Thank you for trying Sticky AMP!!

মামলার রায়ের আগে গুজরাটের সুরাতে রাহুল গান্ধী। আজ তোলা

দণ্ডিত রাহুল কি লোকসভার সদস্য পদ হারাবেন

‘মোদি’ পদবি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের দায়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে দুই বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন রাহুল। এ সময় বিচারকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে মোটেও অনুতপ্ত নন।

সাজার রায় ঘোষণার পর নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঘিরে। সুপ্রিম কোর্টের রায় ও জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, রাহুলের লোকসভার সংসদ সদস্য পদ এখনই খারিজ হবে কি না, সেই প্রশ্নে এই মুহূর্তে রাজনীতির অঙ্গন তোলপাড়।

সুপ্রিম কোর্ট ২০১৩ সালে এক মামলার রায়ে জানিয়েছিলেন, কোনো মামলায় কোনো সংসদ সদস্য, বিধায়ক অথবা বিধান পরিষদের (বিধানসভার উচ্চকক্ষ) সদস্যের দুই বছর বা তার বেশি সময়ের সাজা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সদস্য পদ সঙ্গে সঙ্গে খারিজ হয়ে যাবে। রাহুলের ক্ষেত্রে বিচারক ভার্মা তাঁর রায় এক মাস অকার্যকর রাখার কথা জানিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে উচ্চতর আদালত সিজেএমের রায় স্থগিত রাখলে তাঁর সদস্য পদ বহাল থাকবে, না হলে রাহুল সদস্য পদ হারাবেন। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কেরালার ওয়েনাড লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন করানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

প্রশ্ন উঠেছে, রাহুলকে লঘু পাপে গুরু দণ্ড দেওয়া হলো কি না। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করা হলো কি না, এমন কথাও উঠেছে। রাহুলের আইনজীবীরা এজলাসে বলেছেন, মানহানির মামলা করার কোনো এখতিয়ারই পূর্ণেশ মোদির নেই। কারণ, তিনি ক্ষতিগ্রস্ত নন। রাহুলের আক্রমণের লক্ষ্য ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। মামলা করতে হলে তাঁরই করা উচিত ছিল। তা ছাড়া ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০০ ধারা অনুযায়ী মানহানির মামলার সর্বোচ্চ রায় দুই বছর। রাহুলকে সর্বোচ্চ সাজাই দেওয়া হয়েছে।

অপরাধীদের হাত থেকে রাজনীতিকে মুক্ত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট ২০১৩ সালে লিলি টমাস বনাম কেন্দ্র মামলায় ওই যুগান্তকারী রায় দিয়েছিলেন। রায়ে বলা হয়েছিল, দুই বা তার বেশি বছরের সাজা হলে সদস্য পদ সঙ্গে সঙ্গে খারিজ তো হবেই, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সাজার মেয়াদের সঙ্গে যুক্ত হবে আরও ছয়টি বছর। অর্থাৎ সাজাপ্রাপ্ত দুই বছর ও তার সঙ্গে ছয় বছর—সব মিলিয়ে আট বছর ওই ব্যক্তি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এর আগে নিম্ন আদালতে দোষীরা উচ্চতর আদালতে আবেদন সাপেক্ষে সদস্য পদ বহাল রাখতে পারতেন।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও সদস্যস্বার্থে তৎকালীন সরকার জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে সংশোধন আনতে এক বিল রাজ্যসভায় পেশ করা হয়েছিল। তাতে রায়ের সঙ্গে সঙ্গে সদস্য পদ খারিজের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ আনার কথা ছিল। সরকার সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশনও দাখিল করেছিল। শেষ পর্যন্ত একটা অর্ডিন্যান্স আনার চেষ্টা হয়, যার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন রাহুল গান্ধী নিজেই। রাহুলের আপত্তিতে অর্ডিন্যান্স ও বিল সেই বছরের ২ অক্টোবর প্রত্যাহার করে নিয়েছিল মনমোহন সিং সরকার।

সুপ্রিম কোর্টের সেই যুগান্তকারী রায়ের পর ১১ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সদস্য পদ খারিজ হয়েছে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিহারের আরজেডি নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ এবং এআইএডিএমকে নেত্রী জয়ললিতা।

Also Read: মোদিকে মানহানির মামলায় রাহুলকে দুই বছরের কারাদণ্ড

সংসদের ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর অসম্মান ও বদনাম করার অভিযোগ এনে রাহুলের সদস্য পদ খারিজের দাবি ইতিমধ্যেই লোকসভার অধিকারভঙ্গ কমিটির বিবেচনাধীন। যুক্তরাজ্যে ‘দেশের অসম্মান করার’ জন্য সদস্য পদ খারিজ করতে কমিটি গড়ার প্রস্তাবও লোকসভার অধ্যক্ষের বিবেচনাধীন। এসবের সঙ্গে যুক্ত হলো আদালতের রায়।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আজ বলেছেন, ‘যেভাবে রাহুলকে বারবার সমন পাঠানো হচ্ছিল, তাতে এমন কিছু আমরা আশঙ্কা করছিলাম। বিজেপির বোঝা উচিত, অন্যের দিকে একটা আঙুল দেখানোর সময় নিজেদের দিকে চারটি আঙুল থাকে।’ মধ্যপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং বলেছেন, ‘মোদি’ শব্দটি উচ্চারণ করলেই মানহানি ঘটতে পারে। অবস্থা এতটাই উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।

