২১ ফেব্রুয়ারি আবেগে ভাসায় ভিনদেশী তাঁদেরও

ভাষার জন্য বাংলাদেশের মানুষের জীবন দেওয়ার ইতিহাসটা জানেন ফুটবলের বিদেশিরাওছবি: বাফুফে

বসুন্ধরা কিংসের ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার মিগুয়েল ফেরেইরা এক শব্দও ইংরেজি বলতে পারেন না। খুব বেশি যে বুঝতে পারেন, তা–ও নয়। একই ব্যাপার মোহামেডানের উজবেক মিডফিল্ডার মোজাফফরভেরও। তাঁর ইংরেজির অবস্থা আরও করুণ। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হয় গুগল ট্রান্সলেটারের সাহায্য নিয়ে। বাংলাদেশে ফুটবল খেলতে আসা অনেক বিদেশি খেলোয়াড় ইংরেজি প্রায় জানেন–ই না। তবে ফুটবলের ভাষাটা একই বলে দেশি ফুটবলারদের মাঠে অন্তত ভাব বিনিময়ে কোনো সমস্যা হয় না তাঁদের সঙ্গে।

বসুন্ধরা কিংসের কোচ অস্কার ব্রুজোনের মতে, ‘ফুটবলের ভাষা খুবই শক্তিশালী। এ ভাষাই মাঠে ফুটবলারদের একে অন্যের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের সহায়ক। এই যে আমাদের মিগুয়েল, রবসন, দরিয়েলতন কিংবা গফুরভ, বাবুরবেক—এদের কারোই ইংরেজিতে খুব একটা দখল নেই। তবুও তাদের কোনো সমস্যা হয় না মাঠে।’

জার্সিতে বাংলায় নাম, নম্বর লিখে, বুকে শহীদ মিনার এঁকে ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে কিংস
ছবি: বাফুফে

আজ ২১ ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরদের স্মরণ করার দিন। মহান ২১ ফেব্রুয়ারি এখন সারা দুনিয়ার সব ভাষাভাষীর দিন—আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

দিনটার আবেগ ছুঁয়ে যায় বাংলাদেশে খেলতে আসা ফুটবলার বা কোচদেরও। ব্রুজোন যেমন বলেছেন, ‘এই দিনটির মর্যাদা বাংলাদেশের মানুষের কাছে কতটুকু, সেটি আমরাও জানি। এই দেশে আছি বেশ কয়েক বছর হয়ে গেছে। দিনটা বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে। এদিনের তাৎপর্য জেনে আপ্লুত হই বারবার।’

ব্রুজোনের মতে ২১ ফেব্রুয়ারির সঙ্গে মিশে আছে বাংলাদেশের অস্তিত্ব
ছবি: প্রথম আলো

গত শুক্রবার প্রিমিয়ার লিগে কিংসের খেলা ছিল রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির সঙ্গে। সে ম্যাচে নিজেদের জার্সিতে খেলোয়াড়ের নাম, নাম্বার এমনকি পৃষ্ঠপোষকের নামও বাংলায় লিখে দর্শকদের চমকে দেয় কিংস। জার্সির সামনে ছিল মহান একুশের চেতনার সবচেয়ে বড় প্রতীক শহীদ মিনারের ছবি। বিশেষ এই জার্সি প্রসঙ্গে ব্রুজোন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। এমন ঘটনা পৃথিবীতে খুব বেশি নেই। এমন কিছুকে স্মরণ করার অংশ হতে পেরে সবাই আপ্লুত।’

কিংসের উজবেক ফুটবলার আশরোর গফুরভ একুশে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস স্মরণ করলেন শ্রদ্ধার সঙ্গে, ‘আমি জানি ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বিশেষ একটা দিন। ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন এ দেশের মানুষ। সেদিন জার্সিতে বাংলায় লেখা নাম্বার, নাম ইত্যাদি ছিল। জার্সির পেছনে বাংলা ভাষায় নিজের নাম দেখে অন্য রকম লাগছিল।’

ফুটবলই বাংলা ভাষাটাকে পরিচিত করেছে ভিনদেশীদের কাছে
ছবি: বাফুফে

উজবেকিস্তান থেকে এসেছেন বলেই হয়তো বাংলাদেশের অনেক সংস্কৃতি একেবারে নতুন মনে হয় না তাঁর কাছে, ‘উজবেকিস্তানেও আমরা একে অন্যকে দেখলে “আসসালামু আলাইকুম” বলি, ওখানেও আমরা “আল্লাহ হাফেজ” বলি, বাংলাদেশেও সবাই তা–ই বলে। অনেক মিল আছে।’

কিংসের আরেক বিদেশি আইভরি কোস্টের ফুটবলার চার্লস দিদিয়ের তো বাংলা বলেই চমকে দিলেন সবাইকে, ‘আপনারা সবাই কেমন আছেন?’ এ দেশে খেলতে এসে টুকটাক বাংলা শব্দ শিখে গেছেন। মাঝেমধ্যে প্রয়োগও করেন। মাঠে ব্যবহার করা কয়েকটি শব্দও উচ্চারণ করে শোনালেন তিনি, ‘মাঠে বাংলাদেশের ফুটবলাররা যখন বলে, “এদিকে দাও”, তখন বুঝি বল চাচ্ছে ওরা। অনেক বাংলা শব্দ জানি, “মামা”, “শাবাশ”।’

ফুটবলও তাহলে পারছে বাংলা ভাষাটাকে কিছুটা হলেও ছড়িয়ে দিতে।