Thank you for trying Sticky AMP!!

কেউ ৪ বছর, কেউ ৬ মাস আগে ঘর ছাড়েন 

এই ব্যক্তিদের কেউ কাজের খোঁজে, কেউ তাবলিগে যাওয়া, কেউবা বিদেশ যাওয়ার কথা বলে ঘর ছাড়েন।

আনিসুর রহমান,শিব্বির আহমেদ,আবু হুরাইরা ,নাহিদ ,আল–আমিন ,মো. দিদার

উগ্রবাদে জড়িয়ে বান্দরবানে জঙ্গি আস্তানায় যাওয়া তরুণ-যুবাদের কেউ ঘর ছাড়েন চার বছর আগে, কেউ ছয় মাস আগে। এঁদের কেউ তাবলিগে যাওয়ার কথা বলে, কেউ কাজের খোঁজে বা বিদেশ যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। আবার কাউকে কিছু না জানিয়েও অনেকে নিরুদ্দেশ হন। 

স্বজনদের দাবি, তাঁদের সন্তানেরা যে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন, সেটা তাঁরা জানতেন না। কোনো কোনো পরিবার থানায় নিখোঁজ জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করলেও অনেক পরিবার বিষয়টি চেপে গেছেন। 

গত তিন দিনে ১৭ জেলার এমন ৪১ জনের স্বজন ও তাঁদের এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলার প্রতিনিধিরা। তাতে জানা যায়, ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। কেউ কেউ খুবই গরিব পরিবারের। 

Also Read: কেএনএফের সঙ্গে যেভাবে যুক্ত হলো জামাতুল আনসার 

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, এসব ব্যক্তিরা ভদ্র ও চুপচাপ স্বভাবের ছিলেন। এঁদের অনেকে পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানায় অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও চিত্র সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়ার পর স্থানীয় লোকজন বিস্মিত হয়েছেন। প্রশিক্ষণকালে জঙ্গি আস্তানায় মারা যাওয়া কুমিল্লার কলেজছাত্র আল-আমিনের বাবা তাঁর ছেলেকে যাঁরা এই পথে নিয়ে গেছেন, তাঁদের বিচার চেয়েছেন। তিনি আদালতে মামলাও করেছেন। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানাচ্ছে, এসব ব্যক্তি ‘জামাতুল আনসার ফিল শরক্বীয়া’ নামের নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। এঁদের মধ্যে অন্তত ৫০ জন গত এক বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ওই প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ঘিরে গত অক্টোবর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় র‌্যাব অভিযান শুরু করে। এর মধ্যে অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। 

Also Read: কাশিমপুর কারাগারে হামলার লক্ষ্য ছিল জঙ্গিদের

মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন শিব্বির

ভিডিওতে পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানায় অস্ত্র উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় জামাতুল আনসারের কথিত সামরিক কমান্ডার শিব্বির আহমেদকে। তাঁর বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার উত্তর ফরিদপুর গ্রামে। তিনি সিলেটের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০২১ সালে বিদেশ যাওয়ার কথা বলে বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা ও নিজের জমানো টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর পরিবার তাঁর কোনো খোঁজ পায়নি। 

শিব্বির আহমদের বাবা আবদুস সালাম গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনে করেছিলাম ছেলে বিদেশে। সময়ের অভাবে যোগাযোগ করতে পারছে না। গত বুধবার ভিডিওতে ছেলেকে জঙ্গি সংগঠনের পোশাকে দেখে নির্বাক হয়ে গেছি।’

