Thank you for trying Sticky AMP!!

দলবদল করার আগে হকি স্টেডিয়ামের টার্ফে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান আবাহনীর খেলোয়াড়েরা

হকি স্টেডিয়ামে কিছুটা প্রাণের ছোঁয়া, দলবদলে সবার আগে আবাহনী

গুলিস্তানের ব্যস্ততম সড়কে সারা বছর প্রায় নিথরই পড়ে থাকে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম। দেখে মনে হয় যেন ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু আজ পড়ন্ত বিকেলে সেই স্টেডিয়ামই কিছুটা জেগে উঠেছিল। প্রায় ২৮ মাস পর প্রিমিয়ার হকি লিগের দলবদল উপলক্ষে প্রাণচাঞ্চল্য স্টেডিয়ামে। গতকাল দলবদল শুরু হলেও আজ প্রথম কোনো দল হিসেবে আবাহনী লিমিটেড এসেছে খেলোয়াড় নিবন্ধন করতে।  

এবার সবার আগে ঘর গুছিয়েছে আবাহনী। আনুষ্ঠানিকতায়ও সবার আগে তারা। আকাশি–নীলেরা কাদের নিয়ে নতুন দল গড়ছে, তা জানা গিয়েছিল আগেই। খেলোয়াড়দের টোকেন তুলে আগেই নিজেদের কাছে নিয়ে নেন ক্লাব কর্মকর্তারা। সেই অনুযায়ীই আজ সব হয়েছে। আজ ১৫ জন খেলোয়াড়ের নিবন্ধন করেছে আকাশি-নীলেরা। ধানমন্ডির ক্লাব ভবন থেকে বাসে করে আবাহনী তাদের খেলোয়াড়দের নিয়ে আসে হকি স্টেডিয়ামে।

Also Read: ১০ লাখ টাকা পেয়েই আশরাফুল অনেক খুশি

যানজট পেরিয়ে আবাহনীর বাস স্টেডিয়ামে আসতেই স্লোগান ওঠে ‘আবাহনী’, ‘আবাহনী’। বহুদিন পর এমন স্লোগান উঠল প্রাণহীন হকি স্টেডিয়ামে। এবার নতুন দল নিয়ে আবাহনীর আগ্রহটা বেশি, কারণ ১০ বছর তারা লিগ শিরোপা জিততে পারেনি। সর্বশেষ ২০১৪ লিগে ঊষার সঙ্গে যৌথভাবে লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল । ২০১৬ লিগ পেয়েছে মেরিনার্স, রানার্সআপ ঊষা। ২০১৮ ও ২০২১ লিগ গেছে যথাক্রমে মোহামেডান ও মেরিনার্সের ঘরে। এই দুবারই আবাহনী রানার্সআপ।

শিরোপা ফিরে পেতে নতুন মৌসুমের জন্য আবাহনী নিয়েছে জাতীয় দলের ১০ জন খেলোয়াড়—ফরহাদ আহমেদ, রোমান সরকার, রেজাউল করিম, রাকিবুল হাসান, পুষ্কর খীসা, মেহেদি হাসান, নাইম উদ্দিন, হুজাইফা হোসেন, আশরাফুল ইসলাম ও গোলকিপার বিপ্লব কুজুরকে। এ ছাড়া দলে নিয়েছে মেহরাব হোসেন, আমান শরিফ, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, সজীবুর রহমান ও ওবায়দুল হোসেনকে।

ফেডারেশনে দলবদল সম্পন্ন করেন আবাহনীর খেলোয়াড়েরা

আবাহনীর একটাই অতৃপ্তি, চেষ্টা করেও তারা গত লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা মিডফিল্ডার সোহানুর রহমানকে মেরিনার্স থেকে নিতে পারেনি। সোহানুর শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন মেরিনার্সেই রয়ে গেছেন। তাঁকে ছিনিয়ে নিতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে আবাহনীর এক কর্মকর্তা বলছিলেন, ‘সে হয়তো ভেবেছে আবাহনীতে এলে পিসিতে ড্র্যাগ ফ্লিক নিতে পারবে না, কারণ আবাহনী এবার মোহামেডান থেকে আশরাফুলকে নিয়েছে। কেউ ওকে এমন কানপড়া দিয়েছে। অথচ ওর জন্যই ফরোয়ার্ড আরশাদকে এবার আমরা ছেড়ে দিয়েছি। সোহানুর এলে পরিপূর্ণ হতো আমাদের পরিকল্পনা।’

