Thank you for trying Sticky AMP!!

ভৈরবে ৫ দিন ওষুধ সরবরাহ বন্ধ, সিভিল সার্জনের আলটিমেটামেও কাজ হয়নি

কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্র

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ক্লিনিকমালিক ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব জেলা সিভিল সার্জনের আলটিমেটামের পরও শেষ হয়নি। উভয় পক্ষ আগের অবস্থানে অনড় আছেন। ফলে ওষুধের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় পঞ্চম দিনের মতো আজ বুধবারও ক্লিনিকের ফার্মেসিগুলো ওষুধ পাচ্ছে না। এতে একদিকে ক্লিনিকগুলোতে ওষুধের সংকট যেমন বেড়েছে, অন্যদিকে কোম্পানি প্রতিনিধিরা পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন।

সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওষুধের মতো জীবন রক্ষাকারী উপাদান নিয়ে ছেলেখেলা মোটেও ঠিক নয়। অথচ ভৈরবে এখন তাই হচ্ছে। আশা করেছিলাম গতকাল সব ঠিক হয়ে যাবে। হয়নি। এখন বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।’

Also Read: ভৈরবে ক্লিনিকমালিক ও কোম্পানির প্রতিনিধিদের দ্বন্দ্ব: সিভিল সার্জনের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্লিনিকমালিক ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দ্বন্দ্ব মেটাতে সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার উভয় পক্ষের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। সে সময় তিনি দুই পক্ষকে সংকট সমাধানে ২৪ ঘণ্টার সময় দেন। সিভিল সার্জনের হয়ে একই বার্তা দেন ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ। কিন্তু কোনো পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসতে রাজি হয়নি। দুই পক্ষই বলছে, সরে আসার প্রক্রিয়া কী হবে, কিংবা পরবর্তী সময়ের প্রভাব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না পেয়ে একসঙ্গে বসা ঠিক হবে না।

ক্লিনিকের ফার্মেসি কর্মীরা জানান, ভৈরবে অন্তত অর্ধশত বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। ভৈরব ছাড়াও কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, সরাইল, নরসিংদীর বেলাব ও রায়পুরা উপজেলার বড় অংশ স্বাস্থ্যসেবা পেতে ভৈরবের ক্লিনিকগুলোতে আসেন। সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার ছাড়াও প্রতিটি ক্লিনিকে দৈনিক গড়ে পাঁচটি করে অস্ত্রোপচার হয়। বহির্বিভাগে গড়ে ৫০ জন করে রোগী স্বাস্থ্যসেবা নেন। প্রত্যেক রোগীর বিপরীতে ওষুধের প্রয়োজন হয়। বেশির ভাগ রোগী ক্লিনিকের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কেনেন। সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় ওষুধ পেতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে রোগীদের। বিশেষ করে একটি ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ থাকা সব কটি ওষুধ একসঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে রোগীদের দুর্ভোগ দিন দিন বড় হচ্ছে।

Also Read: ক্লিনিকমালিক ও কোম্পানির প্রতিনিধিদের দ্বন্দ্বে ভৈরবে ৪ দিন ধরে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ

এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না মন্তব্য করে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামনে ঈদ। এই সময়ে এ ধরনের সমস্যা অপ্রত্যাশিত। দেখছি কী করা যায়।’

৩৫টি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সংগঠন ফারিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ সকালে তাদের মানববন্ধন কর্মসূচি ছিল। কিন্তু সিভিল সার্জনের আলটিমেটাম পেয়ে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি থেকে তারা সরে আসে। ফারিয়া ভৈরব শাখার সভাপতি পায়েল মুন্সি বলেন, ‘দ্রুত সমাধান আমাদেরও চাওয়া। তবে এই সমাধান হওয়া উচিত উভয় পক্ষকে নিয়ে তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতিতে। তাহলে পেশায় পরবর্তী সময়ে নেতিবাচক প্রভাব থাকবে না। না হলে সমাধানের পরও ঝামেলা থেকে যেতে পারে।’

আর ক্লিনিকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভৈরব শাখার সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, সিভিল সার্জনের নির্দেশনা পাওয়ার পর গতকাল তাঁরা সভা করেন। তাঁরাও সমাধান চান। বিলম্বের কারণ হলো সংগঠনের সভাপতি মোশারফ হোসেন বর্তমানে ভৈরবে নেই।

উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ ক্লিনিকমালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে চারটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিকে ক্লিনিকে প্রবেশ, চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, ওষুধ কেনাবেচা ও লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে গত শনিবার থেকে বিভিন্ন ক্লিনিকের ফার্মেসিতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।