Thank you for trying Sticky AMP!!

ক্রিস্টিন আমানপোর

হিজাব না পরায় সিএনএন সাংবাদিকের সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকার বাতিল

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সাক্ষাৎকার নিতে পারেননি সিএনএনের সাংবাদিক ক্রিস্টিন আমানপোর। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফররত রাইসির শর্ত ছিল, সাক্ষাৎকারের সময় আমানপোরকে হিজাব পরতে হবে। কিন্ত তাতে আপত্তি জানান আমানপোর। এরপর সাক্ষাৎকারটি বাতিল হয়ে যায়।

বিবিসির খবর বলছে, হিজাব পরার শর্ত দেওয়ার পরে আমানপোর সাক্ষাৎকারটি বাতিল করেন। তবে সিএনএন বলছে, আমানপোর হিজাব পরতে আপত্তি করায় ইরানের প্রেসিডেন্ট সাক্ষাৎকারটি বাতিল করেন।

আমানপোর বলছেন, অতীতে ইরানের বাইরে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় সে দেশের কোনো প্রেসিডেন্টই এ ধরনের অনুরোধ কখনো করেননি। এই সাংবাদিক আরও বলেন, রাইসির ঘনিষ্ঠজনদের একজন তাঁকে বলেছেন, ইরানের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে এ শর্ত দেওয়া হয়েছে।

হিজাব না পরার অভিযোগে আটক হওয়ার পর পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যুর পর ইরানে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। ১৩ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিক পুলিশ মাশা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে। কয়েক ঘণ্টা পর মাশা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির তিন দিন পর তিনি মারা যান। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা লাঠি দিয়ে আমিনির মাথায় আঘাত করেছে। পুলিশের একটি গাড়িতে আমিনির মাথা ঠুকে দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, আমিনির ওপর কোনো ধরনের নির্যাতন হওয়ার আলামত নেই। তিনি হঠাৎ করে হৃদ্‌যন্ত্রের কার্যকারিতা হারিয়েছেন।

আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ইতিমধ্যে ইরানের ৮০টি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বিক্ষোভে অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন।

Also Read: ইরানে নিরাপত্তা হেফাজতে তরুণীর মৃত্যুকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলছে পুলিশ, বিক্ষোভ অব্যাহত

সিএনএনের সাংবাদিক আমানপোর বলেন, সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলেন। এর মধ্যেই ইরানের প্রেসিডেন্টের এক সহযোগী বলেন, রাইসি তাঁকে (আমানপোর) হিজাব পরতে অনুরোধ করেছেন।

এক টুইটার পোস্টে আমানপোর এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা নিউইয়র্কের বাসিন্দা। এখানে মাথায় হিজাব পরার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা বা প্রথা নেই।’

আমানপোরের ভাষ্য অনুযায়ী, রাইসির সহযোগীরা তাঁকে স্পষ্ট করে বলে দেন, তিনি হিজাব না পরলে সাক্ষাৎকার হবে না। হিজাবকে সম্মানের বিষয় বলে উল্লেখ করা হয়।

ইরানের প্রেসিডেন্টের এমন অনুরোধকে নজিরবিহীন ও অপ্রত্যাশিত শর্ত উল্লেখ করেন আমানপোর। পরে এই মার্কিন উপস্থাপক তাঁর একটি ছবি প্রকাশ করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, হিজাববিহীন অবস্থায় একটি খালি চেয়ারের সামনে বসে আছেন তিনি। ওই চেয়ারে বসে রাইসির যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম কোনো সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা ছিল।

Also Read: ইরানে পুলিশি হেফাজতে তরুণীর মৃত্যু, সমালোচনার ঝড়

গত বছর ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রাইসি। গত আগস্টে বেশ কিছু বিধিনিষেধ কার্যকর করার একটি আদেশে স্বাক্ষর করেন তিনি। এসব বিধিনিষেধের মধ্যে আছে—নজরদারি চালাতে ক্যামেরা স্থাপন, হিজাব না পরা নারীদের জরিমানা করা কিংবা তাদের উপদেশ দেওয়া, যেসব ইরানি নাগরিক অনলাইনে হিজাব বিধির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলবে বা পোস্ট দেবে তাদের কারাদণ্ড দেওয়া হবে।

এসব বিধি কার্যকর হচ্ছে কি না, তা তদারকি করে ইরানের নৈতিক পুলিশ। এসব বিধি প্রয়োগ করায় সম্প্রতি ইরানে গ্রেপ্তার বেড়েছে। বিপরীতে নারীদের বিক্ষোভ-প্রতিবাদও বাড়ছে। সম্প্রতি মাশা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানের নারীদের অনেকেই হিজাববিহীন অবস্থায় ছবি তুলে ও ভিডিও করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করছেন।