Thank you for trying Sticky AMP!!

অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানের নামে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন স্থাপনা। গত বুধবার ভারতের নয়াদিল্লির জাহাঙ্গীরপুরী এলাকায়

গব্বর সিং নয়, ভারতের নতুন জুজু বুলডোজার

দিল্লিতে বেআইনি উচ্ছেদ অভিযানের পক্ষে যুক্তি হিসেবে বিজেপি নেতারা যা খাড়া করেছেন, তা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টারই শামিল।

আপনি কি ব্রিটিশ ব্যবসায়ী জোসেফ সিরিল ব্যামফোর্ডের (জেসিবি) নাম শুনেছেন? বাজি ধরে বলা যায়, এই প্রশ্ন শুনে ভারতের ১০০ শতাংশ ‘আম আদমি’ মুখ চাওয়াচাওয়ি করবে। কিন্তু যদি জানতে চাওয়া হয় ‘জেসিবি’ আর্থ মুভার সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে কি না, অধিকাংশই উত্তর দেওয়ার জন্য হাত তুলবে। ভারতে যেভাবে ‘বুলডোজার উপদ্রব’ শুরু হয়েছে, ‘জেসিবি’র তৈরি ‘আর্থ মুভার’ ও বুলডোজার তার নয়া জুজু।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ভারতে এসে গুজরাটের বরোদা জেলার হালোলে স্বদেশীয় ওই শিল্পপতির সংস্থা ‘জেসিবি’র নতুন কারখানার উদ্বোধন করলেন। সেটা করলেন সেই সময়, যখন সারা দেশ ‘বুলডোজার বিতর্ক’ নিয়ে গমগম করছে এবং দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরীর মুসলমানদের দাঙ্গাকারী চিহ্নিত করে ‘শিক্ষা’ দিতে বুলডোজার ব্যবহারে ক্ষিপ্ত সুপ্রিম কোর্ট পৌরসভাকে অভিযান স্থগিত রাখতে বললেন। এই সময় জেসিবির নতুন কারখানার উদ্বোধন ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে ঝড় বয়ে যায়। কিন্তু তাতে কী? বরিস জনসনকে বিচলিত হতে দেখা যায়নি। বরং সংবর্ধনার ঘনঘটায় নিজেকে তিনি শচীন টেন্ডুলকার ও অমিতাভ বচ্চনের মতো ভাগ্যবান মনে করেছেন।

মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের তেমন নতুন নাম ‘বুলডোজার মামা’! বিজেপি নেতাদের বয়ানে যে লড়াই ‘৮০ বনাম ২০ শতাংশের’, সেই লড়াইয়ের যৌথ হাতিয়ার ‘বুলডোজার’ ও নয়া ‘পিটুনি কর’! পান থেকে চুন খসলেই হিন্দি সিনেমা শোল–এর ভিলেন ডাকু গব্বর সিংয়ের ঢঙে শাসক দলের নেতাদের হুমকি শোনা যাচ্ছে আজকাল, ‘চুপ, শান্তিতে থাকো। নইলে বুলডোজার যাবে!

বিতর্কের আঁতুড়ঘর উত্তর প্রদেশ

বুলডোজার বিতর্কের জন্ম উত্তর প্রদেশে। ২০১৭ সালে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর যোগী আদিত্যনাথ সবচেয়ে বেশি নজর দেন আইনশৃঙ্খলার প্রতি। অপরাধজগতের সাঙাতদের শায়েস্তা করতে আইনের চেয়ে তিনি বেশি জোর দেন ‘এনকাউন্টার’ বা বন্দুকবাজির ওপর। তাঁর নির্দেশে জেলায় জেলায় দাগি অপরাধীদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। অমান্যকারীদের অনেকের মৃত্যু হয় বন্দুকবাজিতে। পুলিশি হেফাজতেও মরতে হয় কাউকে কাউকে। ফেরারিদের চাপ দিতে বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে ফেলা হয় ঘরবাড়ি। এতে আপাতদৃষ্টে গোটা রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটলেও, শান্তিপ্রিয় মানুষ স্বস্তির শ্বাস ফেললেও, অপরাধজগতে ভয়ের বাতাবরণ সৃষ্টি হলেও যোগীর এই ‘অসাংবিধানিক দমননীতি’ সংগত কারণেই বিতর্কিত হয়ে ওঠে।

