নওগাঁর পাপ্পুর মেডিকেলে পড়ার খরচের দায়িত্ব নিলেন এক চিকিৎসক

ব্যক্তিগত চেম্বারে ডেকে নিয়ে পাপ্পু ও তাঁর বাবার সঙ্গে কথা বলেন চিকিৎসক হারুন-অর-রশিদ। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় নওগাঁ শহরের কাজির মোড় এলাকার একটি ক্লিনিকেছবি: প্রথম আলো

নওগাঁর পাপ্পু হোসেনের মেডিকেল কলেজে লেখাপড়ার খরচের দায়িত্ব নিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় নওগাঁ শহরের কাজির মোড়ে নিজের ব্যক্তিগত চেম্বারে পাপ্পু ও তাঁর বাবাকে ডেকে নিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

পাপ্পু হোসেনের বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার কেশবপুর গ্রামে। ফিরোজ হোসেন ও রেখা বেগমের সংসারে এক মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে পাপ্পু ছোট। বাবা ফিরোজ হোসেন কখনো অন্যের জমিতে কৃষিশ্রমিক, আবার কখনো চালকলের চাতালে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। মা রেখা বেগম গৃহিণী। সম্বল বলতে বসতবাড়ি ছাড়া তাঁদের আর তেমন কিছু নেই। এর মধ্যেই এবার খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন পাপ্পু। তবে শুরু থেকে মেডিকেলে পড়ার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তিনি। নওগাঁর জেলা প্রশাসক তাঁকে ভর্তির জন্য ২৫ হাজার টাকা দিলেও ভবিষ্যৎ পড়াশোনার খরচ নিয়ে বড় দুশ্চিন্তা রয়েই গিয়েছিল।

এ নিয়ে গত সোমবার প্রথম আলোর ছাপা কাগজ ও অনলাইন সংস্করণে ‘সাফল্যে খুশি হলেও মেডিকেলে পড়ার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পাপ্পু’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি পড়ে পাপ্পুর খোঁজ নেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক এবং লিভার, পরিপাকতন্ত্র ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ। এরপর গতকাল পাপ্পু ও তাঁর বাবা ফিরোজ হোসেনকে নওগাঁর কাজির মোড়ে ওই চিকিৎসক তাঁর ব্যক্তিগত চেম্বারে ডেকে নিয়ে মেডিকেলে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দেন।

চিকিৎসক হারুন-অর-রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানবিক ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে আমি মেধাবী ও অসচ্ছল পাপ্পুর পাশে দাঁড়িয়েছি। এটা করুণা নয়। আমি মনে করি সমাজে সচ্ছল মানুষদের দায়িত্ব, অসচ্ছল ও অসহায় মানুষদের সহায়তা করা।’

আর্থিক সহায়তার আশ্বাস পেয়ে খুশি পাপ্পুর বাবা ফিরোজ হোসেন। তিনি বলেন, ‘হামার ব্যাটার স্বপ্নপূরণে ডাক্তার হারুন স্যার পাশে অ্যাসে দাঁড়াছেন। এ জন্য হামরা অনেক খুশি। হামার ব্যাটার পড়াশোনা শ্যাষ না হওয়া পর্যন্ত টাকাপয়সা ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করার কথা দিছেন। তিনি হামাকের যে উপকার করলেন, এটা কোনো দিন ভুলব না।’

পাপ্পু বলেন, ‘স্যার আমাকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। এ জন্য হারুন স্যার ও প্রথম আলোর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এ সহযোগিতার মর্যাদা দিতে আমি ভালো করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। পাশাপাশি হারুন স্যারের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছি, চিকিৎসক হলে আমিও ভবিষ্যতে অন্তত দুজন অসহায় শিক্ষার্থীর পড়াশোনার দায়িত্ব নেব।’