Thank you for trying Sticky AMP!!

দলছুট নীলগাইটিকে বিকেলে বনের পাশে ঘাস খেতে দেখা যায়। রোববার দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কালিয়াগঞ্জ শালবন–সংলগ্ন কামদেবপুর এলাকায়

নিরাপদে বনেই আছে নীলগাইটি, বিকেলে ঘাস খেতে দেখা গেছে

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের কামদেবপুর কালিয়াগঞ্জ শালবন এলাকায় দেখতে পাওয়া নীলগাইটি নিরাপদে আছে। রোববার সকাল থেকে নীলগাইটির দেখা না মিললেও বিকেলে বনের পাশে ঘাস খেতে দেখেছেন অনেকেই।

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বন বিভাগের ধর্মপুর বিট কর্মকর্তা মহসিন আলী বলেন, ‘এই মুহূর্তে নীলগাইটির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। গতকালের চেয়ে আজ তাকে কিছুটা শান্ত দেখাচ্ছে। স্থানীয় উৎসুক মানুষ নীলগাই দেখতে বনের আশপাশে ভিড় করছেন। প্রাণীটিকে বিরক্ত না করতে ও কোনো ক্ষতি না করতে মানুষকে অনুরোধ করা হচ্ছে।’

Also Read: লোকালয়ে চলে আসা নীলগাইকে সুরক্ষা দিতে মসজিদে মাইকিং

গতকাল শনিবার সকাল থেকে নীলগাইটিকে বনের পাশে ধানখেতে ঘোরাফেরা করতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দলছুট হয়ে কখনো শালবনে, কখনো খেতখামারে ঘোরাফেরা করছিল নীলগাইটি। ধর্মপুর এলাকার মানুষ তাড়া করেও ধরতে পারেননি। পরে ওই এলাকার কৃষক আবুল হোসেন বোরোখেতে সেচ দিতে যাওয়ার সময় বনের পাশে বেশ কিছু উৎসুক লোককে দেখে তাঁদের কাছে যান। নীলগাইটি দেখে তিনি বিট কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে জানান।

খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট এলাকার মসজিদের মাইকে প্রচারণা চালান, ‘শালবনের আশপাশে একটি নীলগাইকে ঘুরতে দেখা গেছে। এটি শান্ত স্বভাবের বন্য প্রাণী। মানুষের ক্ষতি করে না। প্রাণীটিকে অহেতুক বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকবেন। যদি কেউ প্রাণীটির ক্ষতি করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Also Read: নীলগাই জুটির সংসারে এক জোড়া নতুন অতিথি

রোববার দুপুরে উপজেলার মঙ্গলপুর এলাকার বাসিন্দা দীপঙ্কর রায় (৩৬) বলেন, ‘প্রথম দিন নীলগাইয়ের কথা শুনে কালিয়াগঞ্জ বনে গিয়েছিলাম, কিন্তু দেখতে পাইনি। আজ দুপুরে গিয়েও দেখা পাইনি। বিকেলে শুনলাম, বনের ভেতর থেকে বের হয়ে ধানখেতের পাশে ঘাস খাচ্ছে।’ তিনি বলেন, গতবার এমন একটি নীলগাই এসেছিল, এলাকাবাসীর তাড়া খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কয়েক ঘণ্টা পর প্রাণীটি মারা যায়। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

বিট কর্মকর্তা মহসিন আলী বলেন, ‘গতকাল প্রথমে স্থানীয় ব্যক্তিদের নজরে আসে নীলগাইটি। আজ সকাল থেকে দেখা যায়নি। তবে বিকেলে নিজে কাছ থেকে দেখেছি, ছবি তুলেছি, ভিডিও করে রেখেছি। নীলগাইটি উচ্চতায় প্রায় ৫ ফুট। লম্বায় প্রায় সাড়ে ৭ ফুট। গায়ের রং ধূসর বাদামি। শিং আছে, তবে ছোট। এক জায়গায় স্থির না থাকায় স্ত্রী নাকি পুরুষ, এখনো বোঝা যাচ্ছে না। মানুষের শব্দ পেলেই দৌড়ে পালাচ্ছে।’

Also Read: ফিরে এসো নীলগাই

দলছুট নীলগাইটি মানুষের ভয়ে এদিকে–সেদিকে ঘুরছে। রোববার বিকেলে বিরল উপজেলার কালিয়াগঞ্জ শালবন–সংলগ্ন কামদেবপুর এলাকায়

বন কর্মকর্তা আরও বলেন, কালিয়াগঞ্জ শালবনের আয়তন ২ হাজার ৮৩৬ একর। শাল, সেগুন, সামাজিক বনায়নসহ প্রায় দেড় শ প্রজাতির গাছ আছে বনে। মানুষের দ্বারা বিরক্ত না হলে অনায়াসে বনে থাকতে পারবে নীলগাইটি। বন বিভাগ প্রাণীটির সুরক্ষায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

নীলগাইটির সুরক্ষায় কাজ করছেন বিজিবির এনায়েতপুর বিওপি ক্যাম্পের সদস্যরাও। ক্যাম্পের কমান্ডার সফিকুল ইসলাম বলেন, উৎসুক এলাকাবাসীর কারণে নীলগাইটির মধ্যে অস্থিরতা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে গতকালের চেয়ে আজ কিছুটা শান্ত ছিল। নীলগাইটির যাতে কেউ ক্ষতি করতে না পারে, সেটা তাঁরা খেয়াল রাখছেন।

Also Read: চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকা থেকে নীলগাই উদ্ধার

এর আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল এলাকায় কুলিক নদের ধার থেকে প্রথম নীলগাই উদ্ধার হয়েছিল। পরে সেটি দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানে নিয়ে আসা হয়। প্রায় চার মাস পর নওগাঁর মান্দা উপজেলার জোতবাজার এলাকা থেকে একটি পুরুষ নীলগাই উদ্ধার হয়। সেটিও রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানায় আনা হয়েছিল। প্রায় দেড় মাস স্ত্রী ও পুরুষ নীলগাই দুটি একত্রে থাকার পর নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে শক্ত মাটিতে ছিটকে পড়ে স্ত্রী নীলগাইটি। বুকে আঘাত পেয়ে স্ত্রী নীলগাইটির মৃত্যু হয়। এর কিছুদিন পর বন বিভাগ পুরুষ নীলগাইটিকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে স্থানান্তর করে।