Thank you for trying Sticky AMP!!

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজকে পাহারা দিচ্ছে দুটি যুদ্ধজাহাজ

সোমালিয়া উপকূলে আর কোনো বাণিজ্যিক জাহাজ জিম্মি নেই

সোমালিয়ার উপকূলে সর্বশেষ জিম্মি ছিল বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। মুক্তিপণ দিয়ে গত শনিবার দিবাগত রাতে জাহাজটি ছাড়া পাওয়ার পর সোমালিয়ার প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলে এখন কোনো বাণিজ্যিক জাহাজ জিম্মি নেই।

তবে বাণিজ্যিক জাহাজ জিম্মি না থাকলেও সোমালিয়ার ৭০০ নটিক্যাল মাইল উপকূলীয় এলাকায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের পরামর্শ দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী। সংস্থাটির জলদস্যুতাবিষয়ক সর্বশেষ সাপ্তাহিক জলদস্যুতা ঝুঁকি প্রতিবেদনে এমন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Also Read: কত মুক্তিপণে ছাড়া পেল এমভি আবদুল্লাহ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সোমালিয়ার উপকূলে বাণিজ্যিক জাহাজ জিম্মি না থাকলেও অন্তত সাতটি মাছ ধরার নৌযান জিম্মি রয়েছে। এসব নৌযান ব্যবহার করে মূলত বাণিজ্যিক জাহাজ জিম্মি করে দস্যুরা। দস্যুদের চারটি গ্রুপ এখনো সোমালিয়ার উপকূলে সক্রিয় রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের জাহাজগুলো পণ্য পরিবহনের ভাড়া পাওয়ার ওপর নির্ভর করে আফ্রিকা উপকূলের সামনে দিয়ে চলাচল করে। এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়া উপকূল থেকে নিরাপদ দূরত্বে (৬০০ নটিক্যাল মাইল) চলাচল করেও রক্ষা পায়নি। এ জন্য যেসব জাহাজ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার কাছাকাছি দিয়ে যাবে, সেগুলোতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের বিধিবিধান মেনে চলা উচিত। কারণ, একবার সমুদ্রযাত্রায় লাখ ডলার খরচ হলেও মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের সম্পদ ও নাবিকদের জীবন সুরক্ষা থাকবে।

Also Read: যেভাবে মুক্তিপণের অর্থ পেল সোমালিয়ার জলদস্যুরা

দস্যুদের পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সোমালিয়ার উপকূল ২০০৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ছিল দস্যুতাপ্রবণ এলাকা। ২০১২ সালের পর দস্যুতা প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসে। ২০১৭ সালে দুটি জাহাজ ছিনতাই হলেও তা উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে দস্যুতা ফিরে আসে। মূলত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা এডেন উপসাগর ও বাব এল মান্দে এলাকায় বাণিজ্যিক জাহাজে আক্রমণ শুরু করলে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী সোমালিয়ার উপকূল ছেড়ে সেখানে তদারকি শুরু করে। এ সুযোগে সোমালিয়ার দস্যুরা সক্রিয় হয়।

ইইউ নৌবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত তিনটি বাণিজ্যিক জাহাজে দস্যুরা হানা দিলেও দুটিতে সফল হয়। সোমালিয়ার দস্যুরা প্রথম ছিনতাই করে এমভি সেন্ট্রাল পার্ক নামে ইসরাইলি মালিকানাধীন একটি জাহাজ। ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর জাহাজটি দখলে নেয় সোমালিয়ার দস্যুরা। এ সময় নাবিকেরা সিটাডেলে (জাহাজের সুরক্ষিত গোপন কুঠুরি) লুকিয়ে যায়। নাবিকদের জিম্মি করতে না পেরে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর অভিযানের মুখে দস্যুরা জাহাজটি ছেড়ে ইয়েমেনের দিকে চলে যায়। দস্যুরা এই জাহাজটি ছিনতাইয়ে সফল না হলেও ১৮ দিনের মাথায় আরেকটি জাহাজে হানা দিয়ে সফল হয়।

Also Read: মুক্ত এমভি আবদুল্লাহকে যেভাবে পাহারা দিচ্ছে দুটি যুদ্ধজাহাজ

লন্ডন ও কুয়ালালামপুরভিত্তিক দস্যুতা পর্যবেক্ষণকারী ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো বা আইএমবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুলগেরিয়ার মালিকানাধীন এমভি রুয়েন জাহাজটি ছিনতাই করে দস্যুরা। জাহাজটির মালিকপক্ষ মুক্তিপণ পরিশোধ করে ছাড়িয়ে না আনায় তিন মাস পর কমান্ডো অভিযান চালিয়ে তা উদ্ধার করে ভারতীয় নৌবাহিনী। সর্বশেষ জিম্মি করা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহও ছাড়া পেয়েছে গত শনিবার দিবাগত রাতে।

কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোমালিয়া উপকূলে জাহাজ জিম্মি না থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা দিয়ে চলাচলের সময় আমরা জাহাজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করি। এমভি আবদুল্লাহ মুক্ত হওয়ার পরও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা অতিক্রম করার সময় আমরা জাহাজে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা কার্যকর করেছি।’