Thank you for trying Sticky AMP!!

'উত্তরের ময়লায় মধু আছে'

সংগ্রহ করা আবর্জনা রাখা হচ্ছে ভ্যানে। সম্প্রতি লালমাটিয়ায়। ছবি: জাহিদুল করিম

‘গুলশান-বনানীর বাসাবাড়ির ময়লায় মধু আছে। সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা মৌমাছির মতো এই মধুর পেছনে লেগে আছেন। এঁদের ওপর সিটি করপোরেশনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।’ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক কর্মকর্তার এমন বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া গেল সরেজমিনে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে (বনানী, গুলশান ১ ও ২, গুলশান সুইপার কলোনি ও কড়াইল) বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করে ৩৭টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা প্রতিটি বাসা থেকে মাসে কমপক্ষে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কয়েক হাজার টাকাও আদায় করা হয়। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন।

গুলশান–বনানীর বর্জ্য সংগ্রহকারী অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তাঁরা বলেন, গুলশান, বনানীর ময়লা সংগ্রহকারী ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটির ভাগে ২ থেকে ১০টি পর্যন্ত সড়ক রয়েছে। গুলশান ১ ও ২ নম্বরের সড়ক, গুলশান অ্যাভিনিউর দুই পাশ, বনানীর সড়ক, কামাল আতার্তুক অ্যাভিনিউর দুই পাশ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় করেন ১৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন চন্দ্র ঘোষ এবং বনানী থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মামুন। মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারও ভাগে দুটি, কারও ভাগে ১০টি সড়ক আছে। আগে সড়কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ঝামেলা হতো। এখন আর সমস্যা হয় না।’

গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কের ডেলমন্ট ডুপ্লেক্স অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে ১০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। বর্জ্য সংগ্রহের জন্য প্রতিটি ফ্ল্যাট থেকে মাসিক ৪০০ টাকা আদায় করা হয়। ৭৪ নম্বর সড়কেও প্রতিটি বাসা থেকে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য মাসে ৪০০ টাকা করে নেওয়া হয়।

গুলশান–বনানীতে বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করে ৩৭টি প্রতিষ্ঠান
আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছেন

গুলশানের ৯ নম্বর সড়কে অবস্থিত রেস্তোরাঁ কাবাব ফ্যাক্টরি। এই রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্জ্য সংগ্রহকারীদের প্রতি মাসে চার হাজার টাকা দিতে হয়। সিটি করপোরেশনকে কর দেওয়ার পরও বর্জ্য সংগ্রহকারীদের পেছনে বছরে ৪৮ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। আশপাশে ময়লা ফেলার কোনো জায়গা নেই। তাই টাকা না দিয়ে উপায়ও নেই।’

এই ওয়ার্ডে বর্জ্য সংগ্রহকারী একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক গোলাম মাওলা বলেন, গুলশান-বনানীর একেকটি বাসা থেকে প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য হয়। দেখা যায়, এক বাড়ির ময়লা নিতেই ভ্যান ভরে যায়। আর এ এলাকাতে ময়লা সংগ্রহের শ্রমিকও পাওয়া যায় না। সব মিলিয়ে অন্য এলাকার চেয়ে একটু বেশি টাকা নেওয়া হয়।

প্রতিষ্ঠানগুলো টাকা নেয় ইচ্ছেমতো
লালমাটিয়া ই-ব্লকের বাসিন্দা আবদুল আলিমের বাসা থেকে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য প্রতি মাসে ২৫০ টাকা নেওয়া হয়। তিনি বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই ময়লা সংগ্রহের টাকা বাড়ানো হয়। এ বছরের শুরুতেই ৩০ টাকা বাড়িয়ে ২৩০ টাকা করা হয়েছিল। ঈদের আগে আরও ২০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

ডিএনসিসির ২২ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম রামপুরার বাসিন্দা রিনা রহমান। তাঁর বাসার বর্জ্য সংগ্রহের জন্য প্রতি মাসে ১৫০ টাকা দিতে হয়। রিনা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক দিন পর পর ময়লা নিয়ে যান কর্মীরা। বাসাভাড়ার সঙ্গে আবর্জনার টাকাও দিই। টাকা নেওয়ার কোনো রসিদ পাই না।’

আরও পড়ুন: 
বর্জ্য সংগ্রহকারীদের কোথাও বেতন আছে, কোথাও নেই
টাকার ভাগাভাগিতে কাউন্সিলররা
রাজধানীতে ৪৫০ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য