ভৈরবে ক্লিনিকমালিক ও কোম্পানির প্রতিনিধিদের দ্বন্দ্ব: সিভিল সার্জনের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্র

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ক্লিনিকমালিক ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিরসন করে ওষুধ সরবরাহ শুরুর নির্দেশনা দিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন মো. সাইফুল ইসলাম। আজ মঙ্গলবার সকালে উভয় পক্ষের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে এ নির্দেশনা দেন তিনি।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দোষ উভয় পক্ষের কমবেশি থাকতে পারে। তবে এ কারণে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া মোটেও শোভন নয়। আবার অনুষ্ঠানের নাম করে কারও কাছ থেকে টাকা চেয়ে চাপ দেওয়াও ভালো কাজ নয়। উভয় পক্ষকে নিজেদের দোষ বুঝতে হবে। সবকিছু স্বাভাবিক হতে হবে এবং সেটা আজ থেকেই। আমি উভয় পক্ষকে এ নির্দেশনা দিয়েছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্লিনিকমালিক ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে ভৈরবে ক্লিনিকগুলোতে পাঁচ দিন ধরে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ আছে। একই সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে কোম্পানি প্রতিনিধিদের চিকিৎসক–সাক্ষাৎ। এতে করে একদিকে ক্লিনিকগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে কোম্পানি প্রতিনিধিরা পেশাগত দায়িত্বপালনে বাধা পাচ্ছেন।

আরও পড়ুন

কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভাষ্য, বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে ভৈরবে ক্লিনিকমালিকদের একটি সংগঠন আছে। আবার ৩৫টি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে আছে ‘ফারিয়া’ নামের একটি সংগঠন। ক্লিনিকমালিকদের সংগঠনের একটি অনুষ্ঠানের জন্য ফারিয়ার সদস্যদের কাছে এক লাখ টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু ফারিয়ার সদস্যরা টাকা দিতে না পারায় ক্লিনিকমালিকেরা ক্ষুব্ধ হন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পেশাগত দূরত্ব বাড়ে। এর মধ্যে গত ২৮ মার্চ ক্লিনিকমালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে চারটি কোম্পানিকে ক্লিনিকে প্রবেশ, চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, ওষুধ কেনাবেচা ও লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এরপর প্রতিবাদ হিসেবে শনিবার থেকে বিভিন্ন ক্লিনিকের ফার্মেসিতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা।

অন্যদিকে ক্লিনিকমালিকেরা বলছেন, ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি করে রোগীদের হয়রানি করায় তাঁদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানের জন্য টাকা চাওয়ার বিষয়টিও তাঁরা স্বীকার করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিভিল সার্জনের নির্দেশনা পাওয়ার পর উভয় পক্ষ বিষয়টি সমাধানের উপায় খুঁজছে। কিন্তু কোনো পক্ষই সম্মানজনক উপায় বের করতে পারছে না। এর ফলে সকাল পেরিয়ে দুপুর হলেও পরিস্থিতিও আগের মতোই আছে।
ফারিয়া ভৈরব শাখার সভাপতি পায়েল মুন্সি বলেন, ‘আমরাও চাই সিভিল সার্জন স্যারের চাওয়া বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু বিষয়টি এখন আর কেবল আমাদের হাতে নেই। তারপরও যদি আমাদের ডেকে সুন্দর পরিবেশের মাধ্যমে সমাধানের পথ দেখান, তাহলে অবশ্যই ওই পথেই হাঁটব আমরা।’

বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ভৈরব শাখার সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁদের সমস্যা নেই। সমস্যা হলো যাঁরা ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি এবং রোগীদের হয়রানি করেন, তাঁদের সঙ্গে। তাঁরা এ কাজ না করলে আর সমস্যা থাকার কথা নয়।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য স্পর্শকাতর বিষয়। এটি নিয়ে ছেলেখেলা চলে না। সিভিল সার্জনের নির্দেশনা উভয় পক্ষকে জানানো হয়েছে। আজ দিনের মধ্যেই সবকিছু স্বাভাবিক হবে বলে আশা করেন তিনি। না হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হবে।