Thank you for trying Sticky AMP!!

এবার তাহলে যাওয়ার সময় হলো, রজার!

আরেকজন ফেদেরার কি আর আসবে কোনো দিন!

অস্তরাগের আভা ছড়িয়ে পড়েছিল অনেক দিনই, একটু কান পাতলেই শোনা যাচ্ছিল বিদায়ের রাগিণীও। তারপরও ক্ষীণ একটা আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষায় ছিল টেনিস–বিশ্ব—আরেকবার যদি গ্র্যান্ড স্লামে দেখা যায় তাঁকে! বয়সকে নিছকই একটা সংখ্যা বলে প্রমাণ করেছেন তো কতবারই। আরেকটিবার, আরেকটিবার কি পারবেন না?

তা আর পারলেন না। গত ৮ আগস্ট ৪১তম জন্মদিন পালন করেছেন, হাঁটু তো বিদ্রোহ করছে সেই কবে থেকেই। ২০২০ সালে দুটি অস্ত্রোপচারের ধাক্কা সামলেও ফিরেছিলেন আবার। ২০২১ সালে উইম্বলডন কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বিদায় নেওয়ার পর তৃতীয়বারের মতো হাঁটুকে সঁপে দিতে হলো ছুরির নিচে। ফেরার জন্যই তো! কিন্তু হায়!

অপেক্ষার শেষ কিনা ইনস্টাগ্রামে এক আবেগমথিত চিঠিতে! যাতে টেনিস থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়ে দিলেন রজার ফেদেরার। জানিয়ে দিলেন, ৪১ পেরোনো শরীর আর নিতে পারছে না। ২৩ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর লেভার কাপই হবে তাঁর শেষ টুর্নামেন্ট। কিংবদন্তি রড লেভারের নামে যে টুর্নামেন্ট রজার ফেদেরারেই মস্তিষ্কপ্রসূত। গলফে ইউরোপ বনাম আমেরিকা রাইডার কাপের আদলে টেনিসে ইউরোপ বনাম বাকি বিশ্ব।

তাঁরা তিনজন: দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী নোভাক জোকোভিচ ও রাফায়েল নাদালের সঙ্গে রজার ফেদেরার

২০টি গ্র্যান্ড স্লামের মালিক কোনো গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিলেই তা বেশি মানাত। সেই আক্ষেপ থাকবে। তবে তা যখন হলোই না, লেভার কাপকে বিদায়ী টুর্নামেন্ট বানিয়ে ফেলারও ভিন্ন একটা তাৎপর্য খোঁজাই যায়। একই সময়ে যে তিনজনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা টেনিস ইতিহাসের অবিশ্বাস্য এক গল্প হয়ে আছে, সেই ত্রয়ী লেভার কাপে হয়ে যাবেন সতীর্থ। ইউরোপের পাঁচজনের দলে রজার ফেদেরারের সঙ্গে তো রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জোকোভিচও আছেন। কল্পনা করতে দোষ কি, ফেদেরার বিদায় নেবেন তাঁর দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীর কাঁধে চড়ে। গ্র্যান্ড স্লামে কি আর এমন কিছু হতে পারত!

গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা সংখ্যায় বাকি দুজনই ছাড়িয়ে গেছেন তাঁকে। ফেদেরারের ২০ ছুঁয়ে নাদাল চলে গেছেন ২২-এ, জোকোভিচ জিতেছেন ২১টি শিরোপা। তারপরও সর্বকালের সেরার আলোচনা তুলে দেখুন। রজার ফেদেরারের নামটাই হয়তো সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হবে। একসময় তর্কটা ছিল—রড লেভার না রজার ফেদেরার? যেটির রেশ থাকতে থাকতেই আবির্ভাব ওই দুজনের। সংখ্যাই একসময় ফেদেরারের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিয়ে দিত। সেই সংখ্যায় পিছিয়ে পড়ার পরও ফেদেরারই কীভাবে সর্বকালের সেরার তর্কে এগিয়ে?