Also Read: বুলডোজার নামল দিল্লিতেও

বিতর্কের কারণ প্রথমত, সরকারি দৃষ্টিতে সরকার চিহ্নিত ৯০ শতাংশ ‘অপরাধী’ মুসলমান। তা ছাড়া অপরাধের মোকাবিলায় পদ্ধতিগত
আইনি পদক্ষেপের বদলে রাষ্ট্রের রাষ্ট্রের খামখেয়ালিপনা প্রাধান্য পাওয়ায় প্রবলভাবে উঠে আসে মানবাধিকারের প্রশ্ন। আইনের শাসনের প্রশ্ন। ব্যক্তি বাহুবলীর জায়গা দখল করে রাষ্ট্র। কিন্তু পরিসংখ্যান সহায়ক হয়ে ওঠে সরকারের। ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর তথ্য জানাচ্ছে, যোগী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর উত্তর প্রদেশে ধর্ষণ ৪৩ শতাংশ, খুন ২৩ ও অপহরণ ১৯ শতাংশ কমে যায়।

নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে ২০২০ সালে রাজ্যের আনাচে–কানাচে ঘটে যায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। সরকারের চোখে অধিকাংশ দাঙ্গার উৎস মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চল। উগ্র হিন্দুত্ববাদী মুখ্যমন্ত্রী দাঙ্গাকারীদের সবক শেখাতে বুলডোজার ব্যবহারের পাশাপাশি ওই বছর চালু করেন ‘কমিউনিটি ফাইন’ আইন। আইনের সারাংশ, দাঙ্গা বা বিক্ষোভের সময় সরকারি–বেসরকারি সম্পত্তি নষ্ট হলে এলাকার চিহ্নিত বা অচিহ্নিত বাসিন্দাদের কাছ থেকে নষ্ট সম্পত্তির অর্থ আদায় করা হবে। ব্রিটিশ আমলের ‘পিটুনি কর’ এমনই ছিল। অশান্তির মোকাবিলায় পুলিশের পিটুনি যেমন খেতে হবে, তেমন সম্পত্তিহানির শাস্তি হিসেবে দিতে হবে জরিমানা। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৩০ সালে মেদিনীপুরে সত্যাগ্রহের সামাল দিতে ইংরেজ শাসক পিটুনি কর প্রয়োগ করেছিল। ওই জেলার দাসপুরের বাসিন্দাদের জরিমানা ধার্য হয়েছিল ৯৬ হাজার টাকা। স্বাধীন ভারতে ১৯৬৪ সালে চব্বিশ পরগনা জেলার ১৪টি থানা এলাকায় অশান্তির পরও পিটুনি কর ধার্য করা হয়েছিল। তাতে জন্ম নিয়েছিল ব্যাপক রাজনৈতিক অসন্তোষ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারও চালু করেছিল পিটুনি কর। বাংলাদেশে না ফিরলেও বিজেপির ‘নতুন ভারতে’ পিটুনি কর নবরূপে আবির্ভূত। দোসর বুলডোজার।

Also Read: পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দিল্লিতে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ

যোগী আদিত্যনাথই তার পথিকৃৎ। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর জরিমানা আদায়ে তাঁর সরকার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। শুধু মুজাফফরনগর জেলায় ৫৩ জন বিক্ষোভকারীকে চিহ্নিত করে ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৩ লাখ টাকা জরিমানা দিতে বলা হয়। রাজ্যের বহু এলাকা থেকে টাকা আদায় হয় দেদার। সেই সঙ্গে সৃষ্টি বিতর্কের। রুজু হয় মামলা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী অটল। উত্তর প্রদেশের দেখাদেখি বিজেপি শাসিত হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশও এই ধরনের আইন চালু করেছে। সাম্প্রতিক কালে রামনবমী ও হনুমানজয়ন্তী উপলক্ষে বিজেপিশাসিত কর্ণাটক, উত্তরাখন্ড, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটে যে দাঙ্গা ঘটে, তার মোকাবিলায় দেদার বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় প্রধানত গরিব মুসলমানের ঘরবাড়ি ও দোকান। জাহাঙ্গীরপুরীতে বুলডোজার–কাণ্ডকে সমর্থন করার পাশাপাশি বিজেপির স্থানীয় নেতারা বাংলাদেশকেও টেনে এনেছেন। বলেছেন, ‘বাংলাদেশি ঘুসপেটিদের (অনুপ্রবেশকারী) এইভাবেই ঢিট করা হবে।’ মধ্যপ্রদেশে আঞ্চলিক জরিমানা আদায়ের উদ্যোগ শুরু হয়েছে। যোগী আদিত্যনাথ যেমন হয়েছেন ‘বুলডোজার বাবা’, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের তেমন নতুন নাম ‘বুলডোজার মামা’! বিজেপি নেতাদের বয়ানে যে লড়াই ‘৮০ বনাম ২০ শতাংশের’, সেই লড়াইয়ের যৌথ হাতিয়ার ‘বুলডোজার’ ও নয়া ‘পিটুনি কর’! পান থেকে চুন খসলেই হিন্দি সিনেমা শোল–এর ভিলেন ডাকু গব্বর সিংয়ের ঢঙে শাসক দলের নেতাদের হুমকি শোনা যাচ্ছে আজকাল, ‘চুপ, শান্তিতে থাকো। নইলে বুলডোজার যাবে!’

