Thank you for trying Sticky AMP!!

নেপালে দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজে দুর্বলতা কোথায়

ইয়েতি এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ গত রোববার নেপালের পোখারায় বিধ্বস্ত হয়

নেপালে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গেল গত রোববার। এই দুর্ঘটনায় আবারও দেশটির উদ্ধারকাজের দুর্বলতা দৃশ্যমান হলো। নেপালের স্থানীয় সংবাদ সংস্থা কাঠমান্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে এসব দুর্বলতাগুলোই চিহ্নিত করা হয়েছে।

ভয়ংকর দুর্ঘটনাটি ঘটে গত রোববার সকালে। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে পোখারায় যাওয়ার পথে পোখারা বিমানবন্দরে সিতি নদীর কাছে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। উড়োজাহাজে আরোহী ছিলেন ৭২ জন। চারজন ছিলেন ক্রু।

কাশকি জেলার প্রধান কর্মকর্তা টেক বাহাদুর কেসি বলেন, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬৯ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার এএনআইয়ের খবরে নেপাল পুলিশের বরাতে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে মোট ৭০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ফলে এখন নিখোঁজ আরোহীর সংখ্যা ২।

Also Read: নেপালে কেন এত বেশি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা

১০ মিনিটের মধ্যে ভিড় জমে যায়

উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে নেপাল পুলিশ, আর্মড পুলিশ ফোর্স (এপিএফ) ও নেপাল আর্মি ঘটনাস্থলে যায়। তবে জরুরি উদ্ধার তৎপরতা চালাতে অত্যাবশ্যকীয় অগ্নিনির্বাপক বাহিনী, পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব ছিল। নিরাপত্তাকর্মীরা যখন অগ্নিকাণ্ডস্থলে যান, তখন স্থানীয় ব্যক্তিদের ভিড় জমে যায়।

ন্যাশনাল সোসাইটি ফর আর্থকোয়েক টেকনোলজির উপনির্বাহী পরিচালক গণেশ কুমার জিমি বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে যত দ্রুত উদ্ধারকারী দল পৌঁছাতে পারবেন, তত বেশি জীবন রক্ষা করার সুযোগ থাকে।

৭২ জন আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হওয়া ইয়েতি এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজটির ধ্বংসস্তুপে উদ্ধার কাজ চলছে

তবে ইয়েতি এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই দুর্ঘটনাস্থলে কয়েক শ মানুষ জড়ো হয়। অনেকেই ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি মুঠোফোনে লাইভ ভিডিও শুরু করেন। অনেকে আবার সেলফি তুলতে শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। তবে তাঁদের মধ্যেও উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া কয়েকজন মানুষ প্রশংসিত হয়েছেন।

উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিকাশ বাসিয়াল নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করেন। সাহসী কাজের জন্য তাঁর প্রশংসা হয়। তবে সবাই বিকাশের মতো ছিলেন না। দুর্ঘটনাস্থলে জড়ো হওয়া অনেক পোখারাবাসীই ছিলেন দর্শকের ভূমিকায়।

Also Read: বাবাকে বলেছিলেন, পোখারা থেকে ফিরে উৎসবে যোগ দেবেন

প্রাথমিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন

জিমি বলছেন, দুর্ঘটনাস্থলে অনেক লোকের ভিড় জমেছিল।  প্রাথমিক প্রশিক্ষণ থাকলে উদ্ধারকাজ সহজ হয়ে যেত। দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজ বিষয়ে কম-বেশি সবাইকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার মত দেন তিনি।  

দুর্ঘটনাস্থলে নিরাপত্তাকর্মীদের পৌঁছানোটাও কঠিন ছিল। আগুন ও ঘন ধোঁয়ার কারণে অনেক কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।

নেপাল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কৃষ্ণ প্রসাদ ভান্ডারি বলেন, দুর্ঘটনাস্থলটি ছিল দুর্গম। এ কারণে উদ্ধার অভিযান কঠিন ছিল। তিনি বলেন, উদ্ধারকারীদের গভীর গিরিখাতে যেতে হয়েছিল। এটি ছিল সময়সাপেক্ষ। শারীরিকভাবেও চ্যালেঞ্জিং। বিশেষজ্ঞরা বলছেন দুর্বল উদ্ধার তৎপরতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে দুর্ঘটনাস্থলে।

