বর্জ্য সংগ্রহকারীদের কোথাও বেতন আছে, কোথাও নেই

বর্জ্য সংগ্রহের মূল কাজ পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। অথচ তাঁরা বঞ্চিত ন্যায্য মজুরি থেকে। সম্প্রতি লালমাটিয়ায়।  ছবি: প্রথম আলো
বর্জ্য সংগ্রহের মূল কাজ পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। অথচ তাঁরা বঞ্চিত ন্যায্য মজুরি থেকে। সম্প্রতি লালমাটিয়ায়। ছবি: প্রথম আলো

ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীরা ময়লার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করলেও বাসা থেকে ময়লা সংগ্রহের মূল কাজটি করেন সংগ্রহকারীরা। এই দরিদ্র ব্যক্তিরা বর্জ্য সংগ্রহ করে ভ্যানগাড়িতে করে ময়লার পাত্র বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) পর্যন্ত নিয়ে যান। সেখান থেকে সিটি করপোরেশনের গাড়ি বর্জ্য ভাগাড়ে নিয়ে যায়। অথচ এই সংগ্রহকারীরাই নানাভাবে বঞ্চিত। ন্যায্য মজুরিও পান না বর্জ্য সংগ্রহকারী কর্মীরা।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনেময়লা সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো এলাকায় তাঁদের মাসিক বেতন কমবেশি তিন থেকে আট হাজার টাকা। আবার কোথাও মাসিক বেতন নেই। শুধু তাঁরা সংগ্রহ করা ময়লা থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য আলাদা করে বিক্রি করেন। মূলত এটিই তাঁদের আয়ের উৎস।

এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য সংগ্রহকারী সংগঠনগুলোর সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, নিম্ন আয়ের লোকজন ময়লা সংগ্রহের কাজ করে থাকেন। সংগঠনগুলো তাঁদের সুবিধামতো সংগ্রহকারীদের দিয়ে কাজটি করিয়ে নেন।

বাড্ডা নতুন বাজার, ইন্দিরা রোড, মিরপুর ১০ নম্বর জল্লাদখানা এলাকায় সিটি করপোরেশনের ময়লা রাখার এসটিএসে গিয়ে দেখা যায়, সংগ্রহকারীরা বাসাবাড়ি থেকে ময়লা এনেই মাটিতে ঢেলে ফেলছেন। সেখান থেকে প্লাস্টিকের বোতল, লোহা ও কাচের তৈরি সামগ্রী, ইলেকট্রনিকসের বাতিল সামগ্রী, মুঠোফোনের চার্জার, পলিথিন আলাদা করে বস্তায় ভরে রাখছেন।

২০ বছর ধরে মিরপুরে বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহ করেন মো. ইবরাহিম। তিনি বলেন, ময়লা সংগ্রহের কাজ করে কোনো বেতন পান না। সপ্তাহে এক দিন ময়লা থেকে বেছে রাখা জিনিসপত্র ভাঙারির দোকানে বিক্রি করেন। মাসে ভাঙারি বিক্রি করে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা পান।

গুলশান-বনানী এলাকায় যাঁরা বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহের কাজ করেন, তাঁদের অধিকাংশই বেতন পান না। কোন বাসা থেকে কত টাকা আদায় করা হয়, সেটাও জানেন না মাঠপর্যায়ের ময়লা সংগ্রহকারীরা। হারুন মিয়া নামের একজন সংগ্রহকারী বলেন, ‘মালিকেরা বাসা থেকে কত টাকা নেন, সেটা আমরা জানতে পারি না। তাঁদের টাকা তোলার আলাদা লোক আছে। এই টাকার কোনো ভাগ আমরা পাই না। সারা দিন খেটে ভাঙারির কিছু টাকাই আমাদের আয়।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা বর্জ্য সংগ্রহ করেন, তাঁরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন। তাই বর্জ্য সংগ্রহকারীদের নিয়ে বছরের বিভিন্ন সময় কর্মশালার আয়োজন করা হয়। ময়লা সংগ্রহকারী সংগঠনগুলোকে কর্মীদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে গ্লাভস, মাস্ক, হাঁটু পর্যন্ত জুতা ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

তবে মাঠপর্যায়ের বর্জ্য সংগ্রহকারীরা জানান, তাঁদের কখনো এমন নিরাপত্তাসামগ্রী দেওয়া হয়নি। খালি হাতে ময়লা থেকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য সামগ্রী খুঁজতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই হাত কেটে যায়। রুবেল নামের একজন বর্জ্য সংগ্রহকারী নিজের হাতের কাটা অংশ দেখিয়ে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে বোতল বাছার সময় কাচের ভাঙা অংশ লেগে কাইটা গেছে।’