দিল্লির পথে বুলডোজার নামতে সুপ্রিম কোর্ট সক্রিয় হয়েছেন। নিজে থেকে যদিও নয়, মামলার সুবাদে। উচ্ছেদে স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরেও মেয়র অভিযান না থামানোয় সুপ্রিম কোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত রূপায়ণের বৈধতার প্রশ্ন এখনো বিবেচনা করেননি। প্রধানমন্ত্রীর নীরবতাও বিস্ময়কর! সমদর্শীদের ‘হেট স্পিচ’ ও ধর্মীয় মেরুকরণ নিয়ে আজও তিনি মৌন! তেরো দলের নেতা–নেত্রীর খোলা চিঠির সমস্বর দাবি মেনে তিনি যে এই প্রবণতার বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন, সেই আশাও বৃথা। কেননা, তাঁর দলের সভাপতি জে পি নাড্ডা খোলা চিঠির জবাবে বলেছেন, ‘বিরোধীরা ভোটব্যাংকের লক্ষ্যে নিম্নমানের রাজনীতি করছে...দেশের আত্মায় আঘাত হানছে...দেশের মানুষ ভোটব্যাংকের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করছে।’ স্পষ্ট বলেছেন, ‘মোদি সরকারের সবকা সাথ সবকা বিকাশ সবকা বিশ্বাস ও সবকা প্রয়াসের নীতি অপরিবর্তিতই থাকবে। ওই নীতি মেনেই দেশ এগিয়ে চলেছে। চলবেও।’

ভক্তি নয়, ভয়ে ভালোবাসা

ভারতে দাঙ্গা সমস্যা, বিশেষ করে হিন্দু–মুসলমানের, চিরন্তন। অবিভক্ত ভারত যে সমস্যায় জর্জরিত ছিল, স্বাধীন ভারতও তা থেকে মুক্ত নয়। কিন্তু ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গুজরাটের গোধরায় যাত্রীবাহী ট্রেন জ্বালানোর ঘটনায় অযোধ্যাফেরত ৫৯ জন হিন্দুর মৃত্যুর পর রাজ্যজুড়ে যে আগুন জ্বলে, দাঙ্গার ইতিহাসে তা এক মাইলফলক। ওই দাঙ্গায় রাজ্যের তৎকালীন শাসকদের সংস্রব নিয়ে দেখা দিয়েছিল বিপুল বিতর্ক। আইনের বিচারে অনেক কিছু প্রমাণিত না হলেও বলা হতে থাকে, গুজরাট দাঙ্গা সংখ্যালঘুদের ‘উচিত শিক্ষা’ দিয়েছে। যে গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিল নৈমিত্যিক ঘটনা, ২০০২ সালের ‘শিক্ষা’ নিত্যদিনের সেই অশান্তি কর্পূরের মতো মিলিয়ে দিয়েছে। ২০ বছর আগে বিজেপির বোলবোলাও শুধু গুজরাটে সীমাবদ্ধ ছিল। আজ তা ছড়িয়েছে দেশের আনাচে–কানাচে। রাষ্ট্র ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রশ্রয় সংখ্যাগরিষ্ঠকে বেলাগাম করে তুলেছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হেট স্পিচ আজ তাই বিস্ময় উদ্রেককারী হয় না। প্রকাশ্যে মুসলিম ‘গণহত্যার’ ডাক দিতে গেরুয়াধারীদের গলা কাঁপে না। গরু নিয়ে যেকোনো ছুতোনাতায় মুসলমান–দলিত হত্যা অনুমোদন পাচ্ছে রাষ্ট্র ও শাসক দলের! রাষ্ট্রদ্রোহ ও জাতীয় নিরাপত্তা আইনে যত গ্রেপ্তারি, তার সিংহভাগ মুসলমান এবং শাসক চিহ্নিত ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’–এর শরিক। বিনা বিচারে গরাদবন্দী অগুনতি মানুষ। আদালতের বিচার পেতে কেটে যাচ্ছে বছরের পর বছর। নতুন ভারতের ‘নিও নর্মাল’ এটাই!