Also Read: 'চৌকিদার' অন্যদের লজ্জায় ফেলেছেন, মোদিকে রাহুল

রাহুলকে সাজার প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস সমর্থকদের বিক্ষোভ। আজ তোলা

রাহুলের উপস্থিতিতে রায় ঘোষণা

রাহুলকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজার আদেশ দেন গুজরাটের সুরাতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) এইচ এইচ ভার্মা। তিনি অবশ্য সাজা ঘোষণার পর এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাহুলের জামিনও মঞ্জুর করেছেন। উচ্চ আদালতে আবেদনের জন্য তাঁকে ৩০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। সে পর্যন্ত মামলার রায় স্থগিত থাকবে।

রায় ঘোষণার সময় রাহুল আদালতে উপস্থিত ছিলেন। চার বছর পুরোনো এই মামলায় রায় ঘোষণার আগে বিচারক ভার্মা রাহুলের কাছে জানতে চান, তাঁর কিছু বলার আছে কি না। তিনি অনুতপ্ত কি না। জবাবে রাহুল বলেন, ‘রাজনীতির মঞ্চ থেকে আমি রাজনীতির কথা বলেছি। অনুতাপের কোনো কারণ নেই।’

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় যুদ্ধবিমান রাফাল কেনাবেচায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল কংগ্রেস। সে সময় রাহুল স্লোগান দিয়েছিলেন, ‘চৌকিদার চোর হ্যায় (পাহারাদারই চোর)।’ একই বছর কর্ণাটকে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে রাহুল প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, চোরদের পদবি কেন ‘মোদি’ হয়।

ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত ললিত মোদি ও ব্যাংকের ঋণ নিয়ে টাকা শোধ না করে পলাতক নীরব মোদির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদিকে জড়িয়ে রাহুল জানতে চেয়েছিলেন, কেন সব চোরের পদবি মোদি। এরপর পূর্ণেশ মোদি নামে গুজরাট বিজেপির এক নেতা সুরাত আদালতে রাহুলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন।

রাহুল সত্য বলেই যাবেন

রায়ের পর কংগ্রেস জানিয়েছে, তারা সময় নষ্ট না করে উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন জানাবে। আর হিন্দিতে টুইট করে মহাত্মা গান্ধীর বিখ্যাত উক্তিটি মনে করিয়ে দিয়েছেন রাহুল নিজেই। তিনি লেখেন, ‘আমার ধর্মের ভিতে রয়েছে সত্য ও অহিংসা। সত্যই আমার ঈশ্বর। সেই ঈশ্বরের কাছে পৌঁছনোর উপায় হলো অহিংসা।’

অন্য এক টুইটে কংগ্রেসের এই নেতা বিপ্লবী ভগৎ সিং, সুখদেব ও রাজগুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘সত্যের হাত ধরে সাহসে ভর দিয়ে দেশের জন্য ভয়হীনভাবে লড়াই করছি। ভারত মাতার অসীম সাহসী এই সন্তানদের কাছে থেকে লড়াই করতে শিখেছি। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।’

অন্যদিকে রাহুলের বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী টুইটারে লেখেন, ‘রাহুল গান্ধীর কণ্ঠরোধে শাসককুল চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না। সব দিক থেকে তারা কোমর বেঁধে নেমেছে। কিন্তু আমার ভাই কোনো দিন ভয় পাননি। পাবেনও না। সত্য কথা তিনি বলতেই থাকবেন। দেশ ও মানুষের কথা সব সময় তুলে ধরবেন। সত্যের শক্তি ও কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা তাঁর সঙ্গে আছে।’

Also Read: রাফায়েল বিতর্কে নতুন মোড়

রাজনৈতিক দিক থেকে মতানৈক্য সত্ত্বেও এই রায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি টুইট করে বলেছেন, ‘অ–বিজেপি দল ও নেতাদের শেষ করে দেওয়ার এক চক্রান্ত শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য রয়েছে ঠিকই। তবু বলব, রাহুল গান্ধীকে এভাবে মানহানি মামলায় ফাঁসানো ঠিক হয়নি। প্রশ্ন তোলার অধিকার বিরোধী দল ও মানুষের রয়েছে। আদালতকে আমরা শ্রদ্ধা করি। কিন্তু এই রায়ের সঙ্গে আমরা একমত নই।’

Also Read: দিল্লিতে ‘মোদি হটাও’ পোস্টার, ধরপাকড়