যমজ দুই ভাই কবরে, মা-বোন হাসপাতালে, বাবা বাকরুদ্ধ
দুই বছর বয়সী যমজ শিশু হাসান ও হোসেনের যাদবপুর গ্রামজুড়ে অনেকটাই নীরবতা। এর মধ্যে একটি বাড়িতে চলছিল মাতম। এই দুই শিশুর বাবা হেলাল মুন্সী ও দাদি রেণুকা বেগমের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
আজ শনিবার সকালে হাসান-হোসেনের নিথর দেহ যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নেওয়া হয়। চোখের জলে শেষবিদায় জানাতে গ্রামের হাজারো মানুষ তাদের জানাজায় অংশ নেন। জানাজা শেষে যাদবপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থিত যাদবপুর মুন্সীবাড়ি পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। নিহত শিশুদের জন্য দোয়া করতে সেখানেও শত শত মানুষ উপস্থিত হন।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসান-হোসেনের মা তাদের কোলে নিয়ে ইজিবাইকে চড়ে যশোর শহরে যাচ্ছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল এই যমজ ভাইদের একমাত্র বোন খাদিজাকে চিকিৎসক দেখানো। পথে যশোর-মাগুরা মহাসড়কের লেবুতলা এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে দ্রুতগতিতে আসা যাত্রীবাহী একটি বাস ইজিবাইকটিকে ধাক্কা দেয়। হাসান-হোসেনসহ ঘটনাস্থলেই ছয়জন নিহত হন। তাদের মা সোনিয়া বেগম ও বোন খাদিজার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। সোনিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও খাদিজাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শুধু হাসান-হোসেন নয়, ওই ইজিবাইকে থাকা তাদের নানি মহিমা খাতুন, মহিমা খাতুনের বোন রহিমা খাতুন, রহিমা খাতুনের সাড়ে চার বছর বয়সের মেয়ে জেবা খাতুনও একই সঙ্গে প্রাণ হারায়।
তাদের মধ্যে হাসান, হোসেন ও তাদের নানি মহিমা খাতুনকে বাঘারপাড়া উপজেলার যাদবপুর গ্রামে ও মহিমার বোন রহিমা ও রহিমার মেয়ে জেবাকে পার্শ্ববর্তী সেকেন্দারপুর গ্রামে এবং ইজিবাইকের চালক ইমরান হোসেনকে মথুরাপুর গ্রামে পৃথক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
Also Read: ‘এতগুলো লাশ আমি কেমনে বহন করব’
যাদবপুর গ্রামে হাসান ও হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের দাদি রেণুকা বেগম আহাজারি করে চলেছেন। তিনি বলছেন, ‘আমার মণিগের আইনে দ্যাও তোমরা। হাসান-হোসেন আমার পরান। আমি এখন কার নিয়ে থাকপো। ওরে আমার খাদিজা কনে গেল।’ প্রতিবেশী নারীরা হাতপাখার বাতাস দিয়ে তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন।
হাসান–হোসেনের বাবা হেলাল মুন্সী ঢাকার একটি লেদার কারখানায় চাকরি করেন। স্ত্রী-সন্তানদের হতাহত হওয়ার খবর পেয়ে রাতেই তিনি যাদবপুর গ্রামে পৌঁছান। সকালে দুই ছেলের লাশের খাটিয়া কাঁধে নিয়ে তিনি কবরস্থানে যান। তিনি অনেকটাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এদিকে তাঁর স্ত্রী সোনিয়া খাতুন এখনো শঙ্কামুক্ত নন।
সোনিয়ার সঙ্গে থাকা তাঁর মামা বিল্লাল হোসেন আজ শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সোনিয়ার মাথা, চোখ, বুক ও চার হাত-পায়ে জখম হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, তার অবস্থা আগের চেয়ে একটু ভালো হলেও শঙ্কামুক্ত না।’
আরও পড়ুন
-
যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটিতে চড়াও পুলিশ, হার্ভার্ডে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার
-
কুমিল্লার চার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের স্বজনেরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী
-
দক্ষিণ কোরিয়ার আদালতের তথ্য চুরি করল উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা
-
ছয় মাস ধরে নিখোঁজ যুবককে পাওয়া গেল মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমে, পেটে কাটা দাগ
-
খালের বর্জ্যে পাওয়া খাট–লেপ-তোশক ও সোফা–কমোড নিয়ে প্রদর্শনী