সারার্থ বা বার্তা একটাই। এ দেশে থাকতে হলে সংখ্যাগরিষ্ঠের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকতে হবে। ভক্তিতে সমীহ আদায় নয়, ভয়কে ভক্তি করা শিখতে হবে। মেনে নিতে হবে এই সত্য যে দেশটা চলবে সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছায়।

চলছেও সেভাবে। তাই দেশের জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ মুসলমান হলেও রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে মুসলমানের হার ৫ শতাংশের কম। আধা সামরিক বাহিনীতে কাজ করেন সাড়ে ৪ শতাংশ। ভারতের আমলাশাহি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সার্ভিসে মুসলমানের সংখ্যা ৩ দশমিক ২ শতাংশ। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বড়জোর ১ শতাংশ। আনুপাতিক হারের বিবেচনায় যেখানে লোকসভায় ৭৪ জন মুসলমান সদস্যের থাকা উচিত, সেখানে আছেন মাত্র ২৭ জন। কোনো রাজ্যে মুসলমান মুখ্যমন্ত্রী নেই। ১৫ রাজ্যে একজনও মুসলমান মন্ত্রী নেই! ১০ রাজ্যে রয়েছেন মাত্র একজন করে। অধিকাংশের দায়িত্বে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়! উগ্র হিন্দুত্ববাদের আঁতুড়ঘর গুজরাটে মুসলমান জনসংখ্যা ৯ শতাংশ হলেও ১৯৯৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিধানসভা বা লোকসভায় বিজেপি একজন মুসলমানকেও প্রার্থী করেনি! ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও বিজেপি কোনো মুসলমানকে টিকিট দেয়নি। অথচ প্রধানমন্ত্রীর মুখে নিরন্তর শোনা যায় ‘ইনক্লুসিভ গ্রোথ’–এর কথা! পশ্চিমা দুনিয়া সরব হলে তাদের অনধিকার চর্চা না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

অপযুক্তি, আইন ও বাস্তবতা

দিল্লিতে বেআইনি উচ্ছেদ অভিযানের পক্ষে যুক্তি হিসেবে বিজেপি নেতারা যা খাড়া করেছেন, তা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টারই শামিল। পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, বেআইনি উচ্ছেদের কোর্ট আদেশ তাদের কাছে আছে। অভিযানপর্ব চালু রয়েছে দাঙ্গার আগে থেকেই। তারাও যা করেছে আইন মেনে। উল্টো মহলের যুক্তি, বুলডোজার অভিযানের আগে উচ্ছেদকারীদের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। তাঁদের যুক্তি পেশের সুযোগও দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়নি স্থাপনা সরানোর পর্যাপ্ত সময়ও। ক্ষতিগ্রস্তদের আইনজীবীরা সর্বোচ্চ আদালতকে প্রশ্ন করেছেন, বেআইনি উচ্ছেদই যদি পৌরসভার অবশ্য কর্তব্য হয়, তাহলে রাজধানীর ৭৩১টি অবৈধ কলোনি কেন ভাঙা হয় না? কেন হাত পড়ে না সৈনিক ফার্ম, গলফ লিংকের মতো ধনী এলাকাগুলোয় যেখানে প্রায় প্রতিটি স্থাপনাই অবৈধ? কেন শুধুই প্রান্তিক দরিদ্র মানুষেরা লক্ষ্য, যাদের মুরব্বি নেই, অর্থবল নেই?

অবৈধ স্থাপনা, তা সে মাথা গোঁজার অদম্য তাড়না কিংবা গ্রাসাচ্ছাদনের তাগিদ যে কারণেই হোক, ভারতের মতো জনবহুল উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের কাছে এক বিশাল আর্থসামাজিক সমস্যা। গায়ের জোর কিংবা রাষ্ট্রীয় খামখেয়ালিপনায় তার সমাধান অসম্ভব। ‘বুলডোজার নীতি’ সুপ্রিম কোর্টকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়েছে। পৌরসভা ও রাজ্য সরকারদের সর্বোচ্চ আদালত স্পষ্ট নির্দেশ দিতে পারেন, আইন মেনে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে সব ধরনের নিয়মাবলি মানা বাধ্যতামূলক। তা না মেনে উচ্ছেদ অভিযান অবৈধ ও বেআইনি। ফলে যেসব ঘটনায় বুলডোজার চালিয়ে মানুষের মাথার ছাদ ভাঙা হয়েছে অথবা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে জীবিকা, সেখানে সরকারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত করতে হবে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে ন্যায়ালয়ের এটাও দেখা উচিত, খামখেয়ালি অবিবেচক প্রশাসক যেন তার অপকর্মের সাজা পায়। না হলে অন্তরের বিদ্বেষবিষ নাশ যেমন হবে না, তেমনই নীরবে নিভৃতে কেঁদে কেঁদে মাথা কুটবে বিচারের বাণী।