Thank you for trying Sticky AMP!!

শেষ মুহূর্তের জরিপেও এগিয়ে লুলা, চূড়ান্ত ভোট গ্রহণ কাল

জইর বলসোনারো ও লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা

জইর বলসোনারো নাকি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা—ব্রাজিলের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন, তা নির্ধারণে চূড়ান্ত ভোট গ্রহণ হবে আগামীকাল রোববার। দ্বিতীয় দফার এ ভোটের আগে জরিপে লুলা এগিয়ে রয়েছেন। তবে বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে দুজনের। খবর এএফপি ও আল-জাজিরার।

ডেটাফোলহা ইনস্টিটিউটের জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৩ শতাংশ লুলাকে এবং ৪৭ শতাংশ বলসোনারোকে সমর্থন দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।

বামপন্থী প্রার্থী লুলা ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট। আর বলসোনারো বর্তমান প্রেসিডেন্ট। ২ অক্টোবর দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই ভোটে লুলা পান ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট। বলসোনারো পান ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ব্রাজিলের নির্বাচনী ব্যবস্থা অনুযায়ী, চূড়ান্ত জয় পেতে হলে প্রার্থীকে অবশ্যই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে হবে। কিন্তু প্রথম দফায় লুলা কিংবা বলসোনারোর কেউই ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় আজ দ্বিতীয় দফার নির্বাচন হচ্ছে।

এই নির্বাচনের আগে প্রচারণা ও বিতর্কে দুই প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে গুরুতর সব অভিযোগ তুলেছেন। দুর্নীতির অভিযোগ, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, আমাজন বন রক্ষায় অবহেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁরা পরস্পরকে অভিযুক্ত করে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন।

গতকাল শুক্রবার সর্বশেষ টিভি বিতর্কে অংশ নেন লুলা ও বলসোনারো। দুই ঘণ্টা ধরে চলা বিতর্কে বলসোনারোকে ‘ক্ষুদ্র স্বৈরশাসক’ অভিহিত করে লুলা বলেন, এই ‘নির্বোধ’-এর জন্য ব্রাজিলে করোনায় বহু প্রাণহানি হয়েছে। অন্যদিকে বলসোনারো বলেন, ‘লুলা একজন মিথ্যুক। পুরো জাতির জন্য একজন বিব্রতকর ব্যক্তি। তিনি জাতিকে অপদস্থ করেছেন।’

সাময়িকীর প্রচ্ছদে মুখোমুখি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ও জইর বলসোনারো

এদিকে চূড়ান্ত দফার ভোটের আগে জরিপে লুলা স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। ডেটাফোলহা ইনস্টিটিউটের জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৩ শতাংশ লুলাকে এবং ৪৭ শতাংশ বলসোনারোকে সমর্থন দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সেই হিসাবে, প্রথম দফার ভোটের পর লুলার জনপ্রিয়তা বেশি বেড়েছে। জরিপের ফল ভোটকেন্দ্রে প্রতিফলিত হলে লুলাই হবেন ব্রাজিলের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।

তবে ভিন্নমত পোষণ করছে ব্রাসিলিয়াভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হোল্ড কনসালট্যান্সি। প্রতিষ্ঠানটির মতে, জরিপের ফল দেখে আগাম কিছু বলা যাচ্ছে না। কেননা, এখন পর্যন্ত যেসব ভোটার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি, তাঁদের ভোট এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আর প্রথম দফার ভোটেও জরিপের ফলাফল সত্য হয়নি।

এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা ভোটারের মন জয়ে আজ শনিবার ব্রাজিলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনবহুল প্রদেশ মিনাস গেরাইসের রাজধানী বেলো হোরিজোন্তেতে মোটরসাইকেল মিছিল করেছেন ৬৭ বছর বয়সী বলসোনারো। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রদেশটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মনে করা হয়, এখানে যিনি জিতবেন, তিনিই চূড়ান্ত জয় পাবেন।

Also Read: আদালতের নির্দেশে লুলার নির্বাচনী বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ

অন্যদিকে আজ ৭৭ বছর বয়সী লুলা দেশটির সাও পাওলোতে নির্বাচনী সমাবেশ করেছেন। সাও পাওলো ব্রাজিলের অর্থনৈতিক জোন হিসেবে পরিচিত। এখান থেকেই মাত্র ১৪ বছর বয়সে লুলার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা।  

করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি ব্রাজিল। দেশটিতে ৬ লাখ ৮৮ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় মারা গেছে। মহামারিতে দেশটির অর্থনীতিও বড় ধাক্কা খেয়েছে। যিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না কেন, তাঁকে জনবহুল দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি ব্রাজিল। দেশটিতে ৬ লাখ ৮৮ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় মারা গেছে। শনাক্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন কোটি। মহামারিতে দেশটির অর্থনীতিও বড় ধাক্কা খেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না কেন, তাঁকে জনবহুল দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

Also Read: বলসোনারোকে ‘নির্লজ্জ মিথ্যুক’ বললেন লুলা

লুলা ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি অর্থনৈতিক সংস্কার ও পরিবেশ সুরক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিন। দেশটির পরিবেশবাদী ও নিম্ন আয়ের মানুষের অনেকে তাঁকে সমর্থন দিয়েছে।

অন্যদিকে নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থার উন্নয়নে আরও কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি বলসোনারোর। তবে তাঁর আমলে, বিশেষত করোনা মহামারির সময় অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও ব্যাপক প্রাণহানির অভিজ্ঞতা থাকায় অনেক ভোটার তাঁর প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না।

Also Read: ভোটের লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসতে পারেন লুলা

প্রথম দফার ভোটের আগেও জনমত জরিপে লুলার চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন বলসোনারো। তবে জরিপের ফল ভুল প্রমাণ করে প্রথম দফার ব্যালটের লড়াইয়ে তিনি প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফল করেন। মূলত রক্ষণশীল মনোভাবের জোয়ার, আদিবাসীদের ভূমির অধিকারবিরোধী অবস্থান বড় কৃষক ও খামারিদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়।

Also Read: হারলে ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন বলসোনারো

কিন্তু ভোটে হারলে বলসোনারো ফলাফল প্রত্যাখ্যান করবেন এবং দেশে সংঘাত ও উত্তেজনা উসকে দেবেন, এমন ভয় রয়েছে বিশ্লেষকদের অনেকেরই। কেননা ইতিমধ্যে বলসোনারো ব্রাজিলের নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, পরাজিত হলে এই ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণেই তিনি হারবেন। তবে সম্প্রতি বলসোনারো এক নির্বাচনী সমাবেশে জানান, নির্বাচনে হেরে গেলেও ফলাফল মেনে নিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন তিনি।

Also Read: জরিপে লুলা এগিয়ে, তবে ব্যবধান কম