Thank you for trying Sticky AMP!!

বক্সিংয়ের লড়াইয়ে সেলিম

দেশকে পদক জেতাতে না পেরে মন খারাপ সেলিমের

বক্সার সেলিম হোসেনের মন বেজায় খারাপ। দেশকে একটা পদক এনে দিতে পারলেন না! হাংজু এশিয়ান গেমসে গতকাল ৫৭ কেজি ওজন শ্রেণির কোয়ার্টার ফাইনালে সেলিম হেরে গেছেন জাপানি বক্সার শুদাই হারাদার কাছে। ম্যাচটা জিততে পারলে সেলিম সেমিফাইনালে উঠে যেতেন। ঝাঁপাতে পারতেন আরও বড় স্বপ্নের লক্ষ্যে। বাংলাদেশের জন্য নিশ্চিত হতো অন্তত একটা ব্রোঞ্জপদক।

১৯৮৬ সালের সিউল এশিয়াডে বক্সার মোশাররফ হোসেন লাইট হেভিওয়েট বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। এশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসরে সেটিই বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তিগত পদক। এরপর এশিয়াডে বাংলাদেশ আরও পদক জিতেছে, সোনার পদকও জিতেছে, কিন্তু সবই দলীয় খেলায়। ৩৭ বছর পর ব্যক্তিগত একটা পদকের হাতছানি ছিল বাংলাদেশের সামনে। সেনাবাহিনীর বক্সার সেলিমই সেই স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে। জাপানি প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়াইটা করেছেন ঠিকই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জেতা হয়নি।

Also Read: লড়েও পদক জেতা হলো না সেলিমের

সেলিম প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলেন শ্রীলঙ্কান প্রতিযোগীকে হারিয়ে। প্রি-কোয়ার্টারের লড়াইটা ছিল আরও কঠিন। সেখানে তাজিকিস্তানের বক্সারকে নকআউট করেই শেষ আটে উঠেছিলেন সেলিম। তাজিকিস্তানের বক্সারকে নকআউট করার পর পদক জয়ের প্রত্যাশাও বাড়ে। কিন্তু জাপানি প্রতিদ্বন্দ্বী হারাদা ছিলেন আরও শক্ত প্রতিপক্ষ। ম্যাচে পাঁচ বিচারকের প্রত্যেকেই তিন রাউন্ডে সেলিমকে দিয়েছেন ১০–এ ৯। হারাদাকে ১০–এ ১০। শেষ পর্যন্ত ৫ বিচারকের প্রত্যেকে হারাদাকে বেশি নম্বর দেওয়ায় তিনি জিতেছেন ৫-০ ব্যবধানে।

সেলিম আজ প্রথম আলোকে জাপানি প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন, ‘জাপানি প্রতিপক্ষের সঙ্গে আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে লড়েছি। রিংয়ে নেমেই বুঝলাম, সে আমার শক্তি-দুর্বলতা সম্পর্কে শতভাগ ধারণা রাখে। জাপানের মতো দেশ বক্সিংয়েও প্রযুক্তির ব্যবহার করে। প্রথম রাউন্ডে আমার মধ্যে একটু জড়তা ছিল। কিন্তু পরের দুই রাউন্ডে আমি পাল্টা লড়াই করেছি। ক্লোজ ফাইট ছিল। বিচারকদের বিচারই চূড়ান্ত। আমি মেনে নিয়েছি। তবে মন খারাপ হচ্ছে, দেশকে পদক জেতাতে পারলাম না।’

চেষ্টা করেও দেশকে পদক জেতাতে পারেননি সেলিম

এশিয়াডে এবার বাংলাদেশ থেকে তিনজন প্রতিযোগী অংশ নিয়েছিলেন। ৫১ কেজি ওজন শ্রেণিতে ছিলেন আনসারের আবু তালহা। তিনি প্রথম রাউন্ডে ‘বাই’ পাওয়ার পর প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে হারেন সৌদি আরবের প্রতিযোগীর সঙ্গে। তালহাও লড়াই করেছিলেন সাধ্যমতো। তিন রাউন্ড শেষে বিচারকদের রায় গেছে সৌদি প্রতিপক্ষের দিকেই। সেলিম, তালহার সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জিন্নাত ফেরদৌস। তিনি মেয়েদের ৫০ কেজি ওজন শ্রেণিতে প্রথম রাউন্ডে ‘বাই’ পাওয়ার পর প্রি-কোয়ার্টারে হেরে যান মঙ্গোলিয়ার বক্সারের বিপক্ষে।

Also Read: পদকের কাছাকাছি বক্সার সেলিম

বাংলাদেশের বক্সাররা এশিয়াডে অংশ নিয়েছিলেন চার মাস অনুশীলন করে। সময়টা যথেষ্ট নয়, তা স্বীকার করেছেন সেলিম নিজেই, ‘আরও বেশি সময় ধরে অনুশীলন করতে পারলে খুব ভালো হতো। কিন্তু বক্সিং ফেডারেশন সাধ্যমতো আমাদের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এ নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। তবে আমরা চাই, বাংলাদেশের বক্সাররা যেন আরও বেশি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। একটু পরিকল্পনা সাজিয়ে প্রস্তুতি নিলে আমরা ভালো করব। আগামী এসএ গেমস কিংবা এশিয়ান গেমসের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। এ জন্য করপোরেট হাউসগুলো যদি ফেডারেশনের দিকে পৃষ্ঠপোষকতার হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে খুব ভালো হয়।’

জাপানি বক্সারের মুখোমুখি সেলিম

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ল্যান্স কর্পোরাল পদে চাকরি করেন সেলিম। এশিয়াড থেকে দেশে ফিরবেন আগামীকাল। এরপরই তাঁকে সেনা উর্দি পরে উড়াল দিতে হবে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে। কঙ্গোতে এক বছরের সেই শান্তি মিশন। তবে কি এই এক বছর সেলিম বক্সিং রিংয়ে নামতে পারবেন না?

সেলিম অবশ্য আশাবাদী, ‘সেনাবাহিনী আমাকে সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি কর্তৃপক্ষকে বলব, আগামী এসএ গেমসে যেন আমি দেশের হয়ে খেলতে পারি। এশিয়াডের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে দেশের জন্য সাফল্য এনে দিতে চাই।’

২০২৬ সালে পরবর্তী এশিয়াডেও খেলতে চান ৩১ বছর বয়সী সেলিম, ‘তখন আমার বয়স আরও তিন বছর বাড়বে। আমি আশাবাদী। তবে সবকিছু নির্ভর করছে শারীরিক অবস্থার ওপর। আল্লাহ যদি চান, আগামী এশিয়ান গেমসেও আমি খেলতে চাই।’