Thank you for trying Sticky AMP!!

নদ-নদীর পানি বেড়ে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শনিবার কুড়িগ্রামের পাটেশ্বরী গ্রামে

‘ঘরোত এক গলা পানি, থাকি কেমন করি’

‘ঘরোত এক গলা পানি, থাকি কেমন করি। পাঁচ দিন ধরে পানি এমন বাড়ে, উপায় না পায়া ছাওয়াপাওয়া ধরি সড়কের পূর্ব পাশে সলিমুদ্দিনের বাড়িত যায়া উঠি। আগে বাড়ি আছিল জগমোহনের চরে। গত বছর নদীত বসতভিটা ভাঙ্গি গেইলে এটে আসি উঠি। গরিব মানুষ মাটি কাটি উঁচা করবার পারি নাই। যে কামাই, খাইতে কুলায় না। আর বাড়িভিটা উঁচা করা।’

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মধ্য কোমরপুর এলাকার দিনমজুর মো. হারা উদ্দিন কথাগুলো বলছিলেন। উজানের পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদীর পানি বেড়ে হারা উদ্দিনের বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। একই অবস্থা হারা উদ্দিনের ভাই রিকশাচালক মো. মানা উদ্দিনেরও।

Also Read: দুধকুমারের পর ধরলার পানিও বিপৎসীমার ওপরে, কুড়িগ্রামে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ

কুড়িগ্রাম শহর থেকে ধরলা নদী পার হয়ে ভূরুঙ্গামারী সড়ক দিয়ে সামনে যেতেই সড়কের দুই পাশে গ্রামীণ জনপদ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের জগমোহনের চর, নানকা, কাইমবড়াই বাড়ি এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।

নানকা চরের দিনমজুর মো. গনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে বাড়ি আছিল নদীর পশ্চিম পাড়ে। কয়েক বছর আগে ভাঙ্গি গেইলে এটে উঠি আসি। বাড়িত অর্ধেক পানি। এক বাড়িত আশ্রয় নিয়া আছি। কামকাজ নাই। ছাওয়াপাওয়া ধরি খুব কষ্টে আছি। এ্যালাও কোনো ত্রাণ পাই নাই।’

Also Read: কুড়িগ্রামে দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ওপরে, পানিবন্দী দুই শতাধিক পরিবার

কিছু দূর এগোতেই কোমরপুর বাজার। বাজারের পশ্চিম পাশে ফুলবাড়ী উপজেলা যাওয়ার পাকা সড়ক। আজ শনিবার দুপুর ১২টায় সেখানে গিয়ে সড়কে হাঁটুসমান পানি দেখা যায়। বাজারের এক চায়ের দোকানদার বলেন, টানা দুই দিন ধরলা নদীর পানি বাড়ায় কোমরপুর-পাখিউড়া সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দুই দিন দোকানে আসতে পারেননি। দোকান বন্ধ ছিল। আজ একটু পানি কমায় দোকানে এসেছেন। গরিব মানুষ দোকান না খুললে কী খাব, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, উজানের পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের ১৬টি নদ-নদীর পানি বেড়ে ৯ উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের ১৮৫টি গ্রামের ৫৬ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া জেলার ৪২০টি চরের বেশির ভাগ চরে পানি উঠেছে। নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাগেশ্বরী উপজেলা থেকে আয়নালের ঘাট পার হয়ে কচাকাটা থানায় যেতে বন্যার পানির স্রোতে আনন্দবাজার-সংলগ্ন লুচনী নুরানি মাদ্রাসা ও টেপার কুঠি মাদ্রাসার দুই জায়গায় ভেঙে গেছে। এতে উপজেলা শহরের সঙ্গে কচাকাটা থানার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বর্তমানে পানি কিছুটা কমে যাওয়ায় পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। তবে দুই জায়গায় সড়কের ওপর দিয়ে এখনো প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানির স্রোতে লুচনী নুরানি মাদ্রাসা ও টেপার কুঠি মাদ্রাসা-সংলগ্ন কয়েকটি ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। এ এলাকার ৮০ ভাগ বাড়িতে বন্যার পানি উঠেছে। বাসিন্দাদের অধিকাংশই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন।

একই উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়ন থেকে কয়েক কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ধরে পূর্ব দিকে গেলে দুধকুমার নদের তীরে নুনখাওয়া ইউনিয়ন। ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ নদবেষ্টিত দ্বীপচরের বাসিন্দা। নুনখাওয়া বাজারের পাশে নৌকা ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে নদ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় চরে। দুধকুমার নদের এসব দ্বীপচরের একটি ফকিরপাড়া। গত বৃহস্পতিবার থেকে নদের পানি বাড়ায় ফকিরপাড়া গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।

উজানের পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের ১৮৫টি গ্রামের ৫৬ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন

ফকিরপাড়া গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে কলা গাছের ভেলায় করে মাছ ধরতে যাচ্ছিলেন রেজাউল ইসলাম (৩৫)। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে বাড়িতে পানি। এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যেতে হলে ভিজতে হয়। বন্যার সময় হাতে কোনো কাজকাম নাই। তাই কলাগাছের ভেলায় করে জাল দিতে যাচ্ছি। তরকারির খুব কষ্ট, যদি কয়ডা মাছ পাওয়া যায়। এ আশায় জাল নিয়ে বের হইছি।’

এদিকে ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলের কারণে কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত দুই দিনের তুলনায় আজ সকাল থেকে নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি এখনো বিপৎসীমার ওপরে আছে।

Also Read: কুড়িগ্রামে নদীভাঙন

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, আজ বেলা ৩টায় দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার এবং তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ প্রথম আলোকে বলেন, কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের ১৮৫টি গ্রামের ৫৬ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। তাঁদের মধ্যে ইতিমধ্যে ২৭৫ মেট্রিক টন চাল, ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চরাঞ্চলের যেসব পরিবারের টিউবওয়েল পানির নিচে তলিয়ে গেছে, তাঁদের জন্য পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও শুকনা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত জেলায় ২১টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।