সাফল্যে খুশি হলেও মেডিকেলে পড়ার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পাপ্পু হোসেন

খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন নওগাঁর ছেলে পাপ্পু হোসেনছবি: সংগৃহীত

আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্য দিয়ে বড় হলেও নিজের স্বপ্নের পরিধি কখনো ছোট করেননি নওগাঁর ছেলে পাপ্পু হোসেন। তাঁর স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার। স্বপ্নপূরণের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন তিনি। শেষ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। এমন আনন্দের খবরের পরও দুশ্চিন্তা ভর করেছে পাপ্পু ও তাঁর পরিবারের ওপর। নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় মেডিকেলে ভর্তির টাকা জোগাড় হলেও পড়ালেখার খরচ আসবে কোথা থেকে, সেই চিন্তায় দিন কাটছে তাঁর।

পাপ্পু হোসেনের বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার কেশবপুর গ্রামে। ফিরোজ হোসেন ও রেখা বেগমের সংসারে এক মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে পাপ্পু ছোট। এসএসসি পাসের পর তাঁর বড় বোনের বিয়ে হয়ে যায়। এরপর আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। বাবা ফিরোজ হোসেন কখনো অন্যের জমিতে কৃষিশ্রমিক, আবার কখনো চালকলের চাতালে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। মা রেখা বেগম গৃহিণী। সম্বল বলতে বসতবাড়ি আর আবাদি মিলিয়ে দেড় বিঘা জমি আছে তাঁদের।

ফিরোজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিনমজুরের কাজ করেই সংসারের খরচ জোগানোর পাশাপাশি ছেলেটার পড়ালেখার খরচ জোগাতে হয়। আগে তো বাড়ি থেকে স্কুল-কলেজে গিয়ে পড়ালেখা করিছে। ওর স্কুল–কলেজের শিক্ষকেরা অনেক সহযোগিতা করিছে। এখন তো সেই ম্যালা দূর খুলনাত গিয়ে পড়ালেখা করতে হবে। মাসে নাকি কম করে হলেও আট-নয় হাজার টাকা খরচ লাগবে। আগে তো দুই-তিন হাজার টাকার জোগান দিতেই কষ্ট হতো। এখন এত টাকা কোথায় পামু, সেই চিন্তাই আছি।’

দরিদ্র পরিবারের আর্থিক অনটনের মধ্যেও পড়ালেখাটা মন দিয়ে করেছে পাপ্পু হোসেন। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ২ হাজার ৮১৫তম হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন পাপ্পু। তিনি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ও পড়ালেখায় আর্থিক সহযোগিতার জন্য নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেন পাপ্পু। আবেদন পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা ১৩ ফেব্রুয়ারি পাপ্পুকে মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা করেন। এখন তাঁর সব চিন্তা মেডিকেলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার খরচ জোগানো নিয়ে।

পাপ্পু হোসেন বলেন, ‘আমি পড়াশোনায় ভালো দেখে বাবা কখনো আমাকে নিজের জমিতে কৃষিকাজ করতে দেননি। দিনমজুরের কাজও করতে দেননি। বাবা সব সময় বলতেন, “তোর কোনো কাজ করতে হবে না। তোর কাজ শুধু পড়ালেখা করা।” মা-ও অনেক কষ্ট করেছেন। আমাকে বড় করার পেছনে মা–বাবার অবদানই বেশি। পাশাপাশি আমার স্কুল ও কলেজের শিক্ষকেরাও আমাকে অনেকভাবে সহযোগিতা করেছেন।’