ন্যাশনাল সোসাইটি ফর আর্থকোয়েক টেকনোলজির উপনির্বাহী পরিচালক জিমি আরও বলেন, ঘটনাস্থলটি ছিল উঁচু–নিচু, দুর্গম। উদ্ধারকারীরা যদি সময়মতো পৌঁছাতে পারতেন, তাহলে উদ্ধারকাজ আরও ফলপ্রসূ হতো। জিমি আরও বলেন, নেপাল ও নেপালের সেনাবাহিনী, সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী, নেপাল পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী ভালোভাবে প্রশিক্ষিত। তবে দেশটিতে উদ্ধার সরঞ্জামের স্বল্পতা রয়েছে।  

নেপালের সিভিল অ্যাভিয়েশন পরিষদ বলছে, ১৯৫৫ সালের আগস্ট মাসে দেশটিতে প্রথম উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা ঘটে। এরপর একের পর এক উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ৯১৪ জন নিহত হয়েছেন। পোখারাতে গত রোববার ইয়েতি এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনাটি ছিল নেপালের আকাশে ১০৪তম দুর্ঘটনা। হতাহতের সংখ্যার দিক থেকে তৃতীয়।

গত বছরের মে মাসে তারা এয়ারের একটি উড়োজাহাজ পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়। ওই দুর্ঘটনায় পোখারা থেকে জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা জমসন যাওয়ার পথে ২২ আরোহী নিহত হন। বিধ্বস্ত হওয়ার ২০ ঘণ্টা পরে উড়োজাহাজটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Also Read: নেপালে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত: আরও দুজনের খোঁজে উদ্ধারকারীরা

শেরপাদের ভূমিকা

গত বছর মুসতাং জেলায় দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত ছিল পর্বত অভিযানকারী সংস্থা সেভেন সামিট ট্রেকস। তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিনগমা শেরপা এর আগেও বেশ কিছু উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেছেন। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় তিনি উদ্ধারকাজে অংশ নেন। মিনগমা শেরপা বলেন, মুসতাং এলাকায় উদ্ধারকাজ পরিচালনা করতে গিয়ে তাঁরা উদ্ধার অভিযানের সরঞ্জামের ঘাটতি দেখেছেন।

তবে পোখারা মুসাতাংয়ের মতো প্রত্যন্ত এলাকা নয়। নেপাল পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ থুলে রাই বলেন, উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হলে জীবিত থাকার সম্ভাবনা কম। তবে পোখারার দুর্ঘটনা পুরোনো ও নতুন বিমানবন্দরের মাঝামাঝি জায়গায় ঘটেছে। সেখানে সব সময় উদ্ধারকারী দল প্রস্তুত থাকার কথা।

সেভেন সামিট ট্রেকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিনগমা শেরপা বলছেন, গভীর গিরিখাতে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা কঠিন ছিল। তবে নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত পৌঁছাতে পারলে সমন্বিতভাবে উদ্ধারকাজ পরিচালনা সম্ভব ছিল।
শেরপা আরও বলেন, পাহাড়ি এলাকায় বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের খোঁজ পেতে কয়েক ঘণ্টা এমনকি কয়েক দিনও লেগে যেতে পারে। হিমালয় এলাকায় নিরাপত্তাকর্মীরাও উচ্চতার কারণে পর্বতে উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হন। এ কারণে উঁচু পর্বত এলাকায় শেরপারা উদ্ধারকাজে জড়িত হন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেপালে প্রশিক্ষিত উদ্ধারকারী দল থাকলেও উদ্ধার অভিযানের সরঞ্জামের অভাব রয়েছে।

জিমি কাঠমান্ডু পোস্টকে আরও বলেন, উন্নত দেশে এ ধরনের দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়। লাইফ জ্যাকেট, আলো সরবরাহের সরঞ্জাম, নৌকার হুক, মেগাফোন, কাটার জন্য উন্নত যন্ত্রের সহায়তায় উদ্ধার অভিযান সহজে পরিচালনা করা সম্ভব।

স্যাটেলাইটভিত্তিক উদ্ধার অভিযান সরঞ্জাম, নির্দেশক ট্রান্সমিটারের মতো উন্নত সরঞ্জাম থাকলে উদ্ধারকাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়।উদ্ধারকাজ পরিচালনার সময় ধোঁয়া থেকে বাঁচতে উদ্ধারকারীদের জন্য সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম থাকা দরকার বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রধান জেলা কর্মকর্তা টেক বাহাদুর কেসি রাজ্য কর্তৃপক্ষকে উড্ডয়নের আগে ভালোভাবে উড়োজাহাজগুলো পরীক্ষা করে দেখতে আহ্বান জানিয়েছেন।