Also Read: বান্দরবানের জঙ্গি আস্তানায় জহিরের মৃত্যু হয় গোলাগুলিতে

পড়তে যাবেন বলে ঘর ছাড়েন হুরাইরা

মাগুরার মহম্মদপুর থানার বড়রিয়া গ্রামে বাড়ি আবু হুরাইরার। তাঁর মা পলি বেগম প্রথম আলোকে জানান, স্থানীয় মাদ্রাসায় হাফেজি পড়া শেষ করে ঢাকার সূত্রাপুরে জামানুল কোরআন নামে একটি মাদ্রাসায় পড়তে যান হুরাইরা। করোনার সময় মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়ি ফিরে আসেন। ২০২১ সালের নভেম্বরে আবার ওই মাদ্রাসায় পড়তে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি ছাড়ে। তখন বলেছিল, ওই মাদ্রাসা থেকে ভারতে পড়তে যাবে হুরাইরা। কিন্তু ঢাকায় পৌঁছানোর পর ছেলের আর খোঁজ পাননি পলি বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেটা শান্ত ও ভদ্র ছিল। বিশ্বাস ছিল সে আল্লাহর পথে আছে এবং ফিরে আসবে। এ কারণে থানায় জিডি করিনি।’ 

বালিদিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শহীদ মোল্লাসহ এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকায় ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত হুরাইরা রমজান মাসে এলাকার মসজিদে তারাবির নামাজ পড়াতেন। 

Also Read: ‘নিখোঁজ’ আমিনুল মারা গেছেন বান্দরবানে জঙ্গি আস্তানায়, কবর খুঁড়ে পাওয়া যায়নি লাশ

শিক্ষক ছিলেন আল-আমিন

আল-আমিন সরদার নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে স্নাতক পড়তেন। পড়া শেষ না করে তিন বছর আগে দুবাই যান। দেড় বছর আগে দেশে ফিরে আসেন। তাঁর পরিবারের ভাষ্য, আল-আমিন দেশে ফেরার ছয় মাস পর হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তবে এ বিষয়ে পরিবারের লোকজন থানা-পুলিশকে কিছু জানায়নি। 

আল-আমিনের মা রেহানা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। তাবলিগ জামাতে যেত। তাই নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁরা মনে করেছিলেন, আল-আমিন তাবলিগে চিল্লায় গেছেন। 

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, আল-আমিন খুব ধার্মিক ও ভালো ছিল। সে সব সময় মাথা নিচু করে চলাফেরা করত। 

তবে গত বুধবার র‌্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিদের মধ্যে এই আল-আমিন অন্যতম। তিনি একসময় ছাত্রদের পড়াতেন। তিনি কয়েকজন ছাত্রকেও জঙ্গিবাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার বিএম ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির এক ছাত্রও রয়েছে। ১৫ বছরের ওই কিশোর গত বছরের ১৫ মার্চ নিরুদ্দেশ হয়। এরপর তার বাবা থানায় নিখোঁজ জিডি করেন। 

এই কিশোরের মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর ১৫ বছরের ছেলে জঙ্গিবাদের বিষয়ে কী বোঝে?’ তিনি বলেন, আল-আমিন তাঁর ছেলেকে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে বোঝাতেন। আল-আমিন নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর ছেলে নিখোঁজ হয়। 

Also Read: কেএনএফের ক্যাম্পে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ

পাঁচ সন্তানের জনক মিলন তালুকদার

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার নাচনমহল গ্রামের মৃত কদম আলীর ছেলে মশিউর রহমান ওরফে মিলন তালুকদার (৩৮)। তিনি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করা মিলন তালুকদারের চার মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তিনি অধিকাংশ সময় পরিবার নিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জে বসবাস করতেন। তবে নিখোঁজ হওয়ার আগে পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে যান।

মিলনের স্ত্রী সুমাইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় একটি ভবনের থাই অ্যালুমিনিয়ামের কাজ করতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর কোনো খোঁজ নেই। নিখোঁজ হওয়ার এক মাস পরে ২০২১ সালের ২৫ মার্চ মিলনের ভাই রাসেল তালুকদার নলছিটি থানায় জিডি করেন। মিলন তালুকদার চুপচাপ ও শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিলেন বলে জানান নাচনমহল ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহ আলম। 

ঝালকাঠি সদরের বাউকাঠি কালিআন্দার গ্রামের আবু ইউসুফের ছেলে হাবিবুর রহমান (২২)। তিনি ২০২১ সালের ২৫ মার্চ বরিশালের নথুল্লাবাদের হোসাইনিয়া মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ হন। ওই মাদ্রাসায় লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি মসজিদে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করতেন হাবিবুর।

