প্রাকৃতিক পরিবেশে বংশ বৃদ্ধির আশা জাগাচ্ছে সেই নীলগাই জুটি

নীলগাই দুটির মধ্যে ঘনিষ্ঠতা অনেক।সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কোর সাফারিতেছবি: সাদিক মৃধা

দেখতে গরুর মতো না হলেও নাম তার নীলগাই। মোটেও এটি গরু নয়, দেখতে বরং অনেকটা ঘোড়ার মতো। তবে এটি ঘোড়াও নয়, নীলগাই এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ অ্যান্টিলোপ। এটির গায়ের রংকে নীলও বলা যাবে না। পুরুষ নীলগাই গাঢ় ধূসর, প্রায় কালচের কাছাকাছি আর মেয়ে নীলগাইয়ের রং লালচে বাদামি।

এই প্রাণীটি বাংলাদেশের প্রকৃতিতে একসময় ছিল। শত বছর আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড়ে প্রচুর নীলগাই দেখা যেত। কিন্তু পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে ১৯৪০ সালের পর থেকে এ দেশের বনাঞ্চলে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রাণীটিকে আর দেখা যায়নি। তাই নীলগাইকে এ দেশে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ে কয়েকটি নীলগাই ধরা পড়ার খবর পাওয়া গেলেও সেগুলো ভারতীয় বনাঞ্চল থেকে বাংলাদেশে আসে। তবে খুশির খবর হলো, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হলেও গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আছে এই প্রাণীর একটি জোড়া। পার্ক কর্তৃপক্ষ বলছে, নীলগাই দুটি আশাজাগানিয়া জুটি। এরা প্রাপ্তবয়স্ক। কর্তৃপক্ষের ধারণা, এদের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি হতে চলেছে। এই জোড়াকে পার্কের কর্মীরা কয়েকবার প্রজননের অংশ নিতে দেখেছেন।

বর্তমানে একটি নীলগাইকে খুবই কম চোখে পড়ছে। সে রহস্যজনক কারণে নিজেকে অনেক বেশি আলাদা রাখার চেষ্টা করছে।

পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নীলগাই দুটির মধ্যে ঘনিষ্ঠতা অনেক। দুটি প্রাণীই বাচ্চা জন্ম দিতে সক্ষম। আমরা নীলগাই দুটিকে পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারছি, একটা সুখবর আসন্ন। আমরা আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। হয়তো শিগগিরই সুখবর দেওয়া যাবে।’

সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে দেখা যায়, একটি বিশাল আয়তনের সংরক্ষিত বনের ভেতর নীলগাই দুটি ঘোরাফেরা করছে। পার্কের ভেতর আফ্রিকান কোর সাফারির একটি বিশাল অংশজুড়ে এদের থাকতে দেওয়া হয়েছে। অনেক দূর থেকে তাদের দেখতে হচ্ছিল। মানুষের একটু নড়াচড়া দেখলেই দৌড়ে পালায়। তবে বর্তমানে একটি নীলগাইকে খুবই কম চোখে পড়ছে। সে রহস্যজনক কারণে নিজেকে অনেক বেশি আলাদা রাখার চেষ্টা করছে।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে উদ্ধার হওয়া একটি স্ত্রী নীলগাইকে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আনা হয়। পরে স্ত্রী নীলগাইটির একাকিত্ব ঘোচাতে সেখানে আনা হয় একটি পুরুষ নীলগাই। তখন পুরুষ নীলগাইটিকে আনা হয় দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানা থেকে। এই দুটি নীলগাই পার্শ্ববর্তী ভারতীয় বনাঞ্চল থেকে এ দেশে এসেছে বলে ধারণা করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বন্য প্রাণী–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা যায়, পুরুষ নীলগাইয়ের শিং থাকে। একই প্রজাতির স্ত্রীদের ক্ষেত্রে শিং থাকে না। স্ত্রী নীলগাই প্রাপ্তবয়স্ক হয় দুই বছরে। আর পুরুষ প্রজাতি প্রাপ্তবয়স্ক হতে সময় নেয় পাঁচ বছর। এরা একসঙ্গে একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত বাচ্চা দেয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবদ্ধ জায়গায় নীলগাই জোড়া থেকে নতুন সদস্য পাওয়া গেলে সেটা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে খুব ভালো সংবাদ হবে। আমরা প্রাণীটিকে প্রাকৃতিক উন্মুক্ত স্থানে না হোক, আবদ্ধ জায়গাতেও যদি রাখতে পারি, সেটা অবশ্যই ভালো।’