Thank you for trying Sticky AMP!!

আফ্রিকা কাপ অব নেশনস ও এএফসি এশিয়ান কাপে সালাহ মিসরের এবং সন দক্ষিণ কোরিয়ার হয়ে খেলবেন। অন্তত এক মাস তাঁদের ক্লাব লিভারপুল ও টটেনহাম এ দুজনকে পাবে না

খেলা আফ্রিকা–এশিয়ায়, ধাক্কা ইউরোপে

ক্লাব ফুটবলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সূচি এড়াতে ইউরোর সময়ে কোপা আমেরিকা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবল। ২০২১ সাল থেকে ইউরো ও কোপা আমেরিকা একই বছরে প্রায় একই সময়ে হয়ে আসছে। ২০২৪ সালেও তা–ই হবে। জার্মানিতে ইউরো আগামী বছরের ১৪ জুন শুরু হয়ে শেষ হবে ১৪ জুলাই। আর যুক্তরাষ্ট্রে কোপা আমেরিকা শুরু হবে ২০ জুন, শেষ হবে ইউরো ফাইনালের দিনেই। অর্থাৎ ১৪ জুলাই।

ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের পুরোনো মৌসুম শেষে আর নতুন মৌসুম শুরুর আগে ইউরো আর কোপা আমেরিকা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হওয়ায় খেলোয়াড় ধরে রাখা–ছেড়ে দেওয়া নিয়ে ক্লাবগুলোর সঙ্গে জাতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কোনো রকম তর্কে জড়াতে হয় না। কিন্তু বিপত্তি বাধছে আগামী বছর আরও দুটি আন্তর্জাতিক মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট ঘিরে।

জানুয়ারিতেই শুরু হতে যাচ্ছে আফ্রিকা কাপ অব নেশনস ও এএফসি এশিয়ান কাপ। আইভরি কোস্ট ও কাতারে এ দুটি আসর চলবে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত। আর এই দুই টুর্নামেন্টের জন্য ক্লাবগুলোকে আফ্রিকান ও এশিয়ান খেলোয়াড়দের অন্তত এক মাসের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। যে দলগুলো আফ্রিকা কাপ অব নেশনস ও এএফসি এশিয়ান কাপের সেমিফাইনালে উঠবে, সেসব দলের খেলোয়াড়কে পেতে ক্লাবগুলোকে অপেক্ষা করতে হবে প্রায় দেড় মাস।

আগামী বছর চারটি মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে দুটি টুর্নামেন্ট ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের জন্য বড়সড় ধাক্কা হয়ে আসছে

আফ্রিকা কাপ অব নেশনস ও এএফসি এশিয়ান কাপও জুন–জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বিরতির সময়েই হওয়ায় কথা ছিল। কিন্তু মহামারি করোনা ও আবহাওয়ার কারণে বছরের শুরুর দিকে হতে চলেছে। এবারের এশিয়ান কাপের আয়োজন স্বত্ব পেয়েছিল করোনার উৎপত্তিস্থল চীন। টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল গত বছরের জুন–জুলাইয়ে। কিন্তু দেশটির সরকারের ‘জিরো কোভিড’ নীতির কারণে টুর্নামেন্ট সরিয়ে নেওয়া হয় কাতারে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে জুন–জুলাইয়ে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠে যায়। এমন অসহনীয় গরম ফুটবল খেলার জন্য অনুকূল নয় বলে টুর্নামেন্ট পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারিতে। একইভাবে জুন–জুলাইয়ে আইভরি কোস্টে গ্রীষ্মকাল হওয়ায় আফ্রিকা কাপ অব নেশনস শীতের সময়ে হতে চলেছে।

সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে ইতালিয়ান সিরি ‘আ’। এই লিগের ৫১ জন খেলোয়াড় ক্লাব ছেড়ে দেশের জন্য লড়বেন। ৫০ জন খেলোয়াড় যাচ্ছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে। জার্মান বুন্দেসলিগার ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৩২ থেকে ৩৫ জন হতে পারে, স্প্যানিশ লা লিগা থেকে ২৯ জন। ফ্রেঞ্চ লিগ আঁর ক্লাবগুলো ছাড়তে চলা আফ্রিকান ও এশিয়ান খেলোয়াড়ের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এ সংখ্যাও ২৫–এর কম নয়।