তাঁর বাবা আবু ইউসুফ বলেন, ‘ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পরে হাসপাতাল, জেলখানাসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়েও পাইনি। এখন তাঁর আশা ছেড়ে দিয়েছি।’

Also Read: ডাকাত দলের সদস্য থেকে জঙ্গিগোষ্ঠীর সামরিক কমান্ডার

ফিলিং স্টেশনে চাকরি করতেন আনিসুর

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতাপপুর (হরকল নামে পরিচিত) গ্রামের মোখলেছুর রহমান ও রফিয়া খাতুনের ছেলে আনিসুর। তিনি দয়াপুর মাদ্রাসা থেকে হাফেজি শেষ করে মাদ্রাসাসংলগ্ন অ্যাডভান্স সিএনজি ফিলিং স্টেশনে চাকরি নেন। এক বছরের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ বলে পারিবারিক সূত্র জানায়। আনিসুরের দুই স্ত্রী রয়েছেন বলে জানা গেছে। 

আনিসুরের মেজ ভাই সাইফুল ইসলামের দাবি, সব সম্পদ ও বসতভিটা বিক্রি করে আনিসুর রহমান বাড়ি ছেড়ে চলে যান। এখন কোথায় আছেন কেউ জানেন না। 

এদিকে র‌্যাব বলছে, কুমিল্লার এই আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল শরক্বীয়ার আমির। জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের যে ভিডিও বের হয়েছে, সেটা শুরুতেই আনিসুরকে দেখা গেছে। 

র‌্যাব সূত্র জানায়, আনিসুর জমিজমা বিক্রি করে ধারদেনা পরিশোধের পর বাকি টাকায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে জমি কিনে বসবাস শুরু করেছিলেন। পাহাড়ে অভিযান শুরুর পর তিনি আত্মগোপনে আছেন।

চার বছর আগে বাড়ি ছাড়েন দিদার

সম্প্রতি পাহাড়ে প্রশিক্ষণের যে ভিডিও র‌্যাব প্রকাশ করেছে, তাতে কুমিল্লার মো. দিদারকে (২৬) দেখা গেছে। তিনি চার বছর আগে বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হন। তিনি সদর দক্ষিণ উপজেলার জয়মঙ্গলপুর এলাকাসংলগ্ন নিয়ালবাগ গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে।

আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। সে জঙ্গি দলের সদস্য এটা আমি মানতে পারছি না।’ 

দুই কন্যাশিশুর বাবা এমরান হোসেন

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মুদাফফরগঞ্জ–সংলগ্ন ছোট বাবুউরতলা গ্রামের প্রয়াত আজিজুল হকের ছেলে এমরান হোসেন ওরফে ইমরান (২৫)। তিনি দুই বছর আগে স্ত্রী ও দুই শিশু কন্যাকে রেখে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। এরপর আর যোগাযোগ নেই। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নিরুদ্দেশ হওয়ায় চরম সংকটে পড়েছে তাঁর পরিবার। ইমরানের মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভাবের কারণে ইমরানের ছোট মেয়ে হাবিবাকে দত্তক দিয়ে দিয়েছি। অভাবের সংসারে কে খাওয়াবে ওদের।’ 

দুই বছর আগে নিখোঁজ হন নাজমুল

প্রায় দুই বছর আগে একদিন নামাজ পড়তে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি নাজমুল আলম (নাহিদ)। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের জয়দেবপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল। তাঁর বাবা ফায়েজ আহাম্মদ ওরফে বাবুল মিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। দুই বছর আগে অবসর নেন। 

ফয়েজ আহাম্মদ বলেন, ‘ছেলেটা অনেক ভালো ছিল। অন্য ছেলেদের চেয়ে নামাজ–রোজায় ভালো ছিল। ছেলের কোনো খোঁজ পাইনি, বেঁচে আছে কি না, সেটাও জানি না।’ 

নিখোঁজদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ বাশার

মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল বাশার (৫০) দেড় বছর ধরে নিখোঁজ। নিখোঁজের আগে বাশার এলাকায় মাদ্রাসার ছাত্রদের পড়াতেন, একই সঙ্গে কৃষিকাজ করতেন। বাশারের স্ত্রী সায়েদা বেগম পাঁচ সন্তানকে নিয়ে থাকেন তাঁর বাবার বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। 

সায়েদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাশার দেড় বছর আগে ঢাকায় কাজের যাওয়ার কথা বলে বের হন। এরপর থেকে তাঁর সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ হয় নাই। কদিন আগে হঠাৎ শুনি বাশার ধরা পড়েছে।’ 

Also Read: বান্দরবানের পাহাড়ি খাদে শ্বাসরুদ্ধকর জঙ্গিবিরোধী এক অভিযান

যাত্রাবাড়ীর মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ ওবায়দুল্লাহ

ওবায়দুল্লাহ সাকিব ছয় মাস ধরে নিখোঁজ। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর মহিপুর থানার মহিপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। 

ওবায়দুল্লাহর বাবা ইসমাইল হোসেন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর আল ইসলামিয়া দারুল উলুম কুতুবখানা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন। সেখান থেকেই ওবায়দুল্লাহ নিখোঁজ হন। গত বছরের জুলাই মাসের প্রথম দিকে ওবায়দুল্লাহ তাঁর মাকে ফোন করে বলেছিলেন, সাত দিনের জন্য তাবলিগ জামাতের কাজে যাবেন। এরপর থেকে তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। 

আসবাবের কারিগর ছিলেন নিজাম 

বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন নিজাম উদ্দিন ওরফে হিরণ (৩০)। তাঁর বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার মোকিল্যা গ্রামে। পেশায় তিনি ছিলেন কাঠের আসবাবের নকশার কারিগর। 

নিজামের বাবা আবদুল কুদ্দুস জানান, নিজাম উদ্দিন ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। তিনি ২০১৩ সালে ওমান গিয়েছিলেন। ফিরে আসেন ২০১৯ সালে। এরপর কাঠের আসবাবের দোকানে চাকরি নেন। ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বাড়ি ছাড়েন নিজাম। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। 

ধর্মান্তরিত হয়ে জঙ্গিবাদে

২০১৬ সালের শুরুর দিকে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় খুলনার পার্থ দাস কাজের সন্ধানে ঢাকায় যান। মিরপুর ১৪ নম্বরের একটি বাড়িতে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি পান। ওই বছরের শেষ দিকে বাড়িতে ফোন করে পার্থ জানায়, তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এরপর তার নাম হয় আল-আমিন। 

আল-আমিনদের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের মাগুরাঘোনা গ্রামের ঋষিপাড়ায়। বাবা মানিক দাস পেশায় কাঠমিস্ত্রি। মানিক দাস প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি একবার বাড়িতে এসেছিল পার্থ (আল-আমিন)। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ। 

পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিরুদ্দেশ হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে স্বজনেরা কী করবেন—এ বিষয়ে বেশির ভাগ পরিবারই কিছু বুঝে উঠতে পারে না। থানা-পুলিশ করলে পুরো পরিবার বিপদে পড়বে কি না; সেই আশঙ্কা থাকে অনেকের মধ্যে। 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো নীতি-কৌশল নেই।’ তিনি বলেন, দেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে কার্যক্রম, তা সার্বিক নয়। কেবল র‌্যাব-পুলিশের জঙ্গিবিরোধী কিছু অভিযানের মধ্যে এটি সীমাবদ্ধ। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধবিষয়ক কার্যক্রমে শুধু পুলিশ নয়, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র—সবার নিজস্ব ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা অনুপস্থিত। এ জন্য পুরো সমাজের জন্য একটি জাতীয় কৌশলনীতি প্রণয়ন করতে হবে। 


(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন প্রথম আলোর ১৭ জেলা ও উপজেলার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা)