Thank you for trying Sticky AMP!!

গাজীপুরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম

গাজীপুরে আলোচিত শ্রমিকনেতা শহিদুল হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে যা বলছে পুলিশ

গাজীপুরের টঙ্গীতে বহুল আলোচিত শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাতে আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় এক প্রভাবশালী জমি ব্যবসায়ীর ভাই ও একটি কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তাও আছেন। এই দুজনের ‘ইশারা’তেই শহিদুলকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছে পুলিশ।

মামলার তদন্ত তদারক কমিটির প্রধান ও গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইমরান আহম্মেদ অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার তথ্য প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। অনলাইনে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

শহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন। গত বছরের ২৫ জুন টঙ্গীর সাতাইশ বাগানবাড়ি এলাকার ‘প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড’ কারখানায় শ্রমিকদের পাওনা টাকা আদায় সংক্রান্ত কাজ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন। এ ঘটনায় ২৬ জুন টঙ্গী পশ্চিম থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি কল্পনা আক্তার। প্রাথমিক অবস্থায় মামলাটির তদন্ত করছিল টঙ্গী পশ্চিম থানা-পুলিশ। পরবর্তী সময়ে ৬ জুলাই মামলার তদন্তভার পায় জেলা শিল্প পুলিশ। এর প্রায় ৮ মাস পর গতকাল শনিবার রাত ৮টার দিকে অভিযোগপত্র দাখিল করল পুলিশ।

Also Read: শ্রমিকনেতা শহিদুল হত্যা: মালিকপক্ষের ‘ভাড়াটে হয়ে’ হামলা

অভিযোগপত্রে নাম উল্লেখ করা ১৪ আসামি হলেন মাজাহারুল ইসলাম (৩৫), আকাশ আহম্মেদ ওরফে বাবুল (৪৩), রাসেল মণ্ডল (৩৫), রাইতুল ইসলাম ওরফে রাতুল (১৯), সোহেল রানা (২৩), জুলহাস আলী (২৩), সোহেল হাসান সোহাগ (২৬), শাহীনুল ইসলাম (২১), শাকিল মোল্লা (২৩), মো. আমির হোসেন (৪০), মো. হালিম মিয়া (৪২), মো. রফিকুল ইসলাম (৪৬), জুয়েল মিয়া (২২) ও আবু সালেহ (৩৯)।

এর মধ্যে মো. আমির হোসেন টঙ্গীর সাতাইশের প্রভাবশালী জমি ব্যবসায়ী মো. কামরুজ্জামান ওরফে কামরুলের ছোট ভাই। কারখানাটি গড়ে উঠেছে তাঁরই বিক্রি করা জমিতে। সেই সূত্রে আমির হোসেন ওই কারখানায় ঝুট ব্যবসা করতেন। মো. হালিম মিয়া এলাকায় কামরুলের জমি ব্যবসার ‘প্রজেক্ট ইনচার্জ’ হিসেবে পরিচয় দেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। আবু সালেহ ‘প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেডের’ অ্যাডমিন ম্যানেজার। মো. মাজাহারুল বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের টঙ্গী পশ্চিম থানার সাধারণ সম্পাদক। বাকি আসামিরা কেউ শ্রমিকনেতা, কেউ স্থানীয় বাসিন্দা।

অ্যাডমিন ম্যানেজার জড়িত থাকলে কারখানার মালিক জড়িত থাকে না কীভাবে, এটা আমার বোধগম্য নয়।
কল্পনা আক্তার, মামলার বাদী

অভিযোগপত্র ও মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের বেতনের সমস্যা নিয়ে কাজ করতেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করতেন মো. মোস্তফা, আক্কাছ ও শরিফ নামে আরও তিন শ্রমিকনেতা। এর মাঝে বিভিন্ন কারখানায় কমিটি দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁদের সঙ্গে শ্রমিকনেতা মাহাজারুল ও রাসেল মণ্ডলদের বিরোধ হয়। এরপর শহিদুলরা কাজ করতেন নগরের গাছা থানা এলাকায়। মাজাহারুলরা কাজ করতেন টঙ্গীর সাতাইশ এলাকার বিভিন্ন কারখানায়। গত ২৫ জুন শহিদুলরা বেতন–ভাতার সমস্যা সমাধান করতে হঠাৎ করেই টঙ্গীর সাতাইশের প্রিন্স জ্যাকার্ড কারখানায় ঢুকে পড়েন। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি মাজাহারুল ও তাঁর লোকজন।

Also Read: শ্রমিকনেতা শহিদুল হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইলেন বিজিএমইএ সভাপতি ও ইউরোপীয় কূটনীতিকেরা

অভিযোগপত্রে বলা হয়, মে ও জুন মাসের বেতন ও ঈদ বোনাসকে কেন্দ্র করে ২৫ জুন দুপুর থেকে প্রিন্স জ্যাকার্ড কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। খবর পেয়ে শ্রমিকদের বেতন আদায় করে দিতে বিকেলে কারখানাটিতে যান শহিদুল, মোস্তফা, আক্কাছ ও শরিফ। বেতন–ভাতার বিষয়ে কথাবার্তা বলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কারখানা থেকে বের হন তাঁরা। এর মাঝেই স্থানীয় প্রভাবশালী মো. আমির হোসেন ও কারখানার অ্যাডমিন ম্যানেজার মো.সালেহর ‘ইশারায়’ মাজাহারুলরা শহিদুলদের ওপর চড়াও হন। শহিদুলকে মারধর করেন। পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে মারা যান শহিদুল।

মামলার তদন্ত তদারক কমিটির সভাপতি ও গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের তদন্ত ও সাক্ষ্যপ্রমাণে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী আমির হোসেন ও কারখানার কর্মকর্তা আবু সালেহর নাম উঠে এসেছে। মুলত তাঁদের ইশারা-ইঙ্গিতেই অন্য আসামিরা শহিদুলের ওপর হামলা চালিয়েছে। মামলাটি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ছিল। সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করেই অভিযোগপত্র দায়ের করেছি।’

Also Read: শ্রমিকনেতা শহিদুল হত্যায় পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের কেউ জড়িত নন, দাবি সংবাদ সম্মেলনে

অভিযোগপত্রের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মামলার বাদী কল্পনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অ্যাডমিন ম্যানেজার জড়িত থাকলে কারখানার মালিক জড়িত থাকে না কীভাবে, এটা আমার বোধগম্য নয়। তা ছাড়া আমির হোসেন ও হালিম মিয়া প্রভাবশালী ব্যবসায়ী কামরুলের লোক। কামরুলের নির্দেশেই তারা কাজ করত। কিন্তু অভিযোগপত্রে কামরুল বা কারখানার মালিকের নাম নেই। আমরা এ বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’