একই সময়ে ক্লাব ও দেশের খেলা থাকলে কোনো খেলোয়াড় কোন দলের হয়ে খেলবেন, তা পুরোপুরি নির্ভর করে ক্লাবের সিদ্ধান্তের ওপর। ক্লাবগুলো চাইলে খেলোয়াড়দের অনাপত্তিপত্র নাও দিতে পারে। কিন্তু ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর বেশির ভাগ আফ্রিকান ও এশিয়ান খেলোয়াড় মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। ফিফাও খেলোয়াড়দের আগামী ১ জানুয়ারির মধ্যে ছেড়ে দিতে ক্লাবগুলোকে চিঠি দিয়েছে।

এর অর্থ হলো মোহাম্মদ সালাহ, ভিক্টর ওসিমেন, সন হিউং মিনদের মতো তারকা থেকে শুরু করে সোফিয়ান আমরাবাত, আন্দ্রে ওনানা, স্যামুয়েল চুকুয়েজে, কাং ইন লি, ওয়াতারু এন্দো, তাকুমি মিনামিনোর মতো পরিচিত মুখদের অন্তত এক মাস ক্লাবের হয়ে খেলতে দেখা যাবে না। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁরা লড়বেন দেশের হয়ে, মহাদেশীয় শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে।

জাপান এএফসি এশিয়ান কাপের ফাইনালে উঠলে লিভারপুলের হয়ে ১০ ম্যাচ মিস করবেন ওয়াতারু এন্দো

বড়দিন ও নতুন বছর উপলক্ষে ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলে শীতকালীন ছুটি চলছে। ছুটি পেয়েই স্প্যানিশ লা লিগা, জার্মান বুন্দেসলিগা ও ফ্রেঞ্চ লিগ আঁর ক্লাবগুলোর বেশির ভাগ আফ্রিকান ও এশিয়ান খেলোয়াড় দেশে ফিরে জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহ থেকে আবারও এই চার লিগ মাঠে গড়াতে শুরু করলেও দুই মহাদেশের খেলোয়াড়রা ক্লাবে ফিরবেন ফেব্রুয়ারিতে।

Also Read: আফ্রিকার সেরা খেলোয়াড় নাপোলির ওসিমেন

ব্যতিক্রম ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও ইতালিয়ান সিরি ‘আ’। ইংল্যান্ড ও ইতালির শীর্ষ প্রতিযোগিতা এখনো চলছে। তবে এই দুই লিগের ক্লাবগুলোতে থাকা আফ্রিকান ও এশিয়ান ফুটবলাররা আর এক ম্যাচ খেলেই জাতীয় দলে যোগ দেবেন।

সালাহ, ওসিমেন, সনদের অনুপস্থিতি ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলে বড়সড় ধাক্কা হয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ ঘরোয়া লিগ প্রায় দেড় মাসের জন্য খেলোয়াড় হারানোর পাশাপাশি কিছু টিভি দর্শক হারানোরও শঙ্কায় পড়বে।

পরিসংখ্যানবিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়াল্ডোমিটারের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যা ৮১০ কোটি। এর মধ্যে ৫৭৭ কোটি মানুষই বাস করে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে। অর্থাৎ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৭১.২৩ শতাংশ (প্রায় চার ভাগের তিন ভাগ) মানুষের বাস দুই মহাদেশে। এক এশিয়াতেই বাস করে ৪৫৬ কোটি মানুষ। ইউরোপীয় ফুটবলের বাজার বড় করেছে এই মহাদেশের ক্রীড়াপ্রেমীরাই। যুগে যুগে অনেক কিংবদন্তি ফুটবলারের জন্ম দেওয়া আফ্রিকার জনসংখ্যাও নেহাত কম নয়; ১২১ কোটি। আর এই দুটি মহাদেশের ৪৮টি দেশ যখন তাদের সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে সবচেয়ে বড় দুটি মহাদেশীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে, তখন ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের ওপর থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নেবেন।

