নীলগাই জুটির সংসারে এক জোড়া নতুন অতিথি

ঘন বনের ভেতর শাবকগুলো নিয়ে নির্জনে অবস্থান করছে নীলগাই জুটি। আজ শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে
ছবি: প্রথম আলো

ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পৃথক দুই জেলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল দুটি নীলগাই। বন বিভাগের হস্তক্ষেপে সেগুলো জুটি বেঁধে থাকা শুরু করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। সম্প্রতি এই নীলগাই জোড়ার সংসারে এসেছে এক জোড়া নতুন অতিথি। মা–বাবার সঙ্গে শাবক দুটি ঘুরে বেড়াচ্ছে পার্কের কোর সাফারি অংশে।

আজ শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নীলগাই জুটির পরিবারে নতুন অতিথি আসার খবর জানায় গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। গত ১ আগস্ট নীলগাইয়ের শাবক দুটির জন্ম হলেও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে একটি নির্দিষ্ট সময় পর সুখবরটি জানানো হয় বলে জানিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। নীলগাইয়ের শাবক দুটি এখন সুস্থ আছে। ভালো আছে সেগুলোর মা–বাবা।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯৪০ সালে শেষবার পঞ্চগড়ে একটি নীলগাই দেখা গেছে। এরপর ৮০ বছরের বেশি সময় এ দেশের প্রকৃতিতে আর কোথাও প্রাণীটিকে দেখা যায়নি। এটিকে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়ন থেকে স্ত্রী নীলগাইটিকে উদ্ধার করা হয়। পুরুষ নীলগাইটি উদ্ধার হয়েছে তার আগের বছর (২০১৯) নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার জোতবাজার গ্রাম থেকে। দুটি জায়গাতেই স্থানীয় ব্যক্তিদের হাতে ধরা পড়ার পর নীলগাই দুটিকে জবাই করার চেষ্টা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত বন বিভাগের তৎপরতায় সেগুলোকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

নীলগাই দুটি পার্শ্ববর্তী ভারতীয় বনাঞ্চল থেকে বাংলাদেশে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। দুটি জায়গাতেই স্থানীয় ব্যক্তিদের হাতে ধরা পড়ার পর নীলগাই দুটিকে জবাই করার চেষ্টা হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কোর সাফারিতে গিয়ে দেখা যায়, ঘন বনের ভেতর শাবকগুলো নিয়ে নির্জনে অবস্থান করছে নীলগাই জুটি। লোকজনের একটু দৃষ্টি পড়লেই খুব দ্রুত শাবক দুটিকে নিয়ে স্থান পরিবর্তন করে আড়াল হয়ে যায় সেগুলো। স্থান পরিবর্তনের সময় সেগুলোকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেখা গেছে। প্রথমে বাবা নীলগাইটি নতুন সম্ভাব্য নিরাপদ স্থানটিতে একবার ঘুরে আসে। এরপর স্ত্রী নীলগাই সামনে থেকে শাবক দুটিকে নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে যায়। অন্যদিকে পেছনে পেছনে হাঁটে বাবা নীলগাই। নতুন শাবক দুটির গায়ের রং বাদামি।

খুব দূরে নির্জন স্থানে অবস্থান করায় এগুলোর দেখা পাওয়া যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। তাই ছবি পাওয়ার জন্য পার্ক কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান এগুলোর ছবি তোলার জন্য বিশেষ প্রযুক্তিসহায়তা নেন। তিনি ২৪ ঘণ্টার জন্য নীলগাইয়ের আবাসস্থলে ক্যামেরা ট্র্যাপ (স্বয়ংক্রিয় ছবি তোলার ব্যবস্থা) স্থাপন করেন। এরপর পাওয়া যায় কিছু ছবি। এতে তিনি প্রাণীগুলোর খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে ধারণা পান। নীলগাই জোড়া রাতেও ঘুরে ঘুরে খাবার খাচ্ছিল। সদ্য জন্ম নেওয়া শাবক দুটিও মা-বাবার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে খাবার খাচ্ছিল।

নীলগাই দুটির মধ্যে ঘনিষ্ঠতা অনেক।সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কোর সাফারিতে
ছবি: সাদিক মৃধা

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে উদ্ধার হওয়ার পর স্ত্রী নীলগাইটিকে গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি সাফারি পার্কে আনা হয়। একই বছরের ১৯ আগস্ট দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যান থেকে পুরুষ নীলগাইটিকে পার্কে আনা হয়। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে নওগাঁয় উদ্ধার হওয়ার প্রাণীটি রামসাগরেই ছিল। নীলগাই দুটি পার্শ্ববর্তী ভারতীয় বনাঞ্চল থেকে বাংলাদেশে এসেছে বলে ধারণা করা হয়।

আরও পড়ুন

পার্ক কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এই প্রাণীগুলোর দেখা পাওয়া যেত হরহামেশা। এখন এই দেশে নীলগাইয়ের দেখা না পাওয়া গেলেও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রায় এক লাখ নীলগাই আছে। পুরুষ নীলগাইয়ের রং গাঢ় ধূসর। অনেকটা কালচে রঙের। শরীরে অনেক সময় নীলচে আভা দেখা যায় বলেই এগুলোর নামকরণ করা হয়েছে নীলগাই। স্ত্রী নীলগাইয়ের রং লালচে বাদামি হয়। নীলগাইয়ের গড় আয়ু সাধারণত ২১ বছর।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘৮০ বছরের বেশি সময় আগে আমরা প্রকৃতি থেকে নীলগাইয়ের সমাপ্তি টেনেছিলাম। আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পার্কের প্রাকৃতিক পরিবেশে নীলগাইয়ের দুটি শাবকের জন্ম হয়েছে। বন অধিদপ্তরের মাধ্যমে পরিচালিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের হাত ধরে নীলগাই আবারও প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরে আসুক, এটাই চাই।’

আরও পড়ুন