Thank you for trying Sticky AMP!!

ইরানের ইস্পাহান শহরের জারদানজান এলাকায় একটি পারমাণবিক স্থাপনায় নিরাপত্তায় নিয়োজিত সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

৩টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ইসরায়েলের, লক্ষ্য ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার রাডার

ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় ইস্পাহান শহরের কাছে একটি পারমাণবিক স্থাপনার সুরক্ষায় নিয়োজিত রাডার ব্যবস্থা লক্ষ্য করে ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। শুক্রবার ভোরে ইরানে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে এ তথ্য দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

মার্কিন ওই কর্মকর্তা এবিসি নিউজকে বলেছেন, শুক্রবার ভোরে ইরান সীমান্তের বাইরে থেকে ইসরায়েলি জঙ্গি বিমান তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ইসরায়েলিরা ইস্পাহানের কাছের একটি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার রাডার স্থাপনা লক্ষ্য করে ওই হামলা চালান। এই রাডার নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনার নিরাপত্তায় নিয়োজিত।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, প্রাথমিকভাবে মূল্যায়ন হচ্ছে, ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। এ বিষয়ে আরও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাঁর মতে, ইরানকে একটি বার্তা দেওয়ার জন্য এ হামলা চালানো হয়েছে। তা হলো, ইসরায়েলের এ ধরনের হামলা চালানোর সক্ষমতা আছে। তবে ইসরায়েল পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করতে চাইছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে নাম প্রকাশ না করে ইরানের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ইস্পাহান শহরের কাছে সামরিক বাহিনীর একটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ ছাড়া ইস্পাহানের প্রায় ৫০০ মাইল উত্তরে তাবরিজ এলাকায় ইসরায়েলের একটি হামলা নস্যাৎ করা হয়েছে। ইরানের এই দুটি শহরের কাছেই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে দেশটির বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে।

স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোর চারটার দিকে ইস্পাহানে বিকট শব্দে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে। রাতের আকাশে দেখা দেয় আলোর ঝলকানি। একাধিক সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনা থাকা ইস্পাহান শহরটি আক্রান্ত হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পর রাজধানী তেহরানসহ ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টা দেশটির পশ্চিমের আকাশসীমা বন্ধ ছিল। এ হামলা যে ইসরায়েল চালিয়েছে, তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি ইরান। ইসরায়েলও এ বিষয়ে কিছু বলেনি।

Also Read: দীর্ঘ ছায়াযুদ্ধ থেকে বেরিয়ে এসেছে ইরান–ইসরায়েল

ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান

ইরানের কর্মকর্তারা বলেছেন, আকাশে বেশ কিছু সন্দেহজনক বস্তু শনাক্ত হওয়ার পর ইস্পাহানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়। পরে গুলি চালিয়ে তিনটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। শত্রুপক্ষের ‘এজেন্টরা’ এসব ড্রোন ইরানের সীমান্ত থেকেই নিক্ষেপ করেছে বলে তাঁদের ধারণা।

ইরানের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল সৈয়দ আবদোলরহিম মৌসাভি বলেছেন, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে সন্দেহজনক কিছু বস্তু ধ্বংসের সময় বিস্ফোরণের শব্দ হয়। এতে ক্ষয়ক্ষতির কোনো ঘটনা ঘটেনি। ইরানের স্থলবাহিনীর কমান্ডার কিওমার্স হেয়দারি একটি সতর্কবার্তায় আকাশসীমায় সন্দেহজনক কোনো কিছু উড়তে দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে তা ভূপাতিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

Also Read: ইরানের ইস্পাহান কেন হামলার নিশানা

এদিকে শুক্রবার ইতালির কাপরি শহরে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট-৭-এর বৈঠক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে কোনো আক্রমণাত্মক অভিযানে ওয়াশিংটন যুক্ত ছিল না। সেখানে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেন, ইরানে হামলার আগমুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিষয়ে জানিয়েছিল ইসরায়েল। তবে হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমানো এবং বড় ধরনের সংঘাত এড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। ইরানের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা গতকাল বলেছেন, আপাতত পাল্টা হামলা চালানোর পরিকল্পনা তাঁদের নেই।

১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ইসরায়েল। এতে ইরানের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। এর বদলায় গত শনিবার দিবাগত রাতে ইসরায়েল লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। সেগুলোর বেশির ভাগই আকাশে ধ্বংস করা হয়। ওই হামলা রুখতে ইসরায়েলকে সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জর্ডান। কয়েক দিন ধরে ইরানের এ হামলার জবাব দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিল ইসরায়েল।

Also Read: ইসরায়েলের হামলা নয় বলে ইরান কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে

ইস্পাহান কেন নিশানা

ইরানের ইস্পাহান শহরকে নিশানা করার বিষয়টিকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। কারণ হিসেবে শহরটির আশপাশে থাকা ইরানের একাধিক সামরিক ঘাঁটি ও বেশ কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা থাকার বিষয়টি উল্লেখ করছেন তাঁরা।

যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর পারমাণবিক বাহিনীর সাবেক প্রধান ব্রেটন গর্ডন বিবিসিকে বলেন, ইস্পাহানে থাকা ইরানের সামরিক ঘাঁটির একটিই ছিল এ হামলার নিশানা। ইরান যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে বলে ইসরায়েলসহ পশ্চিমা দেশগুলোর দাবি, সেই পারমাণবিক স্থাপনার আশপাশে হামলার ঘটনাটি ঘটেছে। এর মধ্য দিয়ে মূলত ইরানে হামলা করার সক্ষমতার বিষয়ে জানান দিতে চেয়েছে ইসরায়েল। ইরানের ছোড়া তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় সব কটিই ইসরায়েল ভূপাতিত করেছিল। কিন্তু ইসরায়েলের ছোড়া কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্রের সব কটি সফলভাবে আঘাত করেছে।

গর্ডনের মতে, প্রথাগত সামরিক সক্ষমতার বিচারে ইরানের চেয়ে এগিয়ে আছে ইসরায়েল। সে কারণেই ইরান ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ এড়িয়ে লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুতিদের মতো গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে ছায়াযুদ্ধ চালাতে বেশি আগ্রহী। ইরানের পক্ষ থেকে হামলার এ ঘটনাকে ছোট হিসেবে দেখানোর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ইরানের পুরোনো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা যে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র ভেদ করেছে, এটা তেহরান স্বীকার করতে চাচ্ছে না।

Also Read: ইরানে ইসরায়েলের হামলায় সায় ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের: মার্কিন সংবাদমাধ্যম

সংযত হওয়ার আহ্বান

মধ্যপ্রাচ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার একটি ভয়ংকর চক্র শুরু হয়েছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। শুক্রবার এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, পাল্টাপাল্টি এ হামলা বন্ধ করার এটাই উৎকৃষ্ট সময়। বিবদমান পক্ষগুলোকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, এটা করতে না পারলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য ও তারও বাইরে এর বিপর্যয়কর প্রভাব পড়বে।

ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনও এক বিবৃতিতে বিবদমান পক্ষগুলোকে নতুন করে হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অস্থিতিশীল হওয়া থেকে ঠেকাতে চাইলে নতুন করে হামলা না হওয়াটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, চীন, মিসর, তুরস্ক, জার্মানিসহ অন্যান্য দেশ ইরান ও ইসরায়েলের প্রতি সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। দেশগুলো বলছে, নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা তৈরি করবে, এমন যেকোনো পদক্ষেপ থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।

Also Read: বাইরের দেশ থেকে হামলা হয়নি: ইরানের গণমাধ্যম