নাপোলি স্ট্রাইকার ভিক্টর ওসিমেন আফ্রিকা কাপ অব নেশনসে নাইজেরিয়ার হয়ে খেলবেন

ক্লাব ফুটবলে সমর্থক গড়ে ওঠার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের বহু ফুটবলপ্রেমী সেই ইউরোপীয় ক্লাবকেই সমর্থন করেন, যেখানে তাঁর প্রিয় ফুটবলার খেলেন। প্রিয় খেলোয়াড় ক্লাব বদলে ফেললে তিনিও আগের ক্লাবকে সমর্থন করা ছেড়ে দেন। তার মানে, প্রিয় ফুটবলার যেখানে সমর্থকও সেখানে। এই পরিপ্রেক্ষিতে যখন কারও পছন্দের ফুটবলার দেশের হয়ে খেলতে নামবেন, তখন সমর্থকদের পূর্ণ মনোযোগ জাতীয় দলের দিকেই পড়বে। অর্থাৎ আফ্রিকান কাপ অব নেশনস ও এএফসি এশিয়ান কাপে অংশ নিতে চলা দেশগুলোর দিকে চোখ রাখবেন এই দুই মহাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা। অনেক সমর্থক আবার মাঠে গিয়ে নিজ দেশকে সমর্থন জানাতে আয়োজক দেশ আইভরি কোস্ট ও কাতারে যাবেন। তারাও ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের ওপর থেকে মনোযোগ সরিয়ে ফেলবেন।

Also Read: সেনেগালের কোচ যেন ‘চাক দে ইন্ডিয়া’র সেই শাহরুখ খান

আফ্রিকা কাপ অব নেশনস ও এএফসি এশিয়ান কাপের সিংহভাগ খেলাগুলো আবার প্রিমিয়ার লিগ, লা লিগা, বুন্দেসলিগা, সিরি ‘আ’ ও লিগ আঁ ম্যাচের সময়ে। সাংঘর্ষিক বা কাছাকাছি সময়ে ম্যাচ হওয়াতেও ইউরোপীয় লিগগুলো বহু টিভি দর্শক হারাবে।

এ তো গেল মহাদেশীয় প্রেক্ষাপটে ইউরোপের সম্ভাব্য ক্ষতির হিসাব–নিকাশ। ক্লাবভেদে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। কারণ, কিছু আফ্রিকান ও এশিয়ান খেলোয়াড় তাঁর ক্লাবের প্রাণভোমরা, কেউ আবার নির্দিষ্ট পজিশনে দলের প্রথম পছন্দ। উদাহরণ হিসেবে সালাহ ও ওনানার কথা বলা যায়। সালাহ লিভারপুলের অপরিহার্য সদস্য, ওনানা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রধান গোলকিপার। কিন্তু তাঁরা নিজ দেশ মিসর ও ক্যামেরুনের হয়ে আফ্রিকা কাপ অব নেশনসে খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অন্তত এক মাস ক্লাব তাঁদের সেবাবঞ্চিত হবে।

আফ্রিকা কাপ অব নেশনস আয়োজনে প্রস্তুত আইভরি কোস্ট

ডয়েচে ভেলে, গোল ডট কম, ওয়ান ফুটবল, ফুটবল ইতালিয়াসহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, আফ্রিকা কাপ অব নেশনস ও এএফসি এশিয়ান কাপের কারণে খেলোয়াড় ছেড়ে দিতে হওয়ায় বড় ক্ষতির মুখে পড়বে ক্লাবগুলো। সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে ইতালিয়ান সিরি ‘আ’। এই লিগের ৫১ জন খেলোয়াড় ক্লাব ছেড়ে দেশের জন্য লড়বেন। ৫০ জন খেলোয়াড় যাচ্ছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে। জার্মান বুন্দেসলিগার ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৩২ থেকে ৩৫ জন হতে পারে, স্প্যানিশ লা লিগা থেকে ২৯ জন। ফ্রেঞ্চ লিগ আঁর ক্লাবগুলো ছাড়তে চলা আফ্রিকান ও এশিয়ান খেলোয়াড়ের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এ সংখ্যাও ২৫–এর কম নয়।

তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, আফ্রিকা–এশিয়ার ‘পূর্ণতা’ ইউরোপে বিশাল এক শূন্যতা সৃষ্টি করতে যাচ্ছে।