রেলমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুললেন জেলার সাধারণ সম্পাদক
পদ থেকে সরানোর ঘোষণা দেওয়ায় পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অগঠনতান্ত্রিক ও মনগড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত। আজ শুক্রবার দুপুরে পঞ্চগড় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা আনোয়ার সাদাত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ আসনে (সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছেন। এ জন্য তিনি ‘দলীয় দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না’ মন্তব্য করে বুধবার সন্ধ্যায় আনোয়ার সাদাতের জায়গায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু সারোয়ারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল ইসলাম।
রেলপথমন্ত্রীর এমন ঘোষণার নিন্দা জানিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন আনোয়ার সাদাত। আজকের তাঁর সংবাদ সম্মেলনে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত হন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপেন চন্দ্র রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী, দপ্তর সম্পাদক মাসুদ পারভেজ হিটলার, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক সপিয়ার রহমান, জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান, জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমানসহ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ।
সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ার সাদাত বলেন, ‘হঠাৎ করে একটি পাবলিক মিটিংয়ে তিনি (নূরুল ইসলাম) এই ঘোষণা দিয়েছেন। আমাকে এই মিটিং সম্পর্কে অবগতও করা হয়নি। পরে বিষয়টি আমি বিভিন্ন মাধ্যমে জেনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরা আমাকে জানান, বাংলাদেশের কোথাও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীও দিয়েছেন এবং আমরা যারা মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছি, তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। এখানে আমরা বর্তমান সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধানসহ দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলাম। পরে আমাদের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি। দলীয় নির্দেশনা পেলে আমি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতাম। কিন্তু দল থেকে যেহেতু উৎসাহিত করা হয়েছে, এ জন্য আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল ইসলাম ‘হুট করে’ আবু সারোয়ারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন বলে দাবি আনোয়ার সাদাতের। তিনি বলেন, ‘আমি গঠনতন্ত্র সঙ্গে নিয়ে এসেছি। তাতে স্পষ্টভাবে লেখা আছে, দলের কোনো নেতার পদের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি। আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে নূরুল ইসলামকে সভাপতি এবং আমাকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তিনি সাধারণ সম্পাদকের পদ অন্য কাউকে দিতে পারেন না।’
আনোয়ার সাদাত আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের ভার্চ্যুয়াল নির্বাচনী জনসভাতেও প্রধানমন্ত্রী দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন করার বিষয়ে স্পষ্টভাবে বলেছেন। সেখানে রেলমন্ত্রী কীভাবে এমন সিদ্ধান্ত দেন তা আমার বোধগম্য নয়। আমি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রেলমন্ত্রীর দেওয়া কোনো অগঠনতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারি না। আমাকে আমার দলের নেত্রী শেখ হাসিনা যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো সিদ্ধান্ত দিলে আমি তাৎক্ষণিকভাবে সেটি মেনে নিতে বাধ্য।’
এমন ঘোষণার পেছনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল ইসলামের ‘নিশ্চয়ই কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে’ বলে মনে করেন সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত। তিনি বলেন, পঞ্চগড়-১ আসনে যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, সে জন্য হয়তো এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তাঁর এই সিদ্ধান্তের ফলে গোটা জেলায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। হতাশা বিরাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আজ বিকেলে পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলামের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘এটা তো দলীয় ব্যাপার, মাঠের ব্যাপার নয়। যেহেতু তিনি সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। তিনি নৌকার প্রার্থীও না। এ জন্যই এটা করা হয়েছে।’
আনোয়ার সাদাতকে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নে নূরুল ইসলাম বলেন, যেহেতু নির্বাচনকালে তিনি দায়িত্ব পালন করার মতো অবস্থায় নেই, সে জন্য পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু সারোয়ার দায়িত্ব পালন করবেন।
পঞ্চগড়-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া। তাঁকে ‘হাইব্রিড’ মন্তব্য করে গত ২৭ নভেম্বর তাঁর মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলের কয়েকজন নেতা। সংবাদ সম্মেলনটিতে বক্তব্য দিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত, আটোয়ারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আটোয়ারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ টি এম সারোয়ার হোসেন, তেঁতুলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান প্রমুখ।
আরও পড়ুন
-
রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারচর্চার খোঁজ নিলেন লু
-
নতুন করে রিজার্ভ চুরি হয়নি: বাংলাদেশ ব্যাংক
-
‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন মেরিনা, পিতার নাম ছাড়াই সব সুবিধা পাবেন তিনি
-
ছাত্রলীগের ওপরে কোনো সন্ত্রাস নাই, কোনো শক্তি নাই: জাজিরা ছাত্রলীগের সভাপতি
-
‘সন্তান দুনিয়াতে আসবে, দেখতে পাব কি না, জানতাম না’