ময়লার টাকার ভাগাভাগিতে কাউন্সিলররা

রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়েছে ময়লা। সম্প্রতি দনিয়ার পাটেরবাগ এলাকায়।  ছবি: সংগৃহীত
রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়েছে ময়লা। সম্প্রতি দনিয়ার পাটেরবাগ এলাকায়। ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রতিনিধি হলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একাধিক কাউন্সিলর ময়লা–বাণিজ্যে যুক্ত হয়েছেন। কাউন্সিলররা নিজের লোকজনের মধ্যে ওয়ার্ডগুলোকে কয়েক ভাগে ভাগ করে দিয়েছেন। তাঁদের বাইরে কেউ বর্জ্য সংগ্রহ করতে পারেন না। আবার কোনো কাউন্সিলরের নিজের বর্জ্য সংগ্রহের প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

১৫ বছর ধরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) হোসেনি দালান, নাজিমুদ্দিন রোডের বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করত নীলা ভ্যান সার্ভিস। কয়েক মাস আগে এই ওয়ার্ডে আরও ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে বর্জ্য সংগ্রহ করার অনুমতি দেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর বিন আবদাল আজিজ।

হোসেনি দালান রোডের বাসিন্দা মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, নতুন লোকজন দায়িত্ব পাওয়ার পর বাসাপ্রতি বর্জ্য সংগ্রহের খরচ ২০ টাকা বাড়িয়েছেন। এখন তাঁরা প্রতিটি ফ্ল্যাট থেকে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে নিচ্ছেন।

নীলা ভ্যান সার্ভিসের মালিক ফারজানা বলেন, কাউন্সিলর তাঁর লোকজনকে দিয়ে কাজে ভাগ বসিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের কেউ ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে অনুমতি নেননি। এখন তাঁরা ঠিকমতো বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য নেন না।

এ বিষয়ে কাউন্সিলর ওমর বিন আবদাল আজিজ বলেন, নীলা ভ্যান সার্ভিসের মাত্র তিনটা ভ্যান ছিল। তার লোকবলও ছিল কম। ফলে সব বাসাবাড়ি থেকে তিনি বর্জ্য নিতে পারতেন না।

ধানমন্ডি এলাকার বর্জ্য সংগ্রহের কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক ফারুক খান। জাকির হোসেনের হয়ে ময়লা সংগ্রহ করেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহ আলম। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম ধানমন্ডি নাগরিক সমাজ কল্যাণ পরিষদ।

শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের কাছে ময়লা সংগ্রহের ফি মাসে ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। প্রতিদিন ১০ টাকা হিসাবে এই প্রস্তাব দেওয়া। কিন্তু সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

ধানমন্ডি ৮/এ নম্বর থেকে ২৬ নম্বর সড়কের ময়লা সংগ্রহ করে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক খানের প্রতিষ্ঠান ধানমন্ডি ক্লিন অ্যাসোসিয়েশন। ধানমন্ডিতে প্রতিটি বাসা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ বাবদ সর্বনিম্ন ১৫০ থেকে ৩৮০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। ধানমন্ডির প্রতিটি রেস্তোরাঁ থেকে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হয়।

শাঁখারীবাজার, রায়সাহেব বাজার এলাকায় আগে বর্জ্য সংগ্রহ করত তানজুম সমাজ কল্যাণ কমিটি। অভিযোগ রয়েছে, বর্জ্য সংগ্রহের কাজটি জাকির হোসেনের কাছ থেকে জোর করে হাতিয়ে নিয়েছেন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফী ওরফে গৌরব।

এ বিষয়ে ইমতিয়াজের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তাঁর বাবা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু আহমেদ মন্নাফীর দাবি, বর্জ্য সংগ্রহের কাজে তাঁর ছেলে জড়িত নন।

জিগাতলা এলাকার বর্জ্য সংগ্রহের কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় কাউন্সিলর মোহাম্মদ সেলিমের সহকারী (পিএস) খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ওয়ার্ডের বেশির ভাগ এলাকার বর্জ্য সংগ্রহের অনুমোদন তাঁর প্রতিষ্ঠানের নামে। তা ছাড়া নিজের অনুমোদিত এলাকার মধ্যেও কিছু কিছু এলাকার বর্জ্য সংগ্রহের নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় নেতা–কর্মীদের অনুরোধে তাঁদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন।

ব্র্যাকের চেয়ারপারসন এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যে হারে রাজধানীতে জনসংখ্যা বেড়েছে, সেভাবে সিটি করপোরেশনের সক্ষমতা বাড়েনি। বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহকারী বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অযৌক্তিকভাবে বেশি টাকা আদায় করছে।