ফেদেরার যা কিছু করেন, তাতেই একটা পেলব ব্যাপার থাকে

কারণ হয়তো একটাই—টেনিসটা ফেদেরারের মতো করে আর কেউ খেলেছেন বলে মনে হয় না। সবকিছুতেই এমন অনায়াস একটা ভঙ্গি, বলতে পারেন অলস সৌন্দর্য, পাওয়ার টেনিসের যুগে ফেদেরার ছিলেন চোখের জন্য অনাবিল এক প্রশান্তি। ফেদেরার যা কিছু করেন, তাতেই একটা পেলব ব্যাপার থাকে। এমনকি তাঁর ‘এইস’ও যেন মায়াবী! টেনিসে ফেদেরারের মতো আর কাউকে খুঁজে পাই না। তুলনা খুঁজতে হলে অন্য খেলায় যেতে হয়। সেখানে দুজনের কথা বলতে পারি। ক্রিকেটের মার্ক ওয়াহ ও ফুটবলের জিনেদিন জিদান। ফেদেরারের মতোই যাঁদের খেলা সম্পর্কে ‘রেশমি পরশ’, ‘পেলব’, ‘মায়াবী’—এই শব্দগুলো অনায়াসে ব্যবহার করা যায়।

ফেদেরারের ম্যাজিক তো শুধুই খেলায় নয়। এত বছরের ক্যারিয়ার, অথচ বিতর্কের লেশমাত্র নেই। আদর্শ এক স্পোর্টসম্যানের উদাহরণ হিসেবে কাছাকাছি আসতে পারেন এক ক্রিকেটের শচীন টেন্ডুলকার। কে জানে, হয়তো টেন্ডুলকারও নন। টেন্ডুলকারকে ওয়ান-অন-ওয়ান ইন্টারভিউ করেছি, সংবাদ সম্মেলনে থেকেছি অসংখ্যবার। কখনো দেখিনি, একের পর এক সাংবাদিক প্রশ্ন করার আগে বলে নিচ্ছেন, ‘আমি কিন্তু আপনার খুব বড় ভক্ত।’

ছবিতে ফেদেরারের ক্যারিয়ারে ২০টি গ্র্যান্ড স্লাম জয়

Also Read: টেনিস থেকে অবসরের ঘোষণা রজার ফেদেরারের

যা দেখেছি ফেদেরারের সংবাদ সম্মেলনে। সেটিও এমন নয় যে সেই সংবাদ সম্মেলন হচ্ছে বাংলাদেশের মতো টেনিসের তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশে। ফেদেরারকে নিয়ে সাংবাদিকদের মুগ্ধতার এমন অকৃত্রিম প্রকাশ অলিম্পিকের মতো মহাযজ্ঞে। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে সেই সংবাদ সম্মেলন। যেটি শেষ হওয়ার পর ফেদেরার-ভক্ত সাংবাদিকেরা আরও বড় ভক্তে পরিণত। কথাবার্তায় এমন পরিশীলিত, এমনই উপচে পড়া বিনয় যে মানুষ ফেদেরার যেন খেলোয়াড় ফেদেরারকেও হারিয়ে দেন!

আমিও একটা প্রশ্ন করেছিলাম। এমন একটা প্রশ্ন, যেটি ফেদেরারের মতো চ্যাম্পিয়নের অহমে লাগার মতোই। এই অলিম্পিকে সবচেয়ে বড় তারকা কে—উসাইন বোল্ট, মাইকেল ফেল্‌প্‌স না রজার ফেদেরার?

মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়ে ফেদেরার বললেন, ‘নট মি।’

কেন নয়?

‘এখানে আরও কত গ্রেট অলিম্পিয়ান আছেন। কতজন কত পদক জিতেছেন! সবচেয়ে বড় তারকা উসাইন বোল্ট, মাইকেল ফেল্‌প্‌স বা এনবিএর কেউ।’

শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, টেনিসটা খুব ভালো খেলেন, নাম-যশের মূল কারণ এটা হতে পারে; তবে রজার ফেদেরারের মাহাত্ম্য ওতেই শেষ নয়। মানুষটাও একই রকম চ্যাম্পিয়ন। এমন চ্যাম্পিয়ন, যাঁকে ভালো না বেসে কারও উপায় নেই। এমনকি আপনি নাদাল-ভক্ত হলেও!

Also Read: ছবিতে ফেদেরারের ক্যারিয়ারের গল্প