ডাকাত দলের সদস্য থেকে জঙ্গিগোষ্ঠীর সামরিক কমান্ডার

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর
ছবি: সংগৃহীত

নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর একসময় পোস্ট অফিসের কর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। এর পাশাপাশি তিনি ডাকাত দলের সদস্য হিসেবে কাজ করতেন। ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গিয়ে তিনি নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হন। পরে কারাগার থেকে বেরিয়ে জেএমবির কার্যক্রমে যুক্ত হন।

গতকাল সোমবার ভোরে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের পাশের জঙ্গল থেকে সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর ও তাঁর সহযোগী আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলমকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে মাসুকুর রহমান সম্পর্কে এসব তুলে ধরেন বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, মাসুকুর সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধানের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি শুরা সদস্য। ২০০৭ সালের আগে তিনি পোস্ট অফিসে চাকরি করতেন এবং পাশাপাশি ডাকাতি করতেন। কারাগারে গিয়ে তিনি জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। ২০১৭ সালে তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে জামাতুল আনসারে যোগ দেন। ২০২১ সালে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের সময় মাসুকুর উপস্থিত ছিলেন। পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের রূপরেখা নির্ধারণেও তিনি ভূমিকা রাখেন।মাসুকুর রহমানের কাছ থেকে একটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, সেই মুঠোফোনেই পার্বত্য অঞ্চলে সংগঠনটির সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। ভিডিওতে যেসব দৃশ্য দেখা গেছে, তা ২০২১ থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। উদ্ধার হওয়া ভিডিওতে জঙ্গিদের কয়েকটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প দেখানো হয়েছে। এসব ক্যাম্প বান্দরবানের দুর্গম অঞ্চলে। এ ভিডিওতে ‘অভিনয়’ করেছেন সংগঠনটির সদস্যরা, যাঁরা স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন। ভিডিওর শুরুতেই জামাতুল আনসারের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদকে দেখা গেছে। ঠিক তাঁর পেছনেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) একজন প্রশিক্ষককে দেখা গেছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জামাতুল আনসারের সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমানকে এই ভিডিও করার কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। মূলত রণকৌশলগত চলাচল, চলতি পথে অস্ত্র বহন, টহলকালীন ও ব্লক করার সময় তাঁদের অবস্থান কেমন হবে, সেগুলো তাঁরা ভিডিওতে রেখেছেন। শত্রুর ক্যাম্পে হানা দেওয়ার সময় কীভাবে ৩৬০ ডিগ্রির কৌণিক দূরত্বে সদস্যরা অবস্থান করবেন, সেই অভিযানকারী মহড়া রেখেছেন ভিডিওতে। মাটিতে ম্যাপ এঁকে কার অবস্থান কোথায় হবে, সেটি বোঝানোর একটি দৃশ্য দেখা গেছে।

ভিডিওতে জঙ্গি সংগঠনটির সদস্যদের শারীরিক কসরত ও ফিটনেস গুরুত্ব পেয়েছে জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, অভিযান চলাকালীন বিভিন্ন ধরনের সংকেত যেমন থামা, কাছে ডাকা, দলগত অবস্থান, ধীরে চলা, এককভাবে চলা ইত্যাদি সংকেত দিতে দেখা গেছে। এ ছাড়া অভিযানের সময় কীভাবে অস্ত্র বহন করবে, অস্ত্র বহনের সময় হাত, হাতের আঙুল কোথায় থাকবে, কীভাবে রাতের আঁধারে পথ চলতে হবে ইত্যাদি প্রশিক্ষণ ভিডিওতে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

এ ভিডিও করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো, যাঁরা পার্বত্য চট্টগ্রামে আছেন এবং প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, তাঁদের আরও উদ্বুদ্ধ করতে এ ভিডিও করা হয়। সংগঠনটির সামরিক শাখায় যাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তাঁদের করণীয় কী হবে, সেই বিষয় সামনে রেখেই এ ভিডিও করা হয়েছে। সমতলে অবস্থানকারী বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভিডিও দেখিয়ে উদ্বুদ্ধ করাও ছিল তাঁদের অন্যতম উদ্দেশ্য।

আরও পড়ুন