Thank you for trying Sticky AMP!!

এমএলএমের ফাঁদে পড়ে ২ হাজার গ্রাহক খোয়ালেন ৫৭ কোটি টাকা

কোনো গ্রাহক ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে মাসে লাভ পাবেন ৮ হাজার ৪৫০ টাকা। নতুন বিনিয়োগকারী আনতে পারলে তাঁর বিনিয়োগের ৫০ শতাংশ টাকাও পাবেন তিনি। এভাবে অস্বাভাবিক লাভের ফাঁদে ফেলে আবাসন ব্যবসার আড়ালে দুই হাজার গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে ‘সেবা আইডিয়াস ও লিভিং লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনার নামে এই বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের কাছ থেকে ৫৭ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে তারা। সেই টাকা থেকে রাজধানীর উত্তরায় নিজের নামে ৪২ কাঠা (প্রায় ৭০ শতাংশ) জমিও কিনেছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক।

অভিযোগের ওপর ৯ মাস পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অনুসন্ধান শেষে ২০২১ সালের নভেম্বরে উত্তরা পূর্ব থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলায় সেবা আইডিয়াস ও লিভিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান আশিক ঘোষ অসিত, ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. নুরুল ইসলাম, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আয়শা আক্তার লিপি ও ফাইন্যান্স পরিচালক শাহনেওয়াজ শামীমকে আসামি করা হয়।

শুরুতে দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। তিন মাস লাভের টাকা পেয়েছি। পরে আরও তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। সব মিলিয়ে প্রায় লাখ টাকা লাভ পেয়েছিলাম। পরে আর লাভের টাকাও দেয়নি, মূল টাকাও ফেরত পাইনি।
—আনোয়ার হোসেন, ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) জোনাইদ হোসেন গ্রাহকের টাকায় কেনা ওই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫৭ শতাংশ জমি জব্দের আবেদন করেন। সিআইডির পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি আদালত ওই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫৭ শতাংশ জমি জব্দের নির্দেশনা দিয়েছেন।

এর আগে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা চক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন আশিক ঘোষ অসিত, কাজী নুরুল ইসলাম, শাহনেওয়াজ শামীম, জহিরুল হক, নুরুল ইসলাম ও মামুন মিয়া। পরে তাঁদের অধিকাংশই জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।

Also Read: এমএলএম ও ই–কমার্স প্রতারণায় আটকা ২২ হাজার কোটি টাকা

সিআইডি সূত্র বলছে, উত্তরায় সাত বছর আগে ওই প্রতিষ্ঠানের আড়ালে এমএলএম পদ্ধতিতে ব্যবসা চালু করে একটি চক্র। ২৪ মাসে বিনিয়োগকৃত অর্থের দ্বিগুণ মুনাফা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ২ হাজার ২০৯ গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে তারা। তাদের নিজস্ব কোনো জমি না থাকলেও তারা অন্য একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের ব্রোউশার (পুস্তিকা) দেখিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করত।

প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কোনো জমি নেই। অন্য একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের ব্রোউশার (পুস্তিকা) দেখিয়ে গ্রাহকদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করত তারা।

প্রতারণার শিকার হওয়া গ্রাহকদের একজন ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে পেনশনের টাকা থেকে পাঁচ লাখ সেবা আইডিয়াস ও লিভিং লিমিটেডে বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি। আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুরুতে দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। তিন মাস লাভের টাকা পেয়েছি। পরে আরও তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। সব মিলিয়ে প্রায় লাখ টাকা লাভ পেয়েছিলাম। পরে আর লাভের টাকাও দেয়নি, মূল টাকাও ফেরত পাইনি।’

গ্রাহকের টাকায় রাজধানীর উত্তরায় নিজের নামে জমি কিনেছেন সেবা আইডিয়াস ও লিভিং লিমিটেডের মালিক

Also Read: এমএলএম কোম্পানি ‘অনপেসিভ’ নিয়ে সতর্কতা জারি

সিআইডির তদন্তের তথ্য বলছে, মামলার আসামি কাজী নুরুল ইসলাম সরকারি চাকরি করা সত্ত্বেও ব্যবসা করতেন। তিনি সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করেছেন। এ ছাড়া আসামি আশিক ঘোষ, নুরুল ইসলাম, আয়শা আক্তার ও শাহনেওয়াজ শামীম পরস্পর যোগসাজশে ২ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ৫৭ কোটি টাকা নিয়েছেন। এর মধ্যে ২৮ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে, যা জব্দ করা হয়েছে। ১ কোটি ৫০ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় নিজেদের নামে ৪২ কাঠা জমি কিনেছেন। তাঁরা গ্রাহকদের লাভসহ ফেরত দিয়েছেন ২২ কোটি টাকা। আর বাকি টাকার হদিস পাওয়া যায়নি।
সিআইডি সূত্র জানায়, রাজধানীর উত্তরখানের আমাইয়া ও পলাসিয়া মৌজায় কেনা ৫৭ শতাংশ জমির বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। কিন্তু জমির প্রকৃত মূল্য অনেক বেশি। সেবা আইডিয়াস ও লিভিং লিমিটেড এবং আসামিদের নামে থাকা এই স্থাবর সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অধ্যাপক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) চেয়ারম্যান সুবর্ণ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশে বেকারের সংখ্যা অনেক। যাঁরা চাকরি পাচ্ছেন না, তাঁরা উপার্জনের লোভে এসব এমএলএম কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হচ্ছেন। বেকার সমস্যার সমাধান না করে মানুষের এই লোভ বন্ধ করা যাবে না।’

অধ্যাপক সুবর্ণ বড়ুয়া আরও বলেন, ‘এমএলএমের নামে কত ধরনের প্রতারণা চলছে, তার সঠিক তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কাছে নেই। তথ্য না থাকলে সেটা কীভাবে বন্ধ হবে?’

Also Read: ই-কমার্স-এমএলএম প্রতারণা, লোভ সামলাতেই হবে

Also Read: লোভের ফাঁদে কেন পা দেয় মানুষ