দলবদলকক্ষে যাওয়ার আগে স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আবাহনীর খেলোয়াড়-কোচরা। সবার মুখেই থাকল শিরোপা পুনরুদ্ধারের প্রতিজ্ঞা। কোচ হেদায়তুল ইসলাম যেমন বললেন, ‘আমাদের দলটা সব দিক থেকেই ভালো। লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া।’

Also Read: অবশেষে প্রিমিয়ার হকিতে দলবদলের ঘণ্টা, ঘর গুছিয়ে ফেলেছে আবাহনী

গত লিগে রানার্সআপ আবাহনীর কোচ ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক এই খেলোয়াড়। গতবারের ঘাটতি এবার পূরণ করা হয়েছে বলেই বিশ্বাস হেদায়তুলের, ‘গতবার যে সমস্যা ছিল, এবার সেটা যেন না হয়, তার জন্য আমরা বেশ কিছু খেলোয়াড় বদল করেছি। তরুণ ও সিনিয়র মিলিয়ে দল গড়েছি।’

আবাহনীর রক্ষণে এবার জাতীয় দলের চার ডিফেন্ডার—আশরাফুল ইসলাম, ফরহাদ আহমেদ, মেহেদী ও রেজাউল করিম। তবে দেশি খেলোয়াড়ের দিক থেকে রক্ষণসহ তিন বিভাগই ভারসাম্যপূর্ণ দল হয়েছে মনে করেন কোচ। ২০১৪ থেকে টানা আবাহনীতে খেলা রোমান সরকারও সুর মেলালেন কোচের সঙ্গে, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো খেলোয়াড়েরা আবাহনীতে আছে। নাম অনুযায়ী সবাই খেলতে পারলে ভালো ফল করব, আশা করি।’

গত কয়েক মৌসুমে আবাহনী ভালো দল গড়েও কেন লিগ জিততে পারেনি, সেই ব্যাখ্যাও আছে রোমানের কাছে, ‘চ্যাম্পিয়ন হওয়া আসলে ভাগ্যের ব্যাপার। ভালো টিম, কিন্তু মাঠে ভালো খেলতে পারছেন না, তাহলে হবে না। গত কয়েক মৌসুমে আমরা হয়তো মাঠে ভালো খেলতে পারিনি।’

আবাহনী এবার সবার আগে ঘর গুছিয়েছে

অনেক দিন পর দলবদল। আর্থিক প্রাপ্তি নিয়ে অখুশি নন রোমান, ‘ক্লাবের কাছে যা চেয়েছি, তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে তারা। আবাহনী অন্তত খেলোয়াড়দের নিরাশ করেনি।’ এবারের লিগে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পারিশ্রমিকে আবাহনীতে এসেছেন আশরাফুল। আবাহনী শীর্ষ খেলোয়াড়দের ৫ লাখের ওপরে দিয়েছে বলে জানা গেছে। পারিশ্রমিক নিয়ে রোমান বললেন, ‘চাহিদার তো আসলে শেষ নেই। জীবনে বেঁচে থাকতে চাহিদার শেষ নেই। তবে হকির দলবদলে এটা বাড়া উচিত।’

২০১৪ ও ২০১৮ লিগে আবাহনীতে খেলেছেন। ২০২১ সালে মোহামেডানে খেলে আবাহনীতে ফেরা আশরাফুল বেশ খুশি। গত তিনটি লিগে শিরোপাহীন আবাহনীকে লিগ জেতানোর চ্যালেঞ্জটা অন্যদের সঙ্গে নিয়েছেন তিনিও, ‘আমি আমার জায়গা থেকে খেলতে পারলে এবং অন্যরাও সেরাটা দিতে পারলে আবাহনী এবার শিরোপা জিতবে, আশা করি।’

Also Read: ব্যর্থতার অন্ধকারে ইমরানুর–আলো