Thank you for trying Sticky AMP!!

মোহাম্মদ মিনহাজ

কাগজে ইংরেজিতে লেখা ছিল “ওয়াচ মাই আই’জ”, এরপর যা ঘটল

মোহাম্মদ মিনহাজ বাসে বসা ছিলেন। একই বাসে থাকা এক লোক হুট করে খুব কাছে এসে ছোট একটি কাগজ দেখিয়ে তাতে কী লেখা আছে পড়ে দিতে বলেন। সেটিতে ইংরেজিতে লেখা ছিল, “ওয়াচ মাই আই’জ” (আমার চোখের দিকে তাকাও)। এ লেখার নিচে অনেকগুলো সংখ্যা। তারপরই ঘটে বিপত্তি।

পাঁচ দিন আগের ঘটনা এটি। গত বুধবার মোবাইলে মিনহাজ জানালেন, রাজধানীর পল্টন থেকে শান্তিবাগ মোড়ে আসার পথে এ ঘটনা ঘটে। বললেন, ‘কাগজটা দেখার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারি আমার হাত–পা ঝিমঝিম করা শুরু হয়েছে। আমি আর ওই লোকটির দিকে না তাকিয়ে কোনোভাবে বাস থেকে নেমে যাই। আমার বোন পুলিশ। তাঁর কাছে এমন করে একটি চক্র প্রতারণা করে বলে শুনেছিলাম। বিভিন্ন সময় খবরেও পড়েছি। তাই আর কোনো ঝুঁকি নিইনি।’

চলতিপথে বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে অপরিচিত কেউ সাহায্যের জন্য বা খাতির করতে এলে এক্সট্রা খাতির করা যাবে না। অপরিচিত মানুষের সঙ্গে সব ধরনের লেনদেন থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো কিছু খেতে দিলে খাওয়া যাবে না।
ফারুক হোসেন, উপপুলিশ কমিশনার ও ডিএমপির মুখপাত্র

শুধু মিনহাজ নন, পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে যানবাহন, রাস্তাঘাট, বিপণিবিতানে বিভিন্ন প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। তবে এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীরা আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন কম বা নেওয়ার সুযোগই পাচ্ছেন না। ঘটনাগুলো ঘটছে চোখের পলকে।

মিনহাজ তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছিলেন ফেসবুকে ‘সায়েন্স বি-বিজ্ঞান ও গবেষণা’ নামের একটি পাবলিক গ্রুপে। মিনহাজের পোস্টের নিচে একাধিক ব্যক্তি নিজে বা অন্যরা কীভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন, সে অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। সচেতন হওয়ার পরও প্রতারক চক্রের খপ্পরে কীভাবে পড়েছিলেন, তা নিয়েও অনেকে লজ্জিত বলে উল্লেখ করেন।

ফেসবুকে মিনহাজের স্ট্যাটাস

মিনহাজ আপাতত চাঁদপুরে বাড়িতে আছেন। বললেন, ‘ওই ছোট কাগজে এমন কোনো কেমিক্যাল মেশানো ছিল; যা আমার শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।’

মিনহাজ বলেন, ‘বোনের বাসায় যাব বলে বাসে উঠেছিলাম। ঘটনার পর বাস থেকে নেমে মালিবাগ মোড়ে খুব সম্ভবত বিন্দু নামের দোকানে ঢুকে গিয়েছিলাম। ঘণ্টাখানেক পরও অবস্থা স্বাভাবিক না হলে বড় বোন এসে বাসায় নিয়ে যান। এরপর বমি, পাতলা পায়খানা, শরীরের ব্যথা ভুগিয়েছে কয়েক দিন। আর ট্রমা তো আছেই। চাঁদপুরে একা যেতে পারব কি না, তা নিয়েই ভয় পাচ্ছিলাম।’

ছয় বোনের এক ভাই মিনহাজ ঢাকার মিরপুরের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ডেন্টালে ডিপ্লোমা করে বর্তমানে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নশিপ করছেন। ঢাকায় বোনের বাসা হয়ে চাঁদপুর যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। মিনহাজের সঙ্গে বেশ বড় ব্যাগ ছিল। তাই হয়তো প্রতারক তাঁকে টার্গেট করেছিল বলে জানালেন তিনি।

ঘটনার পর মিনহাজ থানায় অভিযোগ করা বা আইনের আশ্রয় নেননি বলে জানালেন। বললেন, শরীর ও মনের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এ ছাড়া যে বোন পুলিশ, তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। বোনের বাচ্চা খুব অসুস্থ।

প্রতারণার নানা ধরন

মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি, খড় পার্টি, সালাম পার্টি বা ধাক্কা পার্টিসহ নানান নামে এসব চক্র পরিচিত। জাল নোটের ব্যবসা ও অনলাইনে বিভিন্ন পণ্য কেনাকাটায় প্রতারণা তো আছেই। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে ঈদে এসব চক্রের তৎপরতা বাড়ে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। ঈদ সামনে রেখে প্রতিবারই ছিনতাইকারীসহ অন্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘোষণা দেন।

Also Read: যাত্রীবাহী বাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে যুবক হাসপাতালে

২০২১ সালের ১৪ আগস্ট প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুই বছরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দুই শতাধিক নারীকে ফাঁদে ফেলে স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা কেড়ে নিয়েছে ‘খড় পার্টি’। পার্টির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানতে পারে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় এ ধরনের ৪০টি দল সক্রিয়। পথঘাটে বিপদগ্রস্ত সেজে কোনো নারীর কাছে সহায়তা চেয়ে আলাপ শুরু করেন খড় পার্টির সদস্যরা। নিখুঁত অভিনয় আর কথার জালে ফেলে ওই নারীকে ফাঁদে ফেলেন। পরে নারীর কাছে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে পালিয়ে যান।

ফেসবুকে মিনহাজের পোস্টের নিচে একাধিক ব্যক্তি নিজে বা অন্যরা কীভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন সে অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। সচেতন হওয়ার পরও প্রতারক চক্রের খপ্পরে কীভাবে পড়েছিলেন, তা নিয়েও অনেকে লজ্জিত বলে উল্লেখ করেন।
ফেসবুকে মিনহাজের স্ট্যাটাস

২০২২ সালের ৭ জুন রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ ও খিলগাঁওয়ে অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান ও মলম পার্টির ৪৪ জনকে আটক করে র‍্যাব। চক্রের সদস্যরা যাত্রীদের লক্ষ্য করে ডাব, কোমলপানীয় কিংবা পানির সঙ্গে বিষাক্ত চেতনানাশক মিশিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। কখনো যাত্রীবেশে লঞ্চ, বাস ও ট্রেনে চড়ে যাত্রীদের পাশে বসে তাঁদের নাকের কাছে চেতনানাশক ভেজানো রুমাল দিয়ে যাত্রীদের অচেতন করে। পরে তাঁর সবকিছু কেড়ে নিয়ে ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়।

ওই বছরের ৩ আগস্ট প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, রাজধানীতে বাসে উঠে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছিলেন গাজীপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কর্মরত শফিকুল ইসলাম (৫২)। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয় তাঁকে। এসব চক্রের খপ্পরে পড়ে কেউ কেউ প্রাণ পর্যন্ত হারাচ্ছেন।

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এর গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা পুলিশের পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, মলম বা অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে মানুষ চেতনা হারান। যখন চেতনা ফেরে, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। ফলে ৯৯৯ নম্বর থেকে তাৎক্ষণিক সেবা পাওয়ার জন্য সেভাবে ফোন পাওয়া যায় না। তবে রাস্তায় অচেতন হয়ে কেউ পড়ে আছেন, এমন ফোন এলে সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এগুলো অজ্ঞান বা মলম পার্টির কাজ কি না, জানার সুযোগ থাকে না।

Also Read: ঢাকায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পুলিশ পরিদর্শক

তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে রাজধানীতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মৌসুমি অপরাধীরা। ১৯ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, সাধারণ মানুষ যাতে ঈদের সময় তাঁদের গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছাতে পারেন, সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এর আগে ১১ মার্চ ঢাকা মহানগর এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিশেষ সমন্বয় সভা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এ সভায় পবিত্র রমজানজুড়ে রাজধানীতে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। সভায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অজ্ঞান ও মলম পার্টির তৎপরতা রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

Also Read: অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে প্রাণ গেল বিমা কর্মকর্তার

‘রাস্তাঘাটে অপরিচিত কাউকে এক্সট্রা খাতির করা যাবে না’

ডিএমপির মুখপাত্র উপপুলিশ কমিশনার ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন কৌশলে প্রতারক চক্র প্রতারণা করছে। মিনহাজের যে ঘটনা জানা গেল, তাতে মনে হচ্ছে কাগজে কোনো কেমিক্যাল মেশানো ছিল। তবে এসব ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা আইনের আশ্রয় নিতে আসেন না।

মানুষের করণীয় প্রসঙ্গে ফারুক হোসেন বলেন, চলতিপথে বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে অপরিচিত কেউ সাহায্যের জন্য বা খাতির করতে এলে এক্সট্রা খাতির করা যাবে না। অপরিচিত মানুষের সঙ্গে সব ধরনের লেনদেন থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো কিছু খেতে দিলে খাওয়া যাবে না।

Also Read: ওষুধ খাইয়ে যাত্রীদের সর্বস্ব কেড়ে নিতেন তাঁরা

Also Read: বাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন অধ্যক্ষ