Thank you for trying Sticky AMP!!

দিনমজুর বাবার সঙ্গে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া অদম্য মেধাবী আসিবুর রহমান

ধার করে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে পড়ার খরচ নিয়ে চিন্তা

পাবনার বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া বাজারে অন্য দিনগুলোর মতোই ১১ ফেব্রুয়ারি সিমেন্টের বস্তা মাথায় করে টানছিলেন বাছেদ মোল্লা। হঠাৎ খবর আসে তাঁর ছেলে আসিবুর রহমান রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন। প্রত্যন্ত এলাকার এই বাজারে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে খবরটি। স্থানীয় লোকজন এসে ‘ধন্য ধন্য’ করতে থাকেন। ছেলের কৃতিত্বে গর্বে বুক ভরে ওঠে দিনমজুর বাবার।

বাছেদ মোল্লার বাড়ি বেড়া জগন্নাথপুর গ্রামে। ছেলের মেডিকেল কলেজ ভর্তির খবরে গর্বে বুক ভরে গেলেও বাছেদ মোল্লার কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। কারণ, কীভাবে ছেলেকে মেডিকেলে ভর্তি করাবেন আর কীভাবেই–বা চলবে মেডিকেলে পড়ালেখার খরচ! শেষ পর্যন্ত ধারের টাকায় ছেলেকে ভর্তি করালেও পড়ালেখার খরচ জোগানো নিয়ে রয়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়।

বাছেদ মোল্লা তেমন লেখাপড়া জানেন না। তিনি বলেন, ‘দিনমজুরের কাজ কইর‌্যা তিন ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করাতেছি। অভাবের সংসারে কাউকেই প্রাইভেট পড়াব্যার পারি নাই। এরই মধ্যে বড় ছেলে ডাক্তারিতে চান্স পায়া গেছে। এখন সগলেই আমাকে সম্মান করে। কিন্তু এই পড়ায় নাকি ম্যালা খরচ। এত খরচ কোনথ্যা জোগাড় করব, তা নিয়্যা কূল-কিনারা পাত্যাছি না।’

Also Read: নওগাঁর পাপ্পুর মেডিকেলে পড়ার খরচের দায়িত্ব নিলেন এক চিকিৎসক

দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় আসিবুর রহমান বেড়ার আলহেরা একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশোনা করেছেন। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে ও জেএসসিতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিও পান। তাঁর ছোট ভাই চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। সবার ছোট বোন প্রথম শ্রেণির ছাত্রী।

সামর্থ্য না থাকায় কখনোই প্রাইভেট পড়ার সুযোগ হয়নি উল্লেখ করে আসিবুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি পড়াশোনায় ভালো দেখে বাবা কখনো আমাকে অন্য কোনো কাজ করতে দেননি। আগে বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতাম। সেই খরচ জোগাতেই বাবার কষ্ট হতো। এখন তো সেই ম্যালা দূর রাজশাহী গিয়ে পড়ালেখা করতে হবে। মাসে নাকি কম করে হলেও আট-নয় হাজার টাকা খরচ লাগবে। এত টাকা বাবা কোথা থেকে জোগাড় করবেন, সেই চিন্তায় মনটা খারাপ হয়ে থাকে।’

Also Read: তিন যমজের মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হলো যেভাবে

বাছেদ মোল্লা বলেন, তিনি বিভিন্ন বাজারে কখনো কুলির কাজ আবার কখনো দিনমজুরের কাজ করেন। আয়ের বড় অংশই ব্যয় হয় ছেলেমেয়ের পড়ালেখার পেছনে। তাই সংসারে রয়েছে চরম অভাব। এ অবস্থায় বড় ছেলে আসিবুর রহমান এবারের মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় ৭৬ দশমিক ২৫ পেয়ে (মেধাতালিকায় ১ হাজার ৩৬তম) রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। এরপর গ্রামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নিয়ে ছেলেকে ইতিমধ্যে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেছেন। কিন্তু পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

আলহেরা একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হাকিমুল কবির বলেন, ‘আসিবুর খুবই মেধাবী। যতটুকু পেরেছি ওর জন্য আমরা সহায়তা করেছি। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ও মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। ওর জন্য আমরা গর্বিত।’

Also Read: রাজু সরদারের মেডিকেলে পড়ার খরচ নিয়ে চিন্তা কাটল ভ্যানচালক বাবার