রাজধানীর প্রবেশপথে পুলিশের চৌকি, ব্যক্তিগত যানবাহনেও তল্লাশি

দূরপাল্লার প্রতিটি বাস থামিয়ে ভেতরে গিয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে
ছবি: আশরাফুল আলম

রাজধানীর প্রবেশপথগুলোয় তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসে বেশি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত যানবাহনেও তল্লাশি চালাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

আগামীকাল শনিবার বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে পুলিশ এসব তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে বলে দলটি অভিযোগ করেছে। তবে পুলিশের দাবি, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই এই তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

আজ শুক্রবার গাবতলী এলাকায় দেখা যায়, গাবতলী-আমিনবাজার সেতুর মুখে গাবতলী অংশে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। কুষ্টিয়া, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়া, রাজবাড়ী, পাবনাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দূরপাল্লার প্রতিটি বাস থামিয়ে ভেতরে গিয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কাউকে সন্দেহভাজন মনে হলে, ওই যাত্রীর সঙ্গে থাকা ব্যাগ কিংবা বস্তা খুলে দেখা হচ্ছে।

এই প্রতিবেদক আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত গাবতলী এলাকায় ছিলেন। সেখানে দেখা যায়, দুই ঘণ্টায় প্রায় ৩০টি বাসসহ কয়েকটি প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলে তল্লাশি চালানো হয়। আর তল্লাশি চালাতে গাবতলী-আমিনবাজার সেতুর ওপর চারটি ব্যারিকেড বসিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ সময় পুলিশের তল্লাশিচৌকির পাশে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য করা দারুসসালাম থানা আওয়ামী লীগের প্যান্ডেলও দেখা গেছে।

গাড়ির ভেতর অন্তত দুজন করে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) যাচ্ছেন। আর তাঁদের সঙ্গে কয়েকজন আনসার সদস্যও দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তল্লাশিচৌকির পাশেই টানানো একটি প্যান্ডেলের নিচে পুলিশের আরও সাতজন এসআই, এএসআই (সহকারী উপপরিদর্শক) এবং কনস্টেবল অবস্থান করছেন। আনসার সদস্য রয়েছেন আরও কমপক্ষে ১৫ জন।

আরও পড়ুন

পুলিশ ও আনসার সদস্যদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। যাত্রীদের তল্লাশির সময় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও চালকের কাগজপত্র যাচাই করছেন।

পাবনা থেকে আসা হাসিব পরিবহনের একটি গাড়ির চালক মো. রুবেল মিয়া বলেন, ঢাকায় আসার পথে তিনি চারটি স্থানে তল্লাশির মুখে পড়েছেন। এগুলো হচ্ছে—ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দেউহাটা এলাকা, চন্দ্রা মোড়, নবীনগর এবং সবশেষ গাবতলীতে। তবে তাঁর বাসের কোনো যাত্রীর কাছেই পুলিশ সে রকম কিছু পায়নি। তাই কাউকে আটক করাও হয়নি বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন

অভি ট্রাভেলস নামের আরেকটি বাসের সুপারভাইজার মো. রিকাত আলী বলেন, টাঙ্গাইলের হাঁটুভাঙা ও সাভারের আমিনবাজারে তাঁর বাসে তল্লাশি চালানো হয়েছে। পুলিশ যে যাত্রীদের সন্দেহ করে, তাঁদের শরীর ও ব্যাগ তল্লাশি করে দেখছে।

সেতু থেকে গাবতলীতে নামার ঢালেই তল্লাশিচৌকি বসানোর কারণে রাজধানীতে ঢোকার আগে সামান্য যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবহনচালক ও শ্রমিকেরা। মৌমিতা পরিবহনের সুপারভাইজার আশিক হাসান বলেন, এমনিতেই শুক্রবার, এর মধ্যে আবার বিএনপির সমাবেশ। তাই রাস্তায় অন্য শুক্রবারের তুলনায় বাসের সংখ্যা কম দেখা যাচ্ছে। শুধু আমিনবাজারে এসে সেতুতে ওঠার আগে তিনি কিছুটা যানজট পেয়েছেন।

মোটরসাইকেল কিংবা ব্যক্তিগত যানবাহনেও তল্লাশি চালাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা
ছবি: আশরাফুল আলম
আরও পড়ুন

একটি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে মিরপুরের বাসায় ফিরছিলেন ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি মো. সোহাগ আলী। তিনি সাভারে একটি এলাকায় কাজে গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে যন্ত্রাংশ রাখার একটি প্লাস্টিকের বাক্স এবং ব্যাগে আরও কিছু বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ছিল। পুলিশের সদস্যরা প্লাস্টিকের বাক্স এবং ব্যাগ খুলে যন্ত্রাংশ বের করে তল্লাশি চালান। এ সময় তাঁর দেহেও তল্লাশি চালানো হয়।

সোহাগ আলী বলেন, ‌‘পুলিশ তাঁদের কাজ করছে। আমরা তো কোনো অপরাধী নই। তাঁরা অপরাধীদের ধরে বিচার করুক।’

গাবতলীতে তল্লাশি কার্যক্রম চালাচ্ছেন দারুসসালাম থানার পুলিশের সদস্যরা। জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন এসআই প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই এই তল্লাশি চালানো হচ্ছে। বিজয় দিবস ও রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচিকে ঘিরে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা কিংবা নাশকতা না হয়। ব্যাগে সন্দেহজনক কিছু আছে মনে হলে, সেগুলো খুলে দেখা হচ্ছে।