নাঈমুজ্জামানের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন

পঞ্চগড়-১ আসনে নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়ার মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সোমবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

পঞ্চগড়-১ আসনে (সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী) জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়ার মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন দলের কয়েকজন নেতা। দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী রাজনীতিবিদদের মধ্যে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তাঁরা একসঙ্গে কাজ করার কথা বলেছেন।

সোমবার বিকেলে পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় চত্বরে জেলা, উপজেলা, পৌর আওয়ামী লীগের নেতা ও সব সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত, আটোয়ারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আটোয়ারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম বক্তব্য দেন। তাঁরা তিনজনই দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ টি এম সারোয়ার হোসেন, তেঁতুলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান প্রমুখ।

তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পঞ্চগড়-১ আসনে যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তিনি কখনোই আওয়ামী লীগের মাঠের রাজনীতিতে ছিলেন না। কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে যাঁকে পাওয়া যায়নি, তাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পঞ্চগড় জেলার পুরো আওয়ামী লীগকে অপমান করা হয়েছে। তাঁরা চান, এই মনোনয়ন পরিবর্তন করা হোক। ‘হাইব্রিডদের’ আগমনের মধ্য দিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ, তাঁরা যখন আসবেন, তাঁরা দেখবেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাদ দিয়ে আলাদাভাবে বলয় তৈরি করবেন। অন্যভাবে নিজেদের স্বার্থে দলটিকে পরিচালনা করা চেষ্টা করবেন।

আনোয়ার সাদাত বলেন, নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া কোনো দিন ছাত্রলীগ, যুবলীগ করেননি। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর পঞ্চগড় থেকে যে কমিটি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল, সেখানেও তাঁর নামও ছিল না। তিনি ঢাকায় তদবির করে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে ঢুকেছেন। সেই কমিটিতে ঢোকার দুই বছর না পার হতেই তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি দলের কেউই মেনে নিতে পারছেন না। পঞ্চগড়ের মাটির সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহী’ দাঁড় করিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান বলেন, যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তিনি ১০ শতাংশ ভোটও পাবেন না। এই প্রার্থীকে দলের কোনো নেতা-কর্মীই মেনে নিতে পারছেন না। এই এলাকায় তাঁর কোনো পরিচিতি নেই। তাঁর মনোনয়নের বিষয়টি দলের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। তাঁরা এ মনোনয়ন বাতিল চান।

নাঈমুজ্জামানের মনোনয়ন বাতিল না হলে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মজাহারুল হক প্রধান বলেন, ‘আমরা এইমাত্র ঢাকা থেকে ফিরেছি। পরবর্তী সময়ে দলীয়ভাবে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

তৌহিদুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, এবারের নির্বাচন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ওপেন’ করে দিয়েছেন। এই মনোনয়ন যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে দলের নেতারা সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁদের মধ্য থেকে যে কেউ নির্বাচন করলে, তাঁরা তাঁর সঙ্গে থাকবেন।

নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তৃণমূলে আমার সম্পৃক্ততা আছে কি না, সেটা ভোটে বোঝা যাবে। হাইব্রিড তো খারাপ কথা না, হাইব্রিড মানে হচ্ছে উচ্চফলনশীল। এ জন্য আমাকে হাইব্রিড বললে আমি দুঃখ পাই না। আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম নির্বাচনে আমাকে সুযোগ দিয়েছে।’

নাঈমুজ্জামান আরও বলেন, তিনি আটোয়ারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি—দুটিই সম্মেলনের মাধ্যমে হয়েছেন। তিনি একবার ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপকমিটির সহসম্পাদক, পরে টানা তিন মেয়াদে তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটির সহসম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে নাঈমুজ্জামান বলেন, ‘আমি ছাত্র ইউনিয়ন করেছি। এটা তো আমি অস্বীকার করি না। আমি ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ছাত্র ইউনিয়ন করেছি। ১৯৯৩ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করি। আমি ৩০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছি। আমি চাই, তারাও নির্বাচনে আসুক দল, যেহেতু উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তাহলে ভোটকেন্দ্রে মানুষ আসার উৎসাহ পাবে। আর তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাচনে যে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার কথা তাঁরা বলেছেন, সেটাও সঠিক। কারণ, ওই সময় নির্বাচনে বিএনপি না আসায় নির্বাচনটি উন্মুক্ত ছিল।’

সংবাদ সম্মেলনের পর শহরের প্রবেশ পথ করতোয়া সেতুর উত্তর মুখে পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়ক এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা
ছবি: প্রথম আলো

মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ

সংবাদ সম্মেলনের পর দলীয় নেতা-কর্মীরা একই দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিক্ষোভকারীরা পঞ্চগড় জেলা শহরের প্রবেশমুখে করোতোয়া সেতুর উত্তর প্রান্তে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এক ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। এ সময় সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। থেমে যায় জেলা শহরের মূল চলাচলের পথ।

এর আগে গত রোববার বিকেলে মনোনয়ন ঘোষণার পর তা বাতিলের দাবিতে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পঞ্চগড় জেলা শহরের প্রবেশমুখে করোতোয়া সেতুর উত্তর প্রান্তে প্রদর্শন করে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা, যা চলে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত। এ সময় নাঈমুজ্জামানের মনোয়ন বাতিল করে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে সদর উপজেলার জগদল বাজারে পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়ক, আটোয়ারী উপজেলার ফকিরগঞ্জ বাজারে পঞ্চগড়-আটোয়ারী সড়ক এবং তেঁতুলিয়া উপজেলা শহরের চৌরাস্তা এলাকায় তেঁতুলিয়া-বাংলাবান্ধা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।

এ সময় আটোয়ারী উপজেলা আওয়ামী লীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা সোমবার উপজেলা শহরে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের ঘোষণা দেন। সোমাবার দুপুরে আটোয়ারী উপজেলা শহরের ফকিরগঞ্জ বাজারে কিছু সময়ের জন্য নেতা-কর্মীদের পঞ্চগড়-আটোয়ারী সড়ক বন্ধ করে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।