Thank you for trying Sticky AMP!!

রক্তের সন্ধানে স্ট্যাটাস দিলেই সাড়া

রাঙ্গুনিয়া ব্লাড ব্যাংকের সদস্যরা রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করছেন। সম্প্রতি সৈয়দবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রথম আলো

‘রক্তদাতারা এগিয়ে আসুন। রক্তের গ্রুপ ও–পজিটিভ, পরিমাণ এক ব্যাগ, স্থান-চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।’ তারিখ, সময় ও মুঠোফোন নম্বর দিয়ে এভাবে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে রক্তের সন্ধান চেয়েছেন শহীদুল ইসলাম নামের এক তরুণ। রাঙ্গুনিয়া ব্লাড ব্যাংক নামের একটি ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন (প্রশাসক) তিনি। গত মঙ্গলবার স্ট্যাটাসটি দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে সাড়া মেলে। জোগাড় হয়ে যায় রক্ত।

রাঙ্গুনিয়া ব্লাড ব্যাংক ফেসবুক পেজের ১০ জন তরুণ অ্যাডমিন এভাবে সাধারণ মানুষের জন্য নিয়মিত রক্তের সন্ধান দেন। ফেসবুকভিত্তিক এই গ্রুপের রয়েছে ১০ হাজার সদস্য। রাঙ্গুনিয়া ছাড়াও চট্টগ্রামের বাইরেও অনেকেই রক্তের সন্ধান চান এই গ্রুপের মাধ্যমে। রক্তের সন্ধান দেওয়ার পাশাপাশি সংগঠনের পক্ষ থেকে দুস্থদের শীতবস্ত্র, ঈদের পোশাক, শিক্ষাসামগ্রী ও ক্যানসার রোগীদের আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়। সংগঠনের ৬৫ জন তরুণ সদস্য নিয়মিত রক্তও দেন। এলাকার কোথাও কোনো অসুস্থ রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে ছুটে যান সংগঠনের সদস্যরা।

সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই বছর আগে যাত্রা শুরু এই সংগঠনের। যাত্রা শুরু থেকে গড়ে প্রতি মাসে রাঙ্গুনিয়াসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের জন্য বিনা মূল্যে ১৫ ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করছেন তাঁরা। এভাবে গত কয়েক বছরে অন্তত ৮ শ ব্যাগ রক্ত দিয়েছে সংগঠনটির সদস্যরা। তাঁদের কাছ থেকে রক্ত পেয়েছেন গর্ভবতী মা, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগী, ব্লাড ক্যানসার, কিডনি রোগী ও দুর্ঘটনার শিকার মানুষজন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ

সংগঠনের একজন অ্যাডমিন হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, রক্ত দিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচানোর লক্ষ্য নিয়ে ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর তাঁদের যাত্রা শুরু। সংগঠক হিসেবে ছিলেন ইলিয়াছ হায়দার, শহীদুল ইসলাম, ফয়সাল আসিফ, দিলশাদ হৃদয়সহ কয়েকজন তরুণ।

হাবিবুর রহমান আরও বলেন, সংগঠনটি ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের মাধ্যমে কর্মকাণ্ড চালায়। সারা দেশেই এখন তাঁদের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। এই নেটওয়ার্কে যোগাযোগের মাধ্যমে নিয়মিত রক্তদান করে যাচ্ছেন সদস্যরা। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে ব্লাড গ্রুপিংও করেন তাঁরা।

সংগঠনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৬৫টি রক্তদান কর্মসূচি পালিত হয়েছে বলে জানান সংগঠকেরা। এ ছাড়া রক্তের অন্যতম রোগ থ্যালাসেমিয়া নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

সংগঠনের আরেক অ্যাডমিন শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘রক্ত দিয়ে কারও জীবন বাঁচাতে পারলে আমাদের চেষ্টা সার্থক বলে মনে হয়। শুধু রক্তদান নয়, সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন সামাজিক কাজেও অংশগ্রহণ করেন।’

উপজেলার রাজা নগর ইউনিয়নের রাজার হাট এলাকার আহমদ কবির (২৬) থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। এই রোগে আক্রান্ত রোগীকে নিয়মিত রক্ত দিতে হয়। আহমদ কবিরকে একসময় রক্ত জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হতো। এখন আর সেই কষ্ট নেই। গত দুই বছর ধরে রাঙ্গুনিয়া ব্লাড ব্যাংকের সদস্যরা প্রতি মাসে তাঁকে রক্ত দিচ্ছেন। আহমদ কবির বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়া ব্লাড ব্যাংক থাকায় এখন অনেকটা নিশ্চিন্ত বোধ করি। আমার মতো অনেক থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্য বড় ভরসাস্থল তাঁরা।’

রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজের অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ বলেন, সমাজের অনেক তরুণ বাজে কাজে অযথা সময় নষ্ট করে। বিভিন্ন অপরাধেও জড়িয়ে যায় অনেকে। এদের সবার জন্য রাঙ্গুনিয়া ব্লাড ব্যাংক উদাহরণ হতে পারে।