Thank you for trying Sticky AMP!!

নাশকতা এড়াতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি, যাত্রীদের জেরা

বাস থামিয়ে তল্লাশি করছেন পুলিশ সদস্যরা। আজ দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানার মোড়ে

১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী অংশে পুলিশের বিশেষ তল্লাশিচৌকির তৎপরতা অব্যাহত আছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় আজ শুক্রবার মহাসড়কের ঢাকামুখী সড়কে যাত্রীবাহী যানবাহন কম চলাচল করছে। তবে সংখ্যায় অল্প হলেও সব কটি যানবাহনকে পুলিশ তল্লাশি পাড়ি দিয়ে যেতে হচ্ছে। এসব তল্লাশিচৌকিতে যাত্রীদের জেরার পাশাপাশি যানবাহনের কাগজপত্রও পরীক্ষা করা হচ্ছে। দূরপাল্লার বাস, লোকাল মিনিবাসসহ ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলের মতো ব্যক্তিগত যানও তল্লাশির মুখে পড়ছে।

আজ শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত মহাসড়কের সাহেপ্রতাব ও জেলখানার মোড় এলাকায় অবস্থান করে এ চিত্র দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার দুপুরে মহাসড়কের ওই দুই পয়েন্টে বিশেষ তল্লাশিচৌকি বসানোর হয়। পরদিন সকাল থেকে ইটাখোলা, পাঁচদোনা, বারৈচা, মাধবদী ও ঘোড়াশালে আরও পাঁচটি তল্লাশিচৌকি বসায় পুলিশ। এ ছাড়া শহরের রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট ও বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন এলাকায় পুলিশের আরও তিনটি তল্লাশিচৌকি রয়েছে। তল্লাশিচৌকি ছাড়াও মহাসড়কের সঙ্গে বিভিন্ন সংযোগ সড়ক ও আঞ্চলিক সড়কেও পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে।

Also Read: আরিচা ও হেমায়েতপুর মহাসড়কে ঢাকাগামী যানবাহন কম, তল্লাশি অব্যাহত

পুলিশ বলছে, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে সামনে রেখে কোনো ধরনের নাশকতার ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য এসব স্থানে তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। এসব তল্লাশিচৌকিতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা ও গাড়ির ভেতরে থাকা মালপত্র তল্লাশি করছেন। এ ছাড়া যাত্রীদের কাছে ঢাকায় যাওয়ার কারণ জানতে চাইছেন পুলিশ সদস্যরা। ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এসব তল্লাশিচৌকি চালু থাকবে বলে জানা গেছে।

বেলা ১১টার দিকে সাহেপ্রতাবে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কে যাত্রীবাহী যানবাহনের সংখ্যা খুবই কম। দীর্ঘক্ষণ পরপর একটি-দুটি করে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে। গতকালের মতো সেখানে কোনো তল্লাশিচৌকি দেখা গেল না। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তল্লাশিচৌকিটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বাগহাটা এলাকায়। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ঢাকাগামী সব ধরনের যানবাহনকে হাতের ইশারায় থামাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। সামনে থেমে থাকা বাসে দু-তিনজন পুলিশ সদস্য উঠছেন, তাঁরা দীর্ঘসময় ধরে মালামাল তল্লাশি ও যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এরপর পুলিশ সদস্যরা বাসের মাল রাখার বক্স খুলে তল্লাশি করছেন। এ সময় বাসের ক্ষুব্ধ যাত্রীরা বিরক্ত হয়ে কেউ ঘড়ি দেখছিলেন। আবার অনেকে বাস থেকে নেমে হাঁটাহাঁটি করছিলেন।

তল্লাশিচৌকিতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা ও গাড়ির ভেতরে থাকা মালপত্র তল্লাশি করছেন

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলখানার মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তল্লাশিচৌকিতে সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকাগামী অন্তত ১০টি যাত্রীবাহী বাস থেমে আছে। ঢাকামুখী প্রান্ত বন্ধ করে এসব গাড়িতে তল্লাশি করছিলেন পুলিশ সদস্যরা। তবে এ সময় এনা পরিবহনের একটি বাসকে তল্লাশি ছাড়াই চলে যেতে দেখা গেছে। এ তল্লাশিচৌকি পেরিয়ে যেতে একেকটি গাড়িকে অন্তত এক ঘণ্টা করে সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ চৌকিতে মাইক্রোবাস, ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি, পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলের যাত্রীদের তল্লাশি করতে দেখা গেছে। তবে ঢাকা থেকে অন্য জেলাগামী কোনো যানবাহনে তল্লাশি করা হয়নি।

তল্লাশির সময় বাসের এক যাত্রী জানালায় মুখ রেখে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মাকে দেখতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে এ পর্যন্ত তিনবার পুলিশি তল্লাশিতে পড়েছি। একটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে মহাসড়কের পথে পথে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের এই ভোগান্তির কোনো মানে আছে?’

Also Read: চারজন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বাসচালক নূরুল ইসলাম, চার স্থানে তল্লাশি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা রয়েল পরিবহনের বাসচালক রিপন মিয়া বলেন, ‘চেকপোস্টে এক ঘণ্টা-দেড় ঘণ্টা সময় ধরে আটকে থাকতে হচ্ছে। পুলিশ প্রতিবারই বাসে ঢুকে যাত্রীদের কাছে ঢাকায় যাওয়ার কারণ জানতে চাইছেন। মালামাল তল্লাশি করছেন। আবার গাড়ির কাগজপত্রও দেখতে চাইছেন। একের পর এক চেকপোস্ট পার হয়ে কখন ঢাকায় পৌঁছাতে পারব, আল্লাহ জানে!’

জানতে চাইলে নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত তল্লাশিচৌকিগুলোতে পুলিশ দিনরাত ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা যেন কোনো ধরনের নাশকতা করতে না পারেন, সে জন্য এসব তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। নাশকতার কোনো উপকরণ না পেলে কাউকে আটক করা হচ্ছে না, কাউকে অযথা হয়রানিও করা হচ্ছে না। কেবল কাউকে সন্দেহ হলেই ওই যাত্রীর সঙ্গে থাকা ব্যাগ কিংবা বস্তা খুলে দেখা হচ্ছে।

Also Read: রাজধানীর প্রবেশপথে পুলিশের চৌকি, ব্যক্তিগত যানবাহনেও তল্লাশি