Thank you for trying Sticky AMP!!

খেতাবধারী দাবাড়ু তৈরির উদ্দেশে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা নেই

উদ্যোগ নেই, তবু আশায় ফেডারেশন

১৪ বছর ধরে নতুন কোনো গ্র্যান্ডমাস্টার পাচ্ছে না বাংলাদেশ। সম্ভাবনার খেলা দাবায় কেন এই স্থবিরতা? উত্তর খুঁজেছেন মাসুদ আলম—

বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন বিভিন্ন ঘরোয়া টুর্নামেন্ট করছে। তারপরও খেতাবধারী দাবাড়ু কেন আসছে না? দাবার এই পরিণতির জন্য অতীতের এক কমিটিকে দায়ী করে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবউদ্দিন শামীম বলেন, ‘২০০৮ সালে রাজীব জিএম হওয়ার সময় আইএম হওয়ার জন্য খন্দকার আমিনুল, শেখ পল্লব, শাকিলসহ বেশ কজন ফিদে মাস্টার পাইপলাইনে ছিল। কিন্তু হঠাৎ রাজনৈতিকভাবে মোকাদ্দেস সাহেব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হন। ক্ষতিটা তখনই হলো। দাবা তখন এগিয়ে নেওয়া যায়নি। বিদেশে খেলোয়াড় পাঠানো হতো না।’

শাহাবুদ্দিন শামীম যা নিয়ে অভিযোগ করছেন, সেটা অবশ্য ১৪ বছর আগের কথা। তা ছাড়া ওই সময়ই আবু সুফিয়ান, মিনহাজরা আইএম হয়েছিলেন। এরপর এই ১৪ বছরে কী উন্নতি হলো? সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ফেডারেশনের সভাপতি হয়ে টাকার ব্যবস্থা করেন। তরফদার রুহুল আমিনসহ আরও দু–তিনজন পৃষ্ঠপোষক আসেন দাবায়। তারপরও উন্নতিটা দৃশ্যমান হয়নি কেন? শাহাবুদ্দিন শামীমের ব্যাখ্যা, ‘২০১৬ সালে আমি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর বাচ্চাদের বিদেশ পাঠানো শুরু  করি। ওরা পদক নিয়ে আসে। আমরা আসার পর শিরিন, ফাহাদ আইএম হলো। ফিদে মাস্টার হয়েছে কয়েকজন। এখন আশা করতে পারি, আমরা জিএমও পাব।’

সাধারণ সম্পাদকের দাবি, তাঁরা পুরোপুরি বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে চলেছেন। মুজিব বর্ষে ৩৪টি টুর্নামেন্ট করেছেন। সাইফ পাওয়ারের পৃষ্ঠপোষকতায় আড়াই কোটি টাকার বড় টুর্নামেন্ট হয়েছে। এভাবে চালিয়ে নিতে পারলে জিএম পাওয়া যাবে বলে আশা তাঁর। তবে শর্ত দিচ্ছেন, ‘এই ফাঁকে অভিজ্ঞতাহীন কেউ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক না হয়ে যায়!’

বাবা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ছেলে তাহসিন তাজওয়ারের লড়াই

খেতাবধারী দাবাড়ু তৈরির উদ্দেশে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই কেন, জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখন দাবাড়ুরা যা চায়, তাই পায়। কোথাও যেতে চাইলে আমরা পাঠাই। নিয়মিত সব আয়োজনের সঙ্গে স্কুল দাবা, জেলা লিগ হচ্ছে। চলমান যুব গেমসেও দাবা যোগ করা হয়েছে।’ কিন্তু গত পাঁচ বছরে ফিদের তালিকাভুক্ত টুর্নামেন্ট ছাড়া কেউ ইউরোপে খেলতে যায়নি। শাহাবুদ্দিন শামীম অবশ্য বলেছেন, সামনে ফাহাদ, নওশিন, ওয়ালিজাদের ইউরোপে পাঠাবে ফেডারেশন।

কোচিং প্রোগ্রাম নিয়মিত দরকার। সব জেলায় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ করতে হবে। শুধু দুটি জিএম টুর্নামেন্ট করলেই উন্নতি হবে না। উদীয়মানদের লম্বা সময়ের জন্য ইউরোপে পাঠাতে হবে।
সৈয়দ সুজাউদ্দিন আহমেদ, দাবা ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি

রিফাত, রাকিব ও রাজীব জিএম হওয়ার সময় বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন সৈয়দ সুজাউদ্দিন আহমেদ। জিয়ার সময় তিনি ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। তাঁর সময়ে সাফল্যও এসেছে। এখন কেন আসছে না, তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে সৈয়দ সুজাউদ্দিন বলেন, ‘আমি মনে করি, বর্তমান নেতৃত্ব দাবার উন্নয়নে আন্তরিক। কিন্তু খেলাটা তো জানতে হবে! বুঝতে হবে কার মধ্যে কী আছে। বোঝার ক্ষমতাটা গুরুত্বপূর্ণ এবং নিরপেক্ষতাও। আমার ছেলে খেলে বলে তাকে সুবিধা দেব বা আত্মীয় বলে সুযোগ দেব, তাহলে হবে না।’

Also Read: গ্র্যান্ডমাস্টার নেই ১৪ বছর, অপেক্ষা ফুরাবে কবে

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সভাপতির চেষ্টায় দাবা ফেডারেশন অনেক অর্থ পেয়েছে। সেই অর্থের ব্যবহার সঠিক হতে হবে। কোচিং প্রোগ্রাম নিয়মিত দরকার। সব জেলায় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ করতে হবে। শুধু দুটি জিএম টুর্নামেন্ট করলেই উন্নতি হবে না। উদীয়মানদের লম্বা সময়ের জন্য ইউরোপে পাঠাতে হবে।’

কী পেয়েছি, প্রশ্ন রাজীবের

ভারতে গ্র্যান্ডমাস্টার হলে সরকার পাঁচ লাখ রুপি দেয়। রাজ্য সরকার দেয় আরও বেশি অর্থ। গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমরা গ্র্যান্ডমাস্টার হয়ে কী পেয়েছি? আমার সমকালীন ভারতীয় দাবাড়ু জিএন গোপাল, নীলোৎপল দাস, সূর্যশেখর গাঙ্গুলীসহ সবাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। দ্বীপসেন গুপ্ত ইন্ডিয়ান ওয়েলের সঙ্গে যুক্ত আছে। ওরা মাসে এক লাখ রুপি বেতন পায়।’

গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন

এসএ গেমসে সোনা জিতে মাবিয়া আক্তাররা ফ্ল্যাট পেয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের গ্র্যান্ডমাস্টাররা আর্থিক কোনো সুবিধা পাননি। রাজীব দুঃখ করে বলছিলেন, ‘দাবায় কেন আসবে নতুন প্রজন্ম? আমরা জিমএম হয়ে কোনো আর্থিক সুবিধাই পাইনি।

রিফাত ভাই চাকরি করেন একটা প্রতিষ্ঠানে এবং সেটা নিজের যোগ্যতায়। আমি কোনোমতে কোচিং করিয়ে টিকে আছি। এভাবে তো হয় না।’ তরুণ দাবাড়ু ফাহাদের কষ্টও এখানেই, ‘কলকাতায় আইএম হলেই চাকরি পায় দাবাড়ুরা। আমাদের এখানে আইএম হলে কেউ চেনেও না। নেই কোনো আর্থিক সুবিধা।’

Also Read: গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার দৌড়ে এখন শুধু ফাহাদ