি পরে। কাতার থেকে প্রায়ই ছেলের জন্য আসে বুট-জার্সিসহ বিভিন্ন ফুটবল সরঞ্জাম। সীমিত আয়ের সংসারে সেটিই ছেলের ফুটবলার হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখার অবলম্বন।

মোহাম্মদ মহিম, ১৫ বছরের একটি ছেলে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ কিন্ডারগার্টেনের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে সে। ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন সত্যি করার প্রথম ধাপে দাঁড়িয়ে। ১৬৮টি দল নিয়ে গত ডিসেম্বরে যে একাডেমি কাপ অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্ট মাঠে গড়িয়েছিল, সেই টুর্নামেন্টে আশুগঞ্জের ফিরোজ কামাল ফুটবল একাডেমির হয়ে দুর্দান্ত খেলেছে মহিম। ৮ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছে, হয়েছে সেরা খেলোয়াড়। তার একাডেমিও জিতেছে শিরোপা। ফাইনালে চট্টগ্রামের রামপুর ফুটবল একাডেমির বিপক্ষে ১টি গোলও করেছে সে। শুধু তা-ই নয়, একাডেমি কাপের সেরা ফুটবলার হিসেবে বাফুফে এলিট একাডেমির ইংলিশ কোচ জেমস পিটার বাটলারেরও নজরে মহিম। এলিট একাডেমিতে এই টুর্নামেন্ট থেকে জায়গা পাওয়া ৪০ প্রতিভাবান ফুটবলারের একজন সে।

একাডেমি কাপের সেরা ফুটবলার হিসেবে বাফুফে এলিট একাডেমির ইংলিশ কোচ জেমস পিটার বাটলারেরও নজরে মহিম

ফাইনালে মহিমের ঝলক মুগ্ধ করেছে মাঠে উপস্থিত সবাইকে। গতি, বলের নিয়ন্ত্রণ—সবকিছু দিয়ে আলাদা করেই নজর কেড়েছে ছেলেটি। লিকলিকে গড়নটাও চোখে পড়ার মতো। অবলীলায় এঁকেবেঁকে এগিয়ে যাওয়ার ধরনটাও। মহিমের কথা, ‘ফুটবল পছন্দ করি বলেই খেলি। ফিরোজ কামাল ফুটবল একাডেমি আমার বাড়ির কাছে। এই পর্যায়ে খেলতে পারার জন্য একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা মোশাররফ হোসেন স্যারের অনেক ভূমিকা। তিনিই আমাকে এই পর্যায়ে এনেছেন।’

Also Read: ২১ ফেব্রুয়ারি আবেগে ভাসায় ভিনদেশী তাঁদেরও

মায়ের বকুনি সত্ত্বেও খেলে গেছে মহিম। সেটি বাবার কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েই, ‘মা পছন্দ করেন না, আমি ফুটবল খেলি। তিনি চান, আমি পড়াশোনা করি, নিয়মিত স্কুলে যাই। আর বড় ভাইকে কৃষিকাজে সহায়তা করি। কিন্তু আমার ফুটবল খেলতেই ভালো লাগে। আমি অনেক বড় ফুটবলার হতে চাই। বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চাই। একাডেমি কাপ দিয়ে অনেক কিছু শিখেছি। এখন এগিয়ে যেতে চাই সামনে। আমাকে আরও অনেক পরিশ্রম করতে হবে। আরও অনেক কিছু শিখতে হবে।’

বাফুফে এলিট একাডেমির ইংলিশ কোচ পিটার বাটলার আশাবাদী মহিমকে নিয়ে, ‘এই টুর্নামেন্টে অনেক প্রতিভাবান ফুটবলারের সন্ধান আমরা পেয়েছি, সংখ্যাটা ৪০। এর মধ্যে সাতজন গোলকিপার। আলাদা করে কাউকে নিয়ে বলা আমার উচিত নয়। সেটি ঠিকও নয়। তবে চ্যাম্পিয়ন দলটির নাম্বার ১০ (মহিম) ছেলেটি অসাধারণ। তবে ওকে আরও অনেক কিছু রপ্ত করতে হবে। ওকে পরিচর্চা ঠিকমতো করলে ভবিষ্যতে সে খুব উঁচু মানের ফুটবলার হতে পারবে বলে আমি মনে করি।’

নিতান্তই শখের কারণে গড়ে ওঠা ফিরোজ কামাল ফুটবল একাডেমিই কাগজে-কলমে এখন বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে ওঠা দেশের সেরা ফুটবল একাডেমি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের এই ফিরোজ কামাল ফুটবল একাডেমি ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে ওঠা। মোশাররফ হোসেন নামের এক আইনজীবী এর প্রতিষ্ঠাতা। নিজের প্রয়াত বাবা ও বড় ভাইয়ের নামে গড়ে তোলা এই একাডেমিতে নিজের পকেটের পয়সা খরচ করেন তিনি দেদার। ফুটবল অন্তঃপ্রাণ এই মানুষটি নিতান্তই শখের বশে গড়ে তুলেছেন যে একাডেমি, সেটি দিয়ে দেশের ফুটবলের সেবা করতে চান। সেই সঙ্গে উৎসাহ পান ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে উঠে আসা জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার সাইফুর রহমানসহ আরও কয়েকজন জাতীয় পর্যায়ের ফুটবলারের কাছ থেকে। স্থানীয় প্রতিভাদের বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেন নিজের একাডেমিতে। এতে তাঁর আর্থিক কোনো লাভ নেই, তবে আছে অপার তৃপ্তি, ‘আমি ফুটবল খেলাটা খুব ভালোবাসি। সে জন্যই নিজে একটা একাডেমি গড়েছি। আমি দেশকে কিছু প্রতিভাবান ফুটবলার উপহার দিতে চাই।’

Also Read: ফিলিস্তিন ম্যাচের আগে জোড়া চোটে বাংলাদেশ

মোশাররফ হোসেন বলে যান, ‘আমার একাডেমিতে যারা খেলছে, এরা প্রায় সবাই গরিব ঘরের ছেলে। কিন্তু ওদের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন আছে। দেখি সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারি কি না।’

নিতান্তই শখের কারণে গড়ে ওঠা ফিরোজ কামাল ফুটবল একাডেমিই কাগজে-কলমে এখন বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে ওঠা দেশের সেরা ফুটবল একাডেমি। ১৬৮টি একাডেমির মধ্যে শিরোপাটা নিজেদের করে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই ফুটবল প্রশিক্ষণকেন্দ্রটি অনেক কিছুই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, ইচ্ছাশক্তি আর লক্ষ্যে সৎ থাকলে অনেক কিছুই করা যায়। অনেক স্বপ্নই বাস্তবায়ন করা যায়।

দেশকে ফুটবলার উপহার দিতে চান মোশাররফ। একাডেমি কাপের সেরা ফুটবলার মহিম হতে পারে তেমনই এক বড় উপহার।