শ্রমিকনেতা শহিদুল হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইলেন বিজিএমইএ সভাপতি ও ইউরোপীয় কূটনীতিকেরা

কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলসের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিজিইমএইর সভাপতির ফারুক হাসানের সাক্ষাত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়েছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের টঙ্গীতে শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আজ বৃহস্পতিবার উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি এ দাবি জানান। বিজিএমইএর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

সন্ত্রাসীদের হামলায় শহিদুল ইসলাম নিহত হওয়ার পর মামলা হয়েছে। শ্রমিকনেতারা এটিকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বললেও বিজিএমইএর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শহিদুল ইসলামের ‘মৃত্যু’ শব্দটি বেশ কয়েকবার ব্যবহার করা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি ঘটনার স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তপূর্বক শহিদুল ইসলামের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার জোর দাবি জানান। একই সঙ্গে তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এ ছাড়া তিনি তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তদন্তের বিষয়ে শতভাগ জবাবদিহি দাবি করেন।

কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রতিনিধিদলে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ডেপুটি হেড অব মিশন বার্ন্ড স্প্যানিয়ার, জার্মানি দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন জ্যান জানোস্কি, ইউকে হাইকমিশনের ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর ডানকান ওভারফিল্ড, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এ দেশীয় পরিচালক টুমো পাউটিআইনেন, মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা লীনা খান, কানাডা হাইকমিশনের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর ব্র্যাডলি কোটস এবং ইউকে হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল) ভ্যানেসা বিউমন্ট। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম, মো. নাসির উদ্দিন প্রমুখ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, কানাডার হাইকমিশনারের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা অনতিবিলম্বে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

ঈদুল আজহার আগে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা না দেওয়ায় গত ২৫ জুন রাত সাড়ে নয়টার দিকে টঙ্গীর সাতাইশ বাগানবাড়ী এলাকার ‘প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেডে’ যান শহিদুল। সেখানে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে কারখানা থেকে বের হয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর তাঁর ওপর হামলা চালান সন্ত্রাসীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় শহিদুলকে গাজীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ২৬ জুন টঙ্গী পশ্চিম থানায় হত্যা মামলা করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি কল্পনা আক্তার। এতে আসামি হিসেবে যে ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের পাঁচজনই আরেকটি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন নামে ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে মালিকপক্ষের হয়ে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে।

কল্পনা আক্তার অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা মালিকপক্ষের ভাড়াটে সন্ত্রাসী। তাঁরা শ্রমিকনেতা পরিচয় দিয়ে হোক, গুন্ডা পরিচয় দিয়ে হোক, মালিকপক্ষের হয়ে হামলা চালিয়েছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মাজাহারুল নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মাজাহারুল বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের টঙ্গী পশ্চিম থানার সাধারণ সম্পাদক।

শহিদুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের পর ৫ জুলাই রাজধানীর রামপুরায় বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যালয় পরিদর্শন করেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি সেদিন শহিদুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিন্দা প্রকাশের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি বলেন, মামলাটির তদন্তে সার্বক্ষণিক নজর থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের।