ক্লিনিকমালিক ও কোম্পানির প্রতিনিধিদের দ্বন্দ্বে ভৈরবে ৪ দিন ধরে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ক্লিনিকমালিক ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দ্বন্দ্বের জেরে চার দিন ধরে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ আছে। একই সঙ্গে কোম্পানি প্রতিনিধিদের সঙ্গে চিকিৎসকদের সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে একদিকে ক্লিনিকগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে কোম্পানি প্রতিনিধিরাও পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন।
কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভাষ্য, ক্লিনিকমালিকদের একটি অনুষ্ঠানের জন্য কোম্পানির প্রতিনিধিদের টাকা চাওয়া হয়েছিল। দিতে না পারায় চারটি কোম্পানিকে অনৈতিকভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ জন্য বাধ্য হয়ে তাঁরা ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে ক্লিনিকমালিকেরা বলছেন, ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি করে রোগীদের হয়রানি করায় তাঁদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানের জন্য টাকা চাওয়ার বিষয়টিও তাঁরা স্বীকার করেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আজ সোমবার দুপুরে কথা বলেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সংগঠন ফারিয়ার ভৈরব শাখার সদস্যরা। ফারিয়ার ভৈরব শাখার সভাপতি পায়েল মুন্সি, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামসহ বিভিন্ন কোম্পানির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকেরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানান, ভৈরবে ক্লিনিকমালিকদের একটি সংগঠন আছে। নাম বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, ভৈরব শাখা। চলতি বছর সংগঠনটির নতুন কমিটি গঠিত হয়। দুই মাস আগে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ফারিয়ার সদস্যদের ডেকে বরণ অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়। এ জন্য ফারিয়ার সদস্যদের কাছে এক লাখ টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু ফারিয়ার সদস্যরা দিতে না পারায় ক্লিনিকমালিকেরা ক্ষুব্ধ হন। কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাঁরা সাড়া পাননি।
তাঁরা বলেন, বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পেশাগত দূরত্ব বাড়ে। এর মধ্যে গত ২৮ মার্চ ক্লিনিকমালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে চারটি কোম্পানিকে ক্লিনিকে প্রবেশ, চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, ওষুধ কেনাবেচা ও লেনদেনে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর বাধ্য হয়ে প্রতিবাদ হিসেবে শনিবার থেকে বিভিন্ন ক্লিনিকের ফার্মেসিতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোম্পানির প্রতিনিধিরাও ক্লিনিকে যাচ্ছেন না।
ফারিয়ার ভৈরব শাখার সভাপতি পায়েল মুন্সি বলেন, ‘মূলত টাকা না পাওয়ায় ক্লিনিকমালিকেরা প্রথমে আমাদের পেশাগত দায়িত্বের ওপর অনৈতিকভাবে নিষেধাজ্ঞা দেন। শেষে আমরাও ওষুধ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই। বর্তমানে বিভিন্ন ফার্মেসির মালিকদের কাছে পাওনা প্রায় চার কোটি টাকাও তাঁরা দিচ্ছেন না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভৈরব শহরে অর্ধশত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। ভৈরব ছাড়াও নরসিংদীর রায়পুরা, বেলাব; কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলার মানুষ ভৈরবের বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা নেন। ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ক্লিনিকগুলো বিপাকে পড়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকা থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ এনে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ফার্মেসিমালিক বলেন, চার দিন ধরে সরবরাহ বন্ধ থাকলেও আজ থেকে সংকট প্রকট হয়েছে। অস্ত্রোপচারসহ বিশেষ প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া যাচ্ছে না। দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলেও সেবাপ্রত্যাশীরা বঞ্চিত হবেন এবং যেকোনো সময় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।
ভৈরব ক্লিনিক মালিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২৮ মার্চ তাঁরা চারটি কোম্পানির প্রতিনিধির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। কারণ, তাঁরা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি করেন। নারী রোগীদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ছবি তোলায় গোপনীয়তার নীতি লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে অন্য কোনো কারণ নেই। অনুষ্ঠান উপলক্ষে কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছে টাকা চাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘তারা টাকা না দিলেও আমরা অনুষ্ঠান করেছি।’
সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছেন উল্লেখ করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে, এমন কোনো বিষয় নিয়ে কোনো পক্ষেরই বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়। দুই পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন বলে